অফিসের কাজ হোক বা প্রতিদিনের ক্লাস, জীবনের একটা বড় সময় আমাদের কাটাতে হয় বসে থেকে। শরীর নড়াচড়া না করে একনাগাড়ে অফিসের ডেস্ক, কম্পিউটার কিংবা টিভির সামনে বসে থাকা মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে দেখা দিতে পারে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। তবে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করলে এসব সমস্যা থেকে বাঁচা সম্ভব।

১.

ঘাড়ব্যথা ও অস্বস্তি

কর্মব্যস্ত মানুষের দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে অফিসের চেয়ারে বসে বা কম্পিউটারের দিকে কুঁজো হয়ে। এভাবে অনেকক্ষণ বসে থাকলে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে এবং এতে ঘাড়ের পেশিগুলোতে পড়ে অতিরিক্ত চাপ। গবেষণা বলে, বসে থেকে ঘাড় সামনের দিকে মাত্র ৩০ ডিগ্রি কাত করলেই স্বাভাবিকের চেয়ে তিন–চার গুণ বেশি পেশিশক্তির প্রয়োজন হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে ঘাড়ব্যথার কারণ হতে পারে।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন

আপনার কম্পিউটার এমনভাবে বসান, যাতে কম্পিউটারটির পর্দার মাঝামাঝি অংশ আপনার চিবুকের সমান উচ্চতায় থাকে। এতে আপনার ঘাড় স্বাভাবিক অবস্থানে থাকবে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। হেঁটে আসুন খানিকটা। কাজের সময় চেষ্টা করুন এমনভাবে বসতে, যেন সরাসরি কম্পিউটারের দিকে তাকাতে পারেন, যেন নিচের দিকে তাকাতে না হয়।

২. মনোযোগের অভাব

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মস্তিষ্ক ধীরগতির হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন

একটা নির্দিষ্ট কাজ শেষ করার পর আরেকটা কাজ করার মাঝখানে বিরতি নিন। একবারে সব কাজ করে সময় বাঁচানোর চেষ্টা করলে কর্মক্ষমতাই কমে যেতে পারে; বরং মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। হতে পারে দূরের টেবিলের সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করে আসা বা নিজের বাসায় হলে বারান্দা থেকে ঘুরে আসা।

আরও পড়ুনআবহাওয়ার সঙ্গে হাঁটু, কোমর ও বাতের ব্যথার কী সম্পর্ক?২৫ আগস্ট ২০১৭৩. বিষণ্ণতা

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা দিনে সাত ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, তাঁরা কেবল চার ঘণ্টা বা এর কম সময় বসে থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি বিষণ্ণতায় ভোগেন। তাই বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে হলেও দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন

প্রকৃতির সংস্পর্শে আসুন। ছাদে বা বারান্দায় বাগান করলে সেখানে খানিকটা সময় কাটিয়ে আসুন। গবেষণা বলছে, ৯০ মিনিটের জন্য প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করলে নেতিবাচক চিন্তা কমে যায়, যা বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই অফিস বা বাসার বাইরে কিছুটা সময় প্রকৃতিতে কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৪. ইনসুলিনজনিত সমস্যা

ডায়াবেটিস আছে, এমন রোগীদের বসে থাকা মানেই বিপদ। এক দিনের জন্য বসে থাকলেই তাঁদের শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে যাঁরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন

নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটুন, যেন রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। যথাযথ পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খান। পানি কম খেলে শরীরে ভ্যাসোপ্রেসিন নামের হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। গবেষণা বলছে, যাঁরা প্রতিদিন আধা থেকে এক লিটার পানি খান, তাঁদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

৫. পায়ের ব্যথা

বেশ লম্বা সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকলে পায়ের পেশিগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন

চেয়ারের উচ্চতা এমনভাবে ঠিক করুন, যাতে পা মাটির ওপর সমানভাবে থাকে এবং হাঁটু সামান্য উঁচুতে থাকে। একনাগাড়ে বসে না থেকে কাজের মাঝেমধ্যে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে পা সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে কাজ করার উদ্যমও পাবেন।

আরও পড়ুনযে ব্যায়াম কমাবে কোমর ও পিঠের ব্যথা১৫ জুলাই ২০২০৬. অতিরিক্ত মেদ জমা

অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরে চর্বি দহনকারী যে বিশেষ এনজাইম আছে, অর্থাৎ লিপোপ্রোটিন লাইপেজের কার্যকারিতা কমে যায়, যা শরীরে মেদ জমার অন্যতম কারণ হতে পারে।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন

প্রতি ১৫ মিনিট পর একবার শরীরের কোনো একটি অংশ নাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনি চাইলে গোড়ালি বা হাতের কবজি ঘোরাতে পারেন, মাথা পেছনে হেলিয়ে নিতে পারেন বা হাতের আঙুল নাড়াতে পারেন। কোমরও খানিকটা এদিক–ওদিক করে নিতে পারেন।

৭. দুর্বল হাড়

ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি না করে অনেকক্ষণ বসে থাকলে হাড় ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় ও এর ঘনত্ব কমে যায়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে হাড় দুর্বল করে তোলে।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন

কাজের ফাঁকে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি হাড় মজবুত রাখতে দুধ, পালংশাকের মতো ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। এর সঙ্গে ডিমের মতো ভিটামিন ডি–সমৃদ্ধ খাবারও বেছে নিন। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে, যা হাড়ের গঠন রাখে মজবুত।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শরীর ও মনের ওপর বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এসব সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। তাই অলসতা করে দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে নিয়ম করে উঠে হাঁটুন, শরীরের নড়াচড়ার দিকে খেয়াল রাখুন এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। শরীর আপনার, যত্ন করার দায়িত্ব আপনারই।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনকোমর কত ইঞ্চি হলে বুঝবেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন?০১ অক্টোবর ২০২২

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ