তুলাকে শিগগিরই কৃষিপণ্য ঘোষণা করা হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 17th, March 2025 GMT
তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণা এবং দেশে তুলা উৎপাদন বাড়াতে দুই মাসের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে সরকার। দেশিও তুলার ওপর আরোপিত ট্যাক্স জরুরিভিত্তিতে প্রত্যাহার করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
সোমবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশ তুলা চাষের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। তামাক চাষের জমির কিছু অংশে তুলা চাষ করলে কৃষকও লাভবান হবেন, আবার দেশও অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে। দেশের জন্য ভালো তা কোন গোষ্ঠীর বিপক্ষে গেলেও সেই সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না ড.
ওমান প্রবাসীরা পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যায় আছেন। এসব প্রবাসীদের কষ্ট লাঘবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, পাসপোর্ট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা অর্ধেকে নেমে আসবে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তুলা রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপ করছে। তবে, বাংলাদেশ এর বাইরে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় সীমা পেছানো উচিত হবে না বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, উত্তরণের জন্য সরকার ও ব্যবসায়ীরা আগে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর সময় পাওয়া যাবে তখনই ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেবে।
আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ায় দেশিও তুলাকে প্রণোদনা দেওয়া উচিত সেখানে ট্যাক্স ভ্যাট বসানো হয়েছে। দেশিও তুলার ওপর আরোপিত এ ট্যাক্স কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ করা কথা জানান এনবিআর-এর সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন (কাস্টম বন্ড)। এবং দ্রুতই দেশিও তুলার ওপরে আরোপিত ট্যাক্স-ভ্যাট প্রত্যাহারের সুখবর আসবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এনবিআর সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ।
বাংলাদেশ কটন জিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাবের বলেন, বাংলাদেশে তামাক কৃষি পণ্য অথচ তুলাকে এখনো কৃষি পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে তুলা চাষি ও জিনার্সরা কৃষি ঋণ নেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ঋণ নিতে দিতে হয় বাড়তি সুদ। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে অন্তত দুই লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ করে আমদানিকৃত তুলার চার ভাগের এক ভাগ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
তুলা আমদানিতে চীনকে হটিয়ে বাংলাদেশ এখন শীর্ষ দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, চামড়ার মৌসুমে ট্যানার্সদের যেভাবে স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হয়। তুলাতেও স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়া হলে কৃষকরা তুলা উৎপাদন করে দাম পাওয়ার অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
দেশে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয়। বিপুল এ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এক-চতুর্থাংশ দেশে উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী পরিচালক ড. ফকরে আলম ইবনে তাবিব।
তিনি বলেন, ধানের জমিতে তুলা চাষ হয় না। তুলা মূলত চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকা, পাহাড়ি এলাকাকেসহ উঁচু জমিতে তুলা চাষ করা হয়। নীতি সহাযোগিতা দেওয়া হলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত না করেই দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ টন তুলা উৎপাদন করা সম্ভব। তুলা বীজ থেকে ভোজ্য তেল ও গবাদি পশুর খাদ্য খৈল পাওয়া যায়। ফলে তুলা চাষ বাড়লে আমদানি নির্ভর ভোজ্য তেল ও খৈল আমদানি কমবে; বলেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক।
বাংলাদেশ সুদান কটন জিনিং ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সুদানে তুলা চাষে সফল প্রবাসী উদ্যোক্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, বাংলাদেশে তুলা চাষ বাড়াতে সহায়তা করবেন। এরই মধ্যে উচ্চ ফলনশীল তিনটি উন্নত জাতের তুলা বীজ পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। এ নতুন জাতের চাষাবাদ শুরু হলে কম জমি থেকে বেশি তুলা উৎপাদন করার সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফ-এর সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, তুলা এখনো কৃষি পণ্য নয় বা দেশি তুলার ওপর বৈষম্যমূলক কর আছে অনেকে তা জানতো না। দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফ-এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইআরএফ, বাংলাদেশ কটন জিনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সুদান কটন জিনিং ইন্ডাস্ট্রিজ।
ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন পরর ষ ট র উপদ ষ ট ত ল র ওপর কটন জ ন চ ষ কর আমদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।