খুন, ধর্ষণের ঘটনায় আমরা পীড়িত: মির্জা ফখরুল
Published: 16th, March 2025 GMT
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে খুন, জখম ও ধর্ষণের ঘটনায় তিনি পীড়িত। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা, যখন-তখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে আসার ঘটনায় তিনি বিচলিত। এ জন্য তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
আজ রোববার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা ভয়াবহ দানবীয় পরিবেশ থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। সেখানে আমাদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। পত্রিকার পাতা খুললে বিচলিত হয়ে পড়ি। আবার সেই খুন, জখম, ধর্ষণ—এগুলো এমন একটা জায়গায় চলে যাচ্ছে, যেই জায়গাগুলো আমাদের সবাইকে অত্যন্ত পীড়িত করছে।’
তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ছাত্ররা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘অন্যদিকে দেখছি ইয়ার জেনারেশন (তরুণ প্রজন্ম), বিশেষ করে ছাত্ররা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। আবার দেখি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো আছে তাদের কর্মীরা, তারাও তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। মনে হয় সবার এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরার প্রয়োজন আছে।’
মির্জা ফখরুল মনে করেন, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, যত দ্রুত জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদে আসবেন, সংসদে এসে একদিকে দেশ পরিচালনা করবেন, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোর সবাই মিলে একসঙ্গে করতে পারবেন।
অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেরি হওয়ার সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করছে। তারা শুধু নয়, একই সঙ্গে উগ্রবাদীরা এই সুযোগগুলো নেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা দাবি দুই বছর আগে দিয়েছি। যখন এই সংস্কারের কথা কেউ ভাবেনি। সেই সংস্কারগুলোর সঙ্গে আজকে যে প্রস্তাবগুলো আসছে, সেই প্রস্তাবগুলোর খুব একটা পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। সে জন্যই মনে করি, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিয়ে দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা করার ব্যবস্থা করা দরকার।’
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনা সরকার রাষ্ট্রের এবং গণতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। একদিকে রাজনৈতিক কাঠামো নষ্ট করেছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশ গড়ে তোলা এখন শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, সবার দায়িত্ব।
যেসব সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে দ্রুত একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে যেতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
ইফতার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন সরক র র ফখর ল ব এনপ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মাদারীপুরে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি
ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অন্তর্গত মাদারীপুর এলাকায় অবাধে মাদকের ব্যবসা দিনদিন বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
শনিবার (১৪ জুন) দুপুরে মাদারীপুর এলাকাবাসী মাদকের কবল থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা চেয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদারীপুর জামে মসজিদের পশ্চিম পাশের রাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা করছে। ফলে পুরো এলাকায় বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতা।
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় সাবেক এমপির ছেলে আটক, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার
কালীগঞ্জে মাদকবিরোধী সমাবেশ
স্থানীয়দের দাবি, প্রতিদিন অসংখ্য মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এ এলাকায় এসে জড়ো হন। পাশাপাশি, মাদারীপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এই বাড়িটি আগে স্থানীয় মফিজ সাহেবের মালিকানায় ছিল। বর্তমানে সেটা স্থানীয় টুনু সাহেবের ছেলে গাফফার দখল করে রেখেছেন।
তারা জানান, বরিশুর ২৩ ও ২৪ নম্বর এবং ব্রাহ্মণকিত্তা ১ ও ২ নম্বর পিলার ঘিরে প্রতিদিনই চলে মাদকের লেনদেন। এ কারবারে জড়িত রয়েছেন বেশ কয়েকজন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণকিত্তা ১ নম্বর পিলারের পাশে বসবাসকারী শামসুদ্দিনের ছেলে আলম, খোয়েজনগরের সালাউদ্দিনের ছেলে রবিন, ড্রাইভারের ছেলে মাহবুব, পটকাজোরের হাকিমের ছেলে অপু এবং মাদারীপুরের জুম্মনের ভাই হিসেবে পরিচিত সোলায়মান অন্যতম।
তবে অভিযুক্তদের মোবাইলে একাধিকবার কল দিয়েও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা সেলিম রেজা বলেন, “এ এলাকায় মাদক সমস্যা এখন মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
স্থানীয় মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “এখানে শুধু মাদক ব্যবসাই নয়, এর ফলে এলাকায় চুরি, দস্যুতা, ছিনতাই বেড়ে গেছে। আমরা কেউই নিরাপদ নই। দিনের পর দিন এই অবস্থা চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না।”
অপর এক স্থানীয় আবু বকর বলেন, “আমরা একাধিকবার স্থানীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু মাদক চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। এখন একমাত্র ভরসা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, “এই এলাকাটি একসময় শান্তিপূর্ণ ছিল। এখন সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হওয়াটাও আতঙ্কের বিষয়। প্রতিদিন নতুন মুখ, মাদকসেবী ও অপরাধীদের আনাগোনা। প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”
এদিকে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল হক ডাবলু বলেন, “মাদকবিরোধী কার্যক্রমে আমরা সবসময়ই তৎপর। যে এলাকাটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, আমরা সেটি সম্পর্কে অবগত এবং নিয়মিত সেখানে আমাদের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জারি রয়েছে। আজও ওই এলাকা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদক নির্মূলে আমরা সবসময় সতর্ক ও দায়বদ্ধ।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী