গাজীপুরে দুই কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ
Published: 18th, March 2025 GMT
গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় খাদ্য উৎপাদন কারখানার শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
এদিকে, বানিয়ারচালা এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ছুটি বৃদ্ধি এবং কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ওমর ফারুকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন খেলা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল সেখানে।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেড কারখানায় ৬৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। চলতি মাসের ১৭ দিন হয়ে গেলেও তাদের বেতন ভাতা দেওয়া হয়নি। শ্রমিকরা বারবার বেতনের দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ বেতন দেই, দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করছেন।
আরো পড়ুন:
দেড় ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল শুরু
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
এ কারণে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের দাবিতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে ফ্যাক্টরির নিচে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
অপরদিকে, সদর উপজেলার বানিয়ারচালা এলাকার জায়ান্ট টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করে।
শ্রমিকদের দাবি, কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ওমর ফারুকের পদত্যাগ ও ঈদুল ফিতরের ছুটি ১১ দিন করার। শ্রমিকরা কারখানার এসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছিলেন বলে জানা গেছে।
জয়দেবপুর থানার ওসি আব্দুল হালিম বলেন, “বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। অবরোধের কারণে মহাসড়কটিতে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। জায়ান্ট টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছেন।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অবর ধ ব ক ষ ভ করছ ব ক ষ ভ কর
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ