মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বের ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। নতুন এ নিষেধাজ্ঞা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তুলনায় বেশি বিস্তৃত হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।

ওই কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ–সংক্রান্ত একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন। চূড়ান্ত প্রস্তাবে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

খসড়া প্রস্তাবে যে দেশগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইয়েমেন, বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান, তুর্কমেনিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, চাদ, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডমিনিকা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালাউই, মালি, মৌরিতানিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে, ভানুয়াতু ও জিম্বাবুয়ে।

এর মধ্যে ১১টি দেশকে ‘লাল’ তালিকায় রাখা হয়েছে। লাল তালিকার মানে হলো এসব দেশে সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ এসব দেশের নাগরিকেরা কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না। এই দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেন।

খসড়া প্রস্তাবে ১০টি দেশকে ‘কমলা’ তালিকায় রাখা হয়েছে। কমলা তালিকার মানে হলো, এসব দেশের নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকবে, তবে ভিসা একেবারে বন্ধ থাকবে না। এ ক্ষেত্রে ধনী ব্যবসায়ীদের ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। কিন্তু অভিবাসী বা পর্যটন ভিসায় কাউকে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। সেই তালিকায় থাকা নাগরিকদের ভিসা পেতে বাধ্যতামূলকভাবে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হবে।

কমলা তালিকায় থাকা এই ১০টি দেশ হলো বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান ও তুর্কমেনিস্তান।

খসড়া প্রস্তাবটিতে ২২টি দেশকে ‘হলুদ’ তালিকায় রাখা হয়েছে। এ তালিকায় থাকা দেশগুলোকে তাদের ত্রুটি সংশোধনের জন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে তাদের লাল বা কমলা তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার হুমকি দেওয়া হবে।

এ তালিকায় আছে অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কেপ ভার্দে, চাদ, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, ডমিনিকা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া, মালাউই, মালি, মৌরিতানিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপে, ভানুয়াতু ও জিম্বাবুয়ে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প প্রথমে দুটি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে চাইলে আদালত তাতে বাধা দেয়। তবে পরে সুপ্রিম কোর্ট একটি পুনর্লিখিত নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুমতি দিয়েছিল। আটটি দেশের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছয়টি দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। পরে তালিকাটি আরও বিস্তৃত হয়।

২০২১ সালে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ট্রাম্পের আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করেন।

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বলেন, মার্কিন নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থে তিনি নিষেধাজ্ঞাগুলো নতুন করে আরোপ করবেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্যোগে তালিকা তৈরি করা হয়। হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পর এতে পরিবর্তন আসতে পারে।

বিভিন্ন দূতাবাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আঞ্চলিক ব্যুরোর কর্মকর্তা এবং অন্য বিভাগ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞরা খসড়া প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছেন। উল্লিখিত দেশগুলোর যে ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক কি না বা এর পেছনে নীতিগত কারণ আছে কি না, সেগুলো পুনর্বিবেচনা করবেন তাঁরা।

গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। সেখানে পররাষ্ট্র দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন সেসব দেশকে চিহ্নিত করে, যেসব দেশের যাচাই-বাছাই ও স্ক্রিনিং তথ্যগুলো ত্রুটিপূর্ণ। যেন এসব দেশের নাগরিকদের প্রবেশের ওপর আংশিক বা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায়।

ট্রাম্প পররাষ্ট্র দপ্তরকে ৬০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে তালিকাটি হোয়াইট হাউসে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। আগামী সপ্তাহে এ সময়সীমা শেষ হচ্ছে।

ট্রাম্পের আদেশ অনুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব কনস্যুলার অ্যাফেয়ার্সকে এ কাজে নেতৃত্ব দিতে বলা হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয়কে এ কাজে সহযোগিতা করতে বলা হয়।

বেশ কয়েকটি সংস্থার মুখপাত্র এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কিংবা মন্তব্য জানতে চাওয়ার পর জবাব দেননি।

তবে এর আগে পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, তারা ট্রাম্পের আদেশ অনুযায়ী কাজ করছে। তারা আরও বলেছিল, ‘আমরা আমাদের ভিসা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে আমাদের দেশ ও এর নাগরিকদের রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ রমণ ন ষ কর মকর ত এসব দ শ

এছাড়াও পড়ুন:

লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল

১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।

১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।

১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।

মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।

বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে  গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।

আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে

২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।

কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।

ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি

সম্পর্কিত নিবন্ধ