যে শ্রমিকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিনরাত পরিশ্রম করে কারখানা সচল রাখেন, সেই শ্রমিকদের যদি বেতন ও বোনাসের দাবিতে ফি বছর আন্দোলন করতে হয়, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো কারখানা লে–অফ ঘোষণা করেছেন মালিক। ঈদের আগে এটা শ্রমিকদের প্রতি নিষ্ঠুরতাই বটে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বেতন ও ঈদের বোনাসের দাবিতে শ্রমিকেরা কয়েক দিন ধরে গাজীপুর ও সাভারের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে আন্দোলন করে আসছেন। কখনো কারখানা বন্ধ করে, কখনো মহাসড়ক অবরোধ করে তাঁরা আন্দোলন করছেন। গাজীপুর ও আশুলিয়া এলাকার কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ বেশি। 

 গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদ ও পোশাক কারখানা খোলার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। শ্রমিকেরা মিছিল নিয়ে বিভিন্ন কারখানার গেটে গেলে আশপাশের অন্তত ১৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এটা খুবই উদ্বেগের খবর। এক কারখানার কারণে অন্য কারখানা কেন বন্ধ ঘোষণা করা হবে? প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কারখানায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক।

 শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন পাওনার দাবিতে। আর মালিকেরা সুযোগ পেলেই কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। গাজীপুরের একটি বন্ধ কারখানার এক শ্রমিক আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘অনেক কষ্টে আছি আমরা। বাচ্চাদের খাবার কিনে দিতে পারি না। বেতন না পেলে আমরা কীভাবে সংসার চালাব।’ 

মালিকদেরও সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু তার সমাধান কারখানা বন্ধ করা নয়। সমাধান খুঁজতে হবে কারখানা চালু রেখেই। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কেবল উৎপাদনই ব্যাহত হচ্ছে না, সড়ক–মহাসড়ক অবরুদ্ধ থাকার কারণে রোজার দিনে যাত্রীদেরও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। 

গাজীপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টার্সে বিশেষ কল্যাণ সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সড়ক অবরোধ করে ঈদের সময় যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন না ঘটানোর জন্য শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন, ঈদের বোনাস ও মার্চ মাসের আংশিক বেতন ২০ রমজানের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। আমরা শ্রমিক ভাই ও বোনদের বলতে চাই, তাঁদের ন্যায়সংগত পাওনা আদায়ে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় আছি। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে থাকব।’

আইজিপি যে শ্রমিকদের পাশে থাকার কথা বলেছেন, কিন্তু সেটা কেবল মুখে বললে হবে না, কাজেই প্রমাণ করতে হবে। মালিকেরা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করলে তঁাদের আন্দোলন থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন নতুন কোনো দাবিতে নয়, বকেয়া বেতন ও ঈদের বোনাস পাওয়ার জন্য। অনেক কারখানায় শ্রমিকেরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও পাননি। মার্চ মাসের শেষে ঈদের ছুটি। তার আগে মার্চের অর্ধেক বেতন দেওয়ার কথা বলেছেন মালিকেরা। এটা শ্রমিকদের প্রতি সুবিচার নয়। 

ঈদের আগে শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মালিক–শ্রমিক উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে। ঈদের আগে যাতে সব কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেন, সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখে কখনো শিল্পাঞ্চলে স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাবে না। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সড়ক অবর বন ধ ক

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ