বাংলাদেশে গুতেরেস এবং এখানকার সংস্কার
Published: 18th, March 2025 GMT
হাতিরঝিল পার হওয়ার আগেই মুঠোফোনের মেসেজে দেখলাম লেখা, ‘মিটিং অ্যাট ১.০০ পিএম।’ বেশ অবাক হলাম। এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। এটা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সভা। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফোন করে আমাকে জানিয়েছেন (১৫ মার্চ) বেলা ১টা ৩০ মিনিটে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ কথা জানানো হয়েছে এবং আমাকে কনফার্ম করতে বলা হয়েছে। আমি কনফার্ম করেছি। সেই অনুযায়ী আমি রওনা হয়েছি। এখন ফোনে পৌনে একটা বাজে। হঠাৎ এই ফোনে এই মেসেজ দেখলাম। আমি ঢাকার জাতিসংঘের মিশনের মিনা খানকে ফোন করলাম। বললাম, ঢাকার যা ট্রাফিক, সরাসরি যেতে পারলে পৌঁছাতে পারতাম। কিন্তু তা তো পারব না, দেরি হবে। তিনি বললেন, আমাদের একটু মুশকিল হয়েছে। অসুবিধা নেই। আপনার দেরি হলেও আমি ভেতরে ঢুকিয়ে নেব।
একটা সাসপেন্স তো মনের মধ্যে ছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব বলে কথা। নোবেল বিজয়ীদের নিয়েও একটা সাসপেন্স কাজ করত। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসকে দেখতে দেখতে (আর আমি তো তিনি নোবেল পাওয়ার আগে থেকেই তাঁকে দেখছি) ব্যাপারটা কেমন ডালভাতের মতো হয়ে গেছে।
কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিবের ব্যাপার তো তা নয়। আমাকে বলা হয়েছিল, নির্ধারিত ছয়জন মিনিট দুই-তিনেক করে বক্তৃতা করার সুযোগ পাবেন। আপনিও সে রকম একটা বিরল সুযোগের অধিকারী হবেন। ৭৫ বছর বয়সেও একটা থ্রিল কাজ করা শুরু করল আমার মধ্যে। কী ব্যাপারে বলব তাঁর সামনে? নির্দিষ্ট কোনো বিষয় আছে? আমি জানতে চেয়েছিলাম। জবাবে আমাকে বলা হয়েছিল, এই যে আমরা আমাদের দেশে সংস্কার করার চেষ্টা করছি, তার ওপরে বলবেন।
এখন সভা-টভা সব শেষ হয়ে গেছে। আন্তোনিও গুতেরেস তাঁর কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। এখন মনে হয়, এই সভা ডাকা হয়েছিল জাতিসংঘের মহাসচিবকে বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে। এ জন্যই সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানদের ডাকা হয়েছিল। ডাকা হয়েছিল রাজনৈতিক দলের নেতাদের। তাঁরা সংস্কার নিয়ে কথা বলেছিলেন। কে, কী বলেছিলেন, সেটা আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে আশা করি শুনেছেন। আমি তেমন কিছু বলিনি। কারণ, আমার মনে হয়েছিল, আমাদের সরকার সম্ভবত চায় জাতিসংঘের মহাসচিব আমরা যে গুণগতভাবে গণতন্ত্রকে নির্মাণ করতে চাচ্ছি, তার একটা ধারণা নিয়ে যান।
আমি খারাপ কিছু মনে করছি না। এবার ফ্যাসিবাদের নৃশংসতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, বিশেষ করে ফলকার টুর্কের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন যেভাবে শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞকে উন্মোচিত করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে, তা আমাদের লড়াইকে এক বিশেষ আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, গণতন্ত্র নির্মাণে বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমকে তাঁরা সহায়তা করবেন। এই বক্তৃতা যখন আমি পড়েছি, তখন আমার মনের মধ্যে প্রশ্ন উদয় হয়েছে, কীভাবে তিনি সহায়তা করবেন? সংস্কার করার জন্য তো অনেক টাকাপয়সা লাগবে না। হ্যাঁ, বুদ্ধি-পরামর্শ লাগবে, যাতে সংস্কারটা ঠিকমতো পরিচালনা করা যায়। সুদূর ওয়াশিংটন থেকে গুতেরেস আমাদের কী পরামর্শ দেবেন? সভা শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, আমি সংস্কারকাজে সাহায্য করতে চাই মানে আমি আপনাদের কোনো পরামর্শ দিতে চাই না। সংস্কারের কাজ আপনাদের করতে হবে। কীভাবে করবেন, কখন করবেন—এ সবকিছুর ব্যাপারে আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
যদি কখনো কোনো ব্যাপারে সাহায্য চান, তবেই আমরা আপনাদের সাহায্য করব।
তবে হ্যাঁ, অধ্যাপক ইউনূসের মতো আন্তোনিও গুতেরেসও জাতীয় ঐকমত্যের কথা বলেছেন। কিন্তু স্পষ্টত, ১৫ মার্চের ওই সভায় দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত উঠে এসেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একপ্রকার হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, এই যে সভাটা হলো, এটা কেন হলো, তা ভালো করে বোঝা গেল না। আগের মতোই বিএনপির নেতা এই সভায় নির্বাচনকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু জামায়াত ভিন্ন কথা বলেছে। আর নবগঠিত এনসিপি গণপরিষদের নির্বাচনের মাধ্যমে সংস্কারের কথা বলেছে। তাদের মতে, অন্যথায় সংস্কার টেকসই হবে না।
আমি এসব বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। আমি আগেই বলেছি, এসব কথা শোনার জন্য কিংবা শোনানোর জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব এই বৈঠকে বসেছেন বলে আমার মনে হয়নি। তিনি আমাদের জাতীয় ঐক্য দেখতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা একটা টেকসই গণতন্ত্র নির্মাণের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারব বলে আশা করি।
একটু ভিন্ন, কিন্তু একটা প্রাসঙ্গিক কথা বলি। গত লেখায় (সামনে কী? জাতীয় নির্বাচন? কত দূর?) আমি বলেছিলাম, অধ্যাপক ইউনূস যে বললেন, নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের মার্চে কিংবা জুনে হতে পারে, তাতে একধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, ভাই, নির্বাচন আসলে কবে হবে? কেউ কেউ এমন প্রশ্নও করেছেন, নির্বাচন ঠিক ঠিক হবে তো? ১৬ মার্চ একটি দৈনিক পত্রিকায় দেখলাম, ইফতার মাহফিলে বক্তৃতাকালে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ইতিমধ্যে সরকারপ্রধান জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলেছেন। আশা করি, অবিলম্বে বিষয়টি তিনি আরও স্পষ্ট করবেন। তাহলে জাতি আশাবাদী হবে। প্রতিটি দল নিজেদের নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজানোর সুযোগ পাবে।
এ ব্যাপারে পরিষ্কার করার সুযোগ নিশ্চয়ই প্রধান উপদেষ্টা পাবেন। কিন্তু ইতিমধ্যে তিনি আবারও তাঁর পুরোনো কথা বলেছেন। দুই দিন আগে তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক দল যদি ছোট সংস্কার চায়, তবে এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে; আর যদি বড় সংস্কার চায়, তবে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন হতে পারে।
ব্যাপারটা কারও কাছে পরিষ্কার নয়। ছোট সংস্কার কী আর বড় সংস্কার কী? ছয়টি সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৬৬টি প্রশ্ন দিয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে কি ছোট সংস্কার চিহ্নিত করতে হবে? কীভাবে? এটা কি সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত হবে? মানে যেমন কোনো দল যদি ১৬৬টি প্রশ্নের মধ্যে মাত্র ৩০টির ব্যাপারে একমত হয়, তবে কি ধরে নিতে হবে যে তারা ছোট সংস্কার চায়? আর যদি ১০০টির ওপরে করতে চায়, তাহলে কি বুঝতে হবে তারা বড় সংস্কার চায়?
এখন পর্যন্ত সংস্কার সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কোথাও ছোট কিংবা বড় সংস্কারের কথা বলা হয়নি।
অধ্যাপক ইউনূস একসময় বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যতগুলো প্রস্তাবে একমত হবে, আমরা ততগুলো সংস্কার করব। যা বাকি থাকবে, সেগুলো পরবর্তী সরকার বা সংসদ করবে। আমি কোনো কিছু চাপাব না।’
এই কথাই কি তিনি বলতে চাইছেন? কিন্তু এটা তো কোনো জেদাজেদির ব্যাপার নয়। এটা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। সেই প্রক্রিয়ায় যতগুলো ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য পোষণ করবে, ততগুলো বিষয়ে সংস্কারে হাত দেবে সরকার। অধ্যাপক ইউনূসের এই চিন্তা খুবই বাস্তবসম্মত ও গণতান্ত্রিক। কিন্তু এখন তিনি যা বলছেন, তা কনফিউজিং।
আমি আশা করি, সত্বর বিভ্রান্তি দূর হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক ঐক্যের সভাপতি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বড় স স ক র বল ছ ল ন র জন য বল ছ ন হয় ছ ল ক র কর আম দ র বছর র করব ন দলগ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’
ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী।
গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”
আরো পড়ুন:
কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি
কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”
কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”
ঢাকা/শান্ত