সব শিশুই মা–বাবার কাছে বিশেষ কিছু তথা স্পেশাল। কিন্তু সংসারে কিছু শিশু আছে, যারা আরেকটু স্পেশাল। মানে ভেরি স্পেশাল। নানা কারণেই সমাজে কিছু শিশুকে অভিভাবকেরা অতি মনোযোগ দিয়ে, অতি স্পেশাল করে গড়ে তোলেন। এতে শিশুটির পরে নানা সমস্যা হতে পারে।

স্পেশাল শিশুর উদাহরণ

● সন্তানহীন অভিভাবকের যখন বিয়ের অনেক বছর পর বহু চেষ্টায় একটি সন্তান হয়, তখন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থাই হয়। তাই তো মা–বাবার কাছে এ সন্তান হয় স্পেশাল শিশু।

● একমাত্র সন্তান বা ‘সবেধন নীলমণি’ও স্পেশাল শিশু।

● পরপর কন্যাসন্তানের জন্ম। পুত্রসন্তান মিলল অতঃপর। সবার কাছে এ তো ভেরি স্পেশাল! উল্টোটাও হতে পারে।

● হতে পারে গর্ভাবস্থায় মা প্রচুর কষ্ট পেয়েছেন। এমনকি গর্ভকালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন। এরপর পাওয়া সন্তান হয় রত্নসম।

স্পেশাল শিশুর সমস্যা

● স্পেশাল শিশুকে নিয়ে অভিভাবকদের ফোবিয়া থাকে। তাকে নিয়ে তাঁদের মনে থাকে সদা ভয়, অমূলক সব আশঙ্কা। তাতে শিশুর খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা ও ওঠবস কোনোটিই আর স্বাভাবিক নিয়মে সম্পন্ন হয় না, যেমন শিশুর দেহে ধুলা লাগলেও শুরু হয় হইচই, চেঁচামেচি, শরীরে সামান্য আঁচড় লাগলে বা ব্যথা পেলে হৃৎপিণ্ড যেন ফেটে যায়। শিশু বয়সে এক–আধটু ধাক্কা তো লাগতেই পারে। কিন্তু এ ঘটনা শুনে অনেকে মূর্ছা যান।

● স্কুল বা খেলার মাঠে অন্য শিশুর সঙ্গে একটু মনোমালিন্য, ঝগড়া বা মারামারি হলে মা–বাবা ঝাঁপিয়ে পড়েন, নিজের সন্তানের পক্ষে লড়াই করতে থাকেন।

● এ ধরনের শিশুকে নিয়ে অভিভাবকদের এই যে সার্বক্ষণিক ভীতসন্ত্রস্ত মনোভাব, তা শিশুকেও ভিতু করে তোলে। সে সর্বদা ভয়ে জড়সড় থাকে। তার মধ্যে সব সময় আতঙ্কের ছায়া বিরাজ করে। বুক ধড়ফড় করে, মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়। বেশি মাত্রার দুশ্চিন্তায় সে পেটব্যথার কথা জানায়, যা হতে পারে বারবার।

● শিশুর এ দুশ্চিন্তার ঘোর কিছুতেই কাটতে চায় না এবং কয়েক মাস ধরে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে তার রাশ টেনে ধরা কঠিনহয়ে ওঠে।

পরামর্শ

● এমন সব সমস্যা শিশু মনোবিদ ও শিশুবিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

● শিশু, মা–বাবা ও পুরো পরিবারের কাউন্সেলিং প্রয়োজন হতে পারে।

● এমন সমস্যায় আচরণজনিত থেরাপি ও ফ্যামিলি থেরাপি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ওষুধ মুখ্য নয়।

অধ্যাপক ডা.

প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আগামীকাল পড়ুন: রোজায় ডায়াবেটিক রোগীদের খাবার গ্রহণে সতর্কতা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ