ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপ ঘিরে সম্ভাবনার আলো
Published: 18th, March 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার ফোনালাপ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি সৌদি আরবে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক ও পরে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে মস্কো সফরের পর দুই নেতার মধ্যে সরাসরি কথপোকথন হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পরিবর্তে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলেছেন। আর ট্রাম্প বলছেন, যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা আবার চালু করে। গতকাল সোমবার রয়টার্স জানায়, ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটন যাওয়ার সময় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই, এ যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব হয় কিনা। হয়তো পারব, হয়তো পারব না। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। এ সময় তিনি বলেন, আমি মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথা বলব। এর মধ্যেই বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইউক্রেন ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানায়। এ নিয়ে পুতিনের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। এ আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়ার লড়াই তীব্রতর হয়েছে। রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল কুরস্ক থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রায় বিতাড়ন করেছে রুশ সেনারা।
এরই মধ্যে ট্রাম্প বলেছেন, মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে তাঁর যে আলোচনা হবে, তাতে প্রাধান্য পাবে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি। আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে ছাড়ের প্রসঙ্গ থাকতে পারে– এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ভূখণ্ড ও বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়ের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কিছু সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষই অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।
এর আগে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রোববার সিএনএনকে বলেন, আমার মনে হয় এ সপ্তাহে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সত্যিই ভালো ও ইতিবাচক আলোচনা হতে যাচ্ছে। আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। ইউক্রেনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরও আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি। উইটকফের বিশ্বাস, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে’ রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে যাচ্ছে।
সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ইউক্রেনের ভূখণ্ডের বিষয়ে কী করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাব দেননি উইটকফ। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। উইটকফ জানান, গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। এর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি মস্কোয় মার্কিন দূতাবাসে ফেরেন।
ডয়েচে ভেলে জানায়, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই সামরিক জোট ন্যাটোর অংশ করা যাবে না, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়া এমন শর্ত দিয়েছে। রাশিয়ার একটি গণমাধ্যমে দেশটির মুখপাত্র জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দুটি বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এক.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।