হুতিদের ওপর বড় ধরনের হামলা শুরু যুক্তরাষ্ট্রের
Published: 16th, March 2025 GMT
ইয়েমেনের হুতিদের নিশানা করে বড় ধরনের হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। দেশটির রাজধানী সানায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় এরই মধ্যে অন্তত ১৩ জন সাধারণ মানুষ নিহত এবং নয়জন আহত হয়েছেন। শনিবার শুরু হওয়া এই হামলায় কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহও চলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্প হুতিদের লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় ‘নরক বৃষ্টির’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
হুতিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরানকেও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়া শিগগির বন্ধ করতে তেহরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প তেহরানকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দেয় ‘আমেরিকা তোমাকে সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনবে। এটা কিন্তু তোমাদের জন্য ভালো হবে না।’
গত জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে হুতিদের বিরুদ্ধে চলমান এই হামলাই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। এমন এক সময়ে এই হামলা শুরু হলো, যখন নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়ে তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন।
হুতি রাজনৈতিক ব্যুরো যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে মন্তব্য করেছে। তাদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েমেনের উত্তর দিকের সাদা প্রদেশেও হামলা চালাতে পারে।
এক বিবৃতিতে হুতি জানায়, ‘আমাদের ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী উসকানিকে উসকানি দিয়ে জবাব দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
শনিবার সানায় হুতিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত একটি ভবনে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আব্দুল্লাহ ইয়াহিয়া নামের এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন,‘ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হামলার কারণে পুরো মহল্লা ভূমিকম্পের মতো কেঁপেছে। এতে করে আমাদের নারী ও শিশুরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।’
এক দশকের বেশি সময় ধরে হুতিরা সশস্ত্র সংগ্রাম করছে। ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চল বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে তারা ১০০ এর বেশি হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলি হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে। হুতির নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও পাঠানো ড্রোন জব্দ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যয়বহুল সামরিক অভিযান চালাতে হচ্ছে।
ইরানের মিত্রগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহ এরই মধ্যে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু হুতিদের এখনো হামলার চালানোর মতো সক্ষমতা রয়ে গেছে।
মূলত ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনেই হুতিদের ওপর হামলা শুরু করেছিলেন। লোহিত সাগরের জাহাজে গোষ্ঠীটির হামলা করার সক্ষমতা কমানোই ছিল বাইডেন প্রশাসনের লক্ষ্য। কিন্তু তা প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর হয়নি। তবে এবার ট্রাম্প আরও বেশি আক্রমণাত্মক হামলা চালাতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।