বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: ফখরুল
Published: 16th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুই বছর আগে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। যখন সংস্কারের কথা কেউ বলেনি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে এইটুকু বলতে পারি ‘উই আর কমিটেড টু রিফর্ম’। অর্থাৎ সংস্কারের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপি দুই বছর আগে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। সেই সংস্কারগুলোর সঙ্গে আজকের যে সংস্কার প্রস্তাব উঠে আসছে, সেখানে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা তুলে দিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা।”
রবিবার (১৬ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
বাধ্যতামূলক ছুটিতে ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ কর্মী
নীলফামারী সাংবাদিক ইউনিয়নের ইফতার মাহফিল
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারকে পরাজিত করে একটি নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। এখন আমাদের প্রয়োজন নিজেদের ঐক্যকে আরো সুসংহত করা। হাসিনার সরকার রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে রেখে গেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই আর অক্ষত নেই। এই যে ধ্বংসের স্তুপ এখান থেকে দেশকে নতুন করে গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়। আমি মনে করি, নতুন দেশ গড়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকারের একার নয়, সব রাজনৈতিক দল সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলতে হবে।”
মির্জা ফখরুল শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা আজ বিচলিত হয়ে যাই। হত্যা, খুন, ধর্ষণ এমন একটি জায়গায় চলে যাচ্ছে যে জায়গাটা আমাদের পীড়িত করছে। অন্যদিকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে ছাত্ররা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। আবার দেখছি, যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তারাও তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে আসছে। আমাদের সবারই এই ব্যাপারে ধৈর্য ধরার ব্যাপার আছে।”
দ্রুত নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা এখন অন্তত আন্তরিকভাবে চাচ্ছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড.
তিনি বলেন, “আমরা তাই মনে করি, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, যত দ্রুত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে এসে একদিকে দেশ পরিচালনা করবে, অন্যদিকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে সংস্কারগুলো আছে সেগুলো আমরা সবাই এক সাথে করতে পারব।”
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের সভাপতি শহীদুল ইসলাম।
এছাড়া এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, কামাল উদ্দিন সবুজ, ইলিয়াস খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ সরক র র যত দ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা