তামাকের রাজ্য পরিণত হচ্ছে দীঘিনালা
Published: 17th, March 2025 GMT
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা এখন তামাকের রাজ্যে পরিণত হচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভবান হাওয়ার কারণে এই উপজেলার ফসলি জমি, স্কুল ও কলেজের পাশের জায়গায় তামাকের চাষ করেছেন চাষিরা। এর ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ ও কৃষি ব্যবস্থা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এ বছর দীঘিনালায় প্রায় ৪৫০ জন চাষি প্রায় ১২০০ একর জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তামাক শুকাতে পুরো উপজেলায় প্রস্তত করা হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক চুল্লি। এসব চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রচুর পরিমাণে কাঠ।
এলাকাবাসী জানান, দীঘিনালা উপজেলার কৃষকেরা আগে নিজেদের জমিতে ধানের পাশপাশি প্রচুর পরিমাণে সবজির আবাদ করতেন। তাদের উৎপাদিত সবজি খাগড়াছড়ি শহরসহ বিভিন্ন জেলায় যেত। এখন কৃষকেরা সবজি চাষ না করে ঝুঁকছেন তামাক চাষের দিকে। এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পরিবেশেরও বিশাল ক্ষতি হচ্ছে, কারণ তামাক পোড়াতে চুল্লিতে পোড়ানো হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে গাছ।
আরো পড়ুন:
‘টমেটো এখন পাখিদের খাদ্য’
আগুনে পুড়ল ১২ বিঘা পানের বরজ
বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, “তামাক চাষ নিয়ে নিরুউৎসাহিত করতে কোনো ধরনের উদ্যোগ না থাকায় দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো কৃষকদের তামাক চাষে উদ্ধুদ্ধ করছে। ফলে দিনদিন বাড়ছে তামাকের চাষ।
আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা
উপজেলার মেরুং এলাকার মো.
হাসিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাধন ত্রিপুরা জানান, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। কিছু বললে, তারা (চাষি) জানায়, নিজের জমিতে চাষ করেছেন, এতে তাদের ক্ষতি কি? এ কারণে কিছুই বলতে পারেন না তারা।
দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তনয় তালুকদার বলেন, “তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য অব্যশই ক্ষতিকর। তামাক চাষিদের দীর্ঘ মেয়াদি রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, হজম শক্তি কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে তামাক চাষিদের। এসব রোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য তামাক চাষ ছেড়ে দিতে হবে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব
সর্ম্পেকে সবাইকে সচেতন করতে হবে।”
দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর তামাক চাষ বেড়েছে। তামাক চাষ যেমন মানব স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তেমননি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।”
তিনি বলেন, “তামাকের বিকল্প হিসেবে যেসব ফসল আমরা বিগত বছরগুলোতে কৃষকদের দিয়ে উৎপাদন করিয়েছি, দেখা গেছে, সঠিক দাম ও সঠিক বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তামাক চাষে এখানে আরেকটা নতুন কোম্পানি যুক্ত হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। এসব কারণে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা উচ্চমূল্যের মসলা জাতীয় ফসল, ভুট্টা, সূর্যমুখী, সরিষা চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করে তামাক চাষ কমানোর চেষ্টা করব।”
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল র জন য চ ষ কর উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন যখনই হোক, প্রস্তুত থাকতে হবে: সিইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা হলে ইসি সরকারের ‘ভাব’ বুঝতে পারবে। তখন নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলে—যখনই হোক নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, আগে বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সেই সময়সীমা মাথায় রেখে ইসি প্রস্তুতি শুরু করেছিল। সেভাবে এগিয়েছিল। এখন আবার নতুন ‘ডাইমেনশন’ এসেছে। যৌথ বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘যে ঘোষণাটা লন্ডনে বসে হয়েছে, এটা আপনারা যেটুকু জানেন, আমি এর বাইরে বেশি কিছু জানি না। আপনারা যেটুকু দেখেছেন মিডিয়াতে, আমিও সেটুকু দেখেছি।’
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে—এ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি এটা টেলিভিশনে দেখেছি, এটাকে আমি ফরমাল, অফিশিয়াল ভাবতে পারতেছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো কথাবার্তা হয় নাই, কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে ভাবতেছি। যখনই হবে, যখনই হয় যাতে আমরা ইলেকশনটা “ডেলিভার” করতে পারি।’
সিইসি আরও বলেন, ‘এখন আমরা প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। যখন সরকারের সঙ্গে কথা হবে যে ওনারা কী আলোচনা করেছেন, আমরা তো নিশ্চয় ওনাদের ভাব বুঝতে পারব, বুঝে তখন একটা তারিখ, তখন সেটা করব। এখন আমাদের চিন্তা–ভাবনা, ধ্যান–ধারণা, শয়নে–স্বপনে নিজেদের প্রস্তুতি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন—এটা এখনো তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ছয় মাস–আট মাস আগে ভোটের তারিখ বলার বিধান আইনে নেই।
সিইসি বলেন, যৌথ বিবৃতিতে তিনি যেটা দেখেছেন যে রমজানের আগেও নির্বাচন হতে পারে। সেখানে ‘যদি’ আছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচনের জন্য বড় প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো অনেকটা শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার নিবন্ধন, এটি মোটামুটি শেষ।
চলতি বছরের হালনাগাদে যাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, সে তালিকা চূড়ান্ত হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তাঁরা ভোট দিতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত থাকতে হয়। সাধারণত ভোটের তারিখের মাস দুয়েক আগে তফসিল ঘোষণা করা হয়। যেদিন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার আগে যাঁদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে ইসি চেষ্টা করবে। এ জন্য আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনার চিন্তা করছে ইসি। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে—এই ওয়াদা তিনি দিতে পারবেন না। তাঁরা যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, যাতে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের আস্থায় আনতে ইসি কী করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও দেশের ভালো চায়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাদের অনেক ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়। এগুলো তিনি রাজনৈতিকভাবে দেখেন।
সিইসি আরও বলেন, কেউ বিপক্ষে না থাকলে বুঝতে হবে কোনো ‘কোয়ালিটি’ নেই। বিপক্ষে কেউ বললে তখন শোধরানোর সুযোগ থাকে। এ জন্য কেউ বিরুদ্ধে বললে তিনি আহত হন না। তিনি এ ধরনের সমালোচনাকে স্বাগত জানান।