‘ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন’, তাই দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করল যুক্তরাষ্ট্র
Published: 15th, March 2025 GMT
ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গতকাল শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন।
তবে আজ শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় তাদের দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছে। দুই দেশের মধ্যে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার’ বজায় রাখতেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত আমাদের মহান দেশে আর বাঞ্ছিত ব্যক্তি নন।’
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের এক্স হ্যান্ডলে ‘@POTOUS)’-এর কথা উল্লেখ করেন মার্কো রুবিও লেখেন, ‘রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুল “বর্ণবাদকে অন্যায্যভাবে ব্যবহারকারী একজন রাজনীতিক” যিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন।’
মার্কো রুবিও এক্সের পোস্টে আরও বলেন, ‘তাঁর (রাষ্ট্রদূত) সঙ্গে আমাদের আলোচনার কিছু নেই। সুতরাং তিনি যুক্তরাষ্ট্রে (পারসোনা নন গ্রাটা) অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের ঘটনা খুবই বিরল। তবে ওয়াশিংটন ও প্রিটোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সর্বশেষ ঘটনা মনে হচ্ছে এই রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি আইনের কথা উল্লেখ করে ওই দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করে দেন। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ওই আইন ব্যবহার করে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি জব্দ করে নেওয়া হচ্ছে।
গত মাসে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকদের যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত জানিয়ে দুই দেশের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য স্বাগত জানিয়ে অভিযোগ তোলেন, সে দেশের সরকার শ্বেতাঙ্গ মানুষের জমিজমা ‘জব্দ করছে’।
ট্রাম্প তাঁর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যেকোনো কৃষক (পরিবারসহ) পালিয়ে যেতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।’
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ধনকুবের ইলন মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, রামাফোসার সরকার ‘স্পষ্টত বর্ণবাদী মালিকানা আইন’ তৈরি করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমির মালিকানা ইস্যু নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। বর্ণাবাদবিরোধী আন্দোলনের অবসানের তিন দশক পরও দক্ষিণ আফ্রিকার বেশির ভাগ ভূমির মালিক শ্বেতাঙ্গ মানুষ। এ নিয়ে আইন সংস্কার বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে।
গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় জি২০ সম্মেলন চলাকালে রামাফোসা বলেছিলেন, গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তাঁকে ফোন করেছেন। তাঁদের মধ্যে ‘চমৎকার পরিবেশে’ কথাবার্তা হয়েছে।
রামাফোসা বলেন, তবে দুই দেশের সম্পর্ক পরে ‘কিছুটা লাইনচ্যুত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে’।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এক্স হ্যান্ডলে তাঁর পোস্টের সঙ্গে রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের একটি নিবন্ধনের লিংক যুক্ত করে দেন। ওই নিবন্ধে গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলের বক্তব্য রয়েছে। ওই বক্তব্য অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
সেমিনারে রাসুল ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন আন্দোলন হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান জাতিগত বৈচিত্র্যের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছে তাঁর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ।
তরুণ বয়সে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন ইব্রাহিম রাসুল। তিনি গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গন্ধগোকুলের বাঁচার লড়াই
দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল হারিয়ে গেছে; কিন্তু পাবনার বেড়া পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় এখনো এ প্রাণীর বিচরণ চোখে পড়ে। তবে আগের মতো অত বেশি দেখা যায় না। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোটের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এগুলো ‘বিপদাপন্ন’ প্রাণী।
প্রাণীটির আসল নাম গন্ধগোকুল হলেও বেড়া উপজেলায় এটি ‘নেল’ নামে পরিচিত। অনেকে এগুলোকে বাগডাশও বলেন। এর শরীর থেকে পোলাও চালের গন্ধের মতো মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সন্ধ্যার পর অন্ধকার নামলে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়ির ঘরের চাল ও গাছের ওপর দিয়ে শুরু হয় এর চলাচল। এ সময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হতে থাকে বলে যে স্থান দিয়েই এরা যাক না কেন, বেশ কিছুক্ষণ ধরে সেখানে সেই গন্ধ নাকে আসে। তখন মহল্লার বাসিন্দারা বুঝতে পারেন, আশপাশে হয়তো গন্ধগোকুল আছে, নয়তো একটু আগেই আশপাশ দিয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই গন্ধগোকুল বা নেল নামের প্রাণীটির সঙ্গে বেড়া পৌরবাসীর সম্পর্ক। বেশির ভাগ বাসিন্দার কাছেই প্রাণীটি বেশ পছন্দের। তবে অল্প কিছু মানুষ এগুলোকে অপছন্দ করেন গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণে। তবে গত ১০-১২ বছরের মধ্যে পৌরবাসী এই প্রাণীকে ফাঁদ পেতে ধরেছেন বা এগুলোর কোনো ক্ষতিসাধন করেছেন বলে শোনা যায় না।
বন্য প্রাণী ও পরিবেশবিশেষজ্ঞদের মতে, গন্ধগোকুল প্রকৃতির উপকারী একটি নিশাচর প্রাণী। গন্ধগোকুল ব্যাঙ, ইঁদুরসহ ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখে; কিন্তু ভুল ধারণার কারণে অনেকেই প্রাণীটির জীবন হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। একটি সময় ছিল, যখন এগুলোকে দেশের প্রায় সর্বত্রই— বনাঞ্চল বা বনসংলগ্ন ঝোপঝাড় বা গ্রামাঞ্চলে দেখা যেত। তবে এখন এগুলো বিলুপ্তির পথে।
গন্ধগোকুল তাল ও খেজুরের রস পান করে, ইঁদুর, ছোট পাখি ও পোকামাকড় প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে; কিন্তু কখনো কখনো গৃহপালিত হাঁস-মুরগি বা কবুতর ধরে নিয়ে যায় বলে মানুষ এগুলো ফাঁদ পেতে ধরে হত্যা করে। আবার অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় গাড়িচাপায়ও মারা যায়। এতে এগুলোর অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। এগুলোকে বিপদাপন্ন বলা যেতে পারে।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গন্ধগোকুলের রয়েছে বিশেষ এক ভূমিকা। খাদ্যশৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান প্রাণীটির। এগুলো মূলত ক্ষতিকর পোকামাকড় ও ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের প্রচুর উপকার সাধন করে। যেমন বটের ফল বা অন্যান্য ফল যখন খায়, তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো গজানোর উপযুক্ত পরিবেশ (জার্মিনেশন) পায় বলে তা পরবর্তী সময়ে বীজের অঙ্কুরোদ্গমে শতভাগ কার্যকর হয়ে থাকে।
বছরে সাধারণত দুবার প্রজনন করে। গর্ভধারণকাল দুই মাসের কিছু বেশি। পুরোনো গাছের খোঁড়ল, গাছের ডালের ফাঁক, পরিত্যক্ত ঘর, ধানের গোলা বা তাল-সুপারির আগায় ছানা তোলে। সাধারণত প্রতিবারই ছানা হয় তিনটি।
বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘দেশের অনেক এলাকা থেকেই গন্ধগোকুল বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ যেমন কিছুটা বেশি, তেমনি পৌরবাসীও এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল।’
প্রাণীটির ছবি তুলে রাজশাহী বিভাগীয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবিরের কাছে পাঠালে তিনি সেটিকে ‘বাগডাশ’বলে শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রাণীটির অস্তিত্ব এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় আছে। এর মধ্যে বেড়া পৌর এলাকায় এগুলোর বিচরণ কিছুটা বেশি বলে শুনেছি।’
বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বাগডাশ বা গন্ধগোকুল মানুষের কাছাকাছি থাকে; কিন্তু মানুষ দেখলে খুবই ভয় পায়। খুবই লাজুক স্বভাবের প্রাণী এটি। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচানোর জন্য ব্যাপক নিধনের কারণে এগুলো এখন বিপন্ন। তবে প্রাণীটি কিন্তু প্রকৃতির বন্ধু। তাই সবারই উচিত এগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।