সড়কের পাশে গর্ত করে মাটি কাটার হিড়িক
Published: 16th, March 2025 GMT
নান্দাইল চৌরাস্তা-তাড়াইল আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়ায় সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি চোখে পড়ছে না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এভাবে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কের নান্দাইল উপজেলার চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি সড়ক কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদরে চলে গেছে। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি দিয়ে কেন্দুয়া, তাড়াইলসহ কিশোরগঞ্জের ভাটিতে থাকা বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ চলাচল করে। সম্প্রতি সেতু-কালভার্টগুলো প্রশস্ত করে সড়কটির আধুনিকায়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নান্দাইল উপজেলার যুগের হাওর থেকে শিমুলতলা বাজার পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ পাশ থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে অসাধু চক্র। কাছাকাছি এ ধরনের গর্তের কারণে সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে যানবাহন ওইসব গর্তে পড়ে বড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা স্থানীয়দের।
রোববার যুগের হাওর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির পাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি গভীর গর্ত হয়েছে। দেখেই বোঝা যায়, এ ধরনের গভীর গর্ত শুধু মাটি বিক্রির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে, মাছ চাষের জন্য নয়। গর্তের গভীরতার পরিমাণ যাতে না বোঝা যায়, সে জন্য পানিভর্তি করে রাখা হয়েছে। একটু সামনে এগিয়ে সম্প্রতি মাটি কেটে নেওয়া আরও কয়েকটি গভীর গর্ত দেখা যায়। পাশের একটি ডোবায় ভেকু (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে সেই মাটি একের পর এক ট্রাক্টরে ভর্তি করতে দেখা যায়। মাটিবোঝাই ট্রাক্টরগুলো আশপাশের কয়েকটি ইটভাটায় পৌঁছে দিচ্ছে।
ভেকুর চালক শহীদ মিয়া জানান, তিনি চুক্তিতে মাটি কেটে দিচ্ছেন। ঠিকাদার জাবেদ মিয়া তাঁকে এখানে এনেছেন। ট্রাক্টর চালক রইচ উদ্দিন বলেন, মাটি পৌঁছে দিয়ে দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন ৭০০ টাকা।
ঠিকাদার জাবেদ মিয়ার ভাষ্য, জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি হাজার মাটি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে কিনে ইটভাটায় পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। ভাটা মালিকদের কাছে প্রতি হাজার মাটি বিক্রি করছেন ৬-৭ হাজার টাকা করে। ইতোমধ্যে তিনি মঞ্জিল মিয়া, আবুল কাসেম, রাসেল মিয়ার জমির মাটি কেটে নিয়েছেন বলে জানান।
সড়কের পাশে গভীর গর্ত করার কারণে সড়কের ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে জাবেদ বলেন, জমির মালিকরা মাটি বিক্রি করছেন, তাই তিনি নিচ্ছেন।
জমির মালিক মঞ্জিল মিয়া জানান, তাঁর জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে ঠিকই; কিন্তু এখনও টাকা দেননি ঠিকাদার। অন্যদের যে দামে টাকা দিয়েছেন, তাকেও সে দামেই টাকা দেবেন। সড়কের স্থায়িত্ব ও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বলার পর তিনি জানান, সবাই দিয়েছে; তাই তিনিও দিয়েছেন। জমির মালিক আবুল কাসেমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে মাছ চাষের জন্য মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করেন। সড়কের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির জানান, তিনি সশরীরে গিয়ে তাদের বাধা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু জড়িতরা তা মানছেন না বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগটি সত্য নয়।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মো.
নান্দাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়েজুর রহমান জানান, এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি দেখার জন্য বলে দিয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক ক শ রগঞ জ ইটভ ট য় সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।
পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।
সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।
একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।
শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।
ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ