ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার ফোনালাপ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি সৌদি আরবে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক ও পরে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে মস্কো সফরের পর দুই নেতার মধ্যে সরাসরি কথপোকথন হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পরিবর্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলেছেন। আর ট্রাম্প বলছেন, যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তিনি আশাবাদী। 

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা আবার চালু করে। গতকাল সোমবার রয়টার্স জানায়, ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন যাওয়ার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই, এ যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব হয় কিনা। হয়তো পারব, হয়তো পারব না। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। এ সময় তিনি বলেন, আমি মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলব। এর মধ্যেই বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

গত সপ্তাহে ইউক্রেন ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানায়। এ নিয়ে পুতিনের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। এ আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়ার লড়াই তীব্রতর হয়েছে। রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল কুরস্ক থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রায় বিতাড়ন করেছে রুশ সেনারা।

এরই মধ্যে ট্রাম্প বলেছেন, মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে তাঁর যে আলোচনা হবে, তাতে প্রাধান্য পাবে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি। আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে ছাড়ের প্রসঙ্গ থাকতে পারে– এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ভূখণ্ড ও বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কিছু সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষই অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।

এর আগে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রোববার সিএনএনকে বলেন, আমার মনে হয় এ সপ্তাহে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সত্যিই ভালো ও ইতিবাচক আলোচনা হতে যাচ্ছে। আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। ইউক্রেনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরও আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি। উইটকফের বিশ্বাস, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে’ রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে যাচ্ছে।

সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডের বিষয়ে কী করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি উইটকফ। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। উইটকফ জানান, গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। এর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি মস্কোয় মার্কিন দূতাবাসে ফেরেন।  

ডয়েচে ভেলে জানায়, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই সামরিক জোট ন্যাটোর অংশ করা যাবে না, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়া এমন শর্ত দিয়েছে। রাশিয়ার একটি গণমাধ্যমে দেশটির মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দুটি বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এক.

ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর অংশ করা যাবে না এবং দুই. যে কোনো শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। রুশ ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, এ শান্তি চুক্তিতে নিরাপত্তা যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে। ইউক্রেনকে আলোচনায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।’ তিনি জানান, ইউক্রেনে ন্যাটো কোনোরকম কাজ করতে পারবে না। এমনকি, ন্যাটোর সেনাও ইউক্রেনে থাকতে পারবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।

জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।

আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ