যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক কে এই তুলসী
Published: 18th, March 2025 GMT
তুলসী গ্যাবার্ড একসময় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য। রাজনীতি করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। পরে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন তিনি।
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তুলসীকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে মনোনীত করেন।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের পদে তুলসীকে মনোনয়ন দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি (তুলসী) সবার জন্য গর্ব করার মতো একজন মানুষ হয়ে উঠবেন।
৪৩ বছর বয়সী তুলসীর মনোনয়ন নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা হয়। তাঁর ব্যাপারে খোদ রিপাবলিকান পার্টির অনেকে আপত্তি জানান। তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ জানান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রায় ১০০ কূটনীতিক, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর মনোনয়ন মার্কিন সিনেটে অনুমোদন পায়। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দায়িত্ব নেন।
আগে থেকে তুলসীর গোয়েন্দা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। তবে দুই দশকের বেশি সময় মার্কিন বাহিনীতে একজন সেনাসদস্য হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।
কুয়েত ও ইরাক যুদ্ধের সময় দেশ দুটিতে তুলসীকে মোতায়েন করা হয়েছিল। এ ছাড়া দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন কংগ্রেস সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তুলসী। ২০২০ সালে নিজ দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান।
২০২২ সালে তুলসী ডেমোক্রেটিক পার্টি ছাড়েন। তখন তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি ‘যুদ্ধবাজদের’ আধিপত্যে চলছে।
তুলসী বিয়ে করেছেন আব্রাহাম উইলিয়ামস নামের এক সিনেমাটোগ্রাফারকে। তুলসীর বাবার নাম মাইক গ্যাবার্ড। মেয়ের মতো বাবারও দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। তিনি প্রথমে রিপাবলিকান পার্টি থেকে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন।
তুলসী রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। গত সেপ্টেম্বরে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিলেন তুলসী।
আরও পড়ুনবাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের মূল জায়গা: তুলসী গ্যাবার্ড১৫ ঘণ্টা আগেহিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নামের কারণে তুলসীকে অনেকেই ভারতীয় বলে মনে করেন। তবে ভারতের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।
তুলসীর মা হিন্দু মতাদর্শে দীক্ষা নেন এবং তাঁর সব সন্তানের হিন্দু নাম দেন। তুলসীও নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেন। মার্কিন কংগ্রেসে তিনিই প্রথম হিন্দু সদস্য। আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভগবত গীতা হাতে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।
রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তুলসী যে ট্রাম্পের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন, তা বোঝা যায় তাঁকে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে বেছে নেওয়া থেকে।
আরও পড়ুনতুলসী গ্যাবার্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান, ট্রাম্পের আরেক বিজয়১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গত নভেম্বরে তুলসী এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসনে কাজ করাটা তাঁর জন্য সম্মানজনক হবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পরমাণু যুদ্ধ ঠেকাতে তিনি যদি কোনো সহযোগিতা করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই করবেন।
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কাজ কী
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইনটেলিজেন্স কমিউনিটি’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স প্রোগ্রামের দেখভাল করেন। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুনওয়াশিংটনে পৌঁছেই তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠক করলেন নরেন্দ্র মোদি১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইনটেলিজেন্স কমিউনিটির প্রধান তথা জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তুলসীর অধীনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ), কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা, নৌবাহিনীর গোয়েন্দা, বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা, মহাকাশবাহিনীর গোয়েন্দাসহ ১৮টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও দপ্তর আছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদটি সৃষ্টি করা হয়। ২০০৫ সালে প্রথম এ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তুলসী দেশটির প্রথম নারী জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান হলেন তুলসী গ্যাবার্ড১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে ট্রাম্প মনোনীত তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক১৫ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প বল ক ন প র ট ত লস র ন ত লস ত লস ক সদস য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৫৭ কোটি ডলার। সেই হিসেবে এ বছর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণের সুদাসল পরিশোধ হয়ে গেছে।
বিদেশি ঋণ-অনুদান পরিস্থিতির ওপর গতকাল বুধবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
ইআরডির একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আগ্রাসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিণাম চিন্তা না করে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য বাড়াসহ নানা কারণে এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি ডলার সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ-অনুদান এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান। এদিকে গত জুলাই-মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম।
গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। জুলাই-মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।