ইতিহাসের প্রথম টেস্টেই খেলেছিলেন ঢাকার যে ক্রিকেটার
Published: 15th, March 2025 GMT
আজ থেকে ১৪৮ বছর আগে এই দিনে শুরু হয়েছিল ইতিহাসের প্রথম টেস্টটা। যে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছিলেন ব্রান্সবি কুপার। অনেকেই হয়তো জানেন না, বিবি কুপার নামে পরিচিত সেই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকায়। চলুন তাঁর গল্পটা পড়া যাক।
আঠারো শতকে ব্রিটেনের বিখ্যাত শল্যচিকিৎসক অ্যাস্টলে কুপার। ব্রানসবি ব্লেক কুপার ছিলেন তাঁর ভাতিজা। খুব অল্প বয়সে ব্রিটেনের নৌবাহিনীতে যোগ দিলেও সমুদ্রে অসুস্থতার (সি–সিকনেস) জন্য নৌবাহিনীর চাকরি ছেড়ে চাচার মন্ত্রণায় নেমে পড়েন চিকিৎসাবিদ্যায়। চাচার মতোই হয়ে ওঠেন শল্যচিকিৎসক এবং ব্রিটেনে রয়্যাল সোসাইটির ফেলোও হন। ব্লেক কুপারের ছেলে ব্রান্সবি হেনরি কুপার আর চিকিৎসাবিদ্যায় নিজেকে জড়াননি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতে এসেছিলেন ঢাকায়। ১৮৪৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় সন্তান ও প্রথম ছেলে ব্রান্সবি বিউচ্যাম্প কুপারের জন্মও এই ঢাকাতেই।
আরও পড়ুনকোহলির চুলে নতুন ছাঁট, ভক্তরা বলছেন ‘বলিউড, হলিউড, কোহলিউড’৯ ঘণ্টা আগেকুপার পরিবারের এই সন্তান বাপ–চাচার পেশায় নিজেকে জড়াননি। তিনি হয়ে উঠেছিলেন ক্রিকেটার। বিবি কুপার নামে পরিচিত এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ইতিহাসের প্রথম টেস্টে খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে। অর্থাৎ, ইতিহাসের প্রথম টেস্টের সঙ্গে ঢাকার সংযোগটা এই কুপারের কারণেই। আমরাও বলতে পারি, ১৪৮ বছর আগে ইতিহাসের প্রথম সেই টেস্টে খেলেছিলেন আমাদেরই দেশের আলো–বাতাসে বেড়ে ওঠা এক ছেলে।
সেই ছেলে বাঙালি না হতে পারেন, কিন্তু ১৮৪৪ সালের ১৬ জুলাই ঢাকারই এক চার্চে তাঁকে ব্যাপ্টাইজড করা হয়েছিল। এই দেশের মাটিতেই তাঁর হামাগুড়ি থেকে হাঁটতে শেখা। সঠিক ইতিহাস না থাকলেও কল্পনা করে নেওয়াই যায়, ঢাকারই কোনো এক বাড়িতেই হয়তো কুপারের ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়েছিল হয়তো বাবার কাছে। তারপরের গল্পটা বিচিত্র এবং ঐতিহাসিকও।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি টেস্টই খেলেছেন ব্রান্সবি কুপার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ন সব
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।