উত্তীর্ণের ১৫ বছর পর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেন ডা. আলীম
Published: 18th, March 2025 GMT
অবশেষে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেলেন ডা. আব্দুল আলীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবেদনবিদ্যা (অ্যানেসথেসিওলজি) বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। নিয়োগপত্র পেয়ে মঙ্গলবার কাজে যোগ দেন ডা.
এর আগে ২৮ আগস্ট ‘সুপারিশের ১৪ বছরেও চাকরি হয়নি ডা. আব্দুল আলীমের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমকাল।
এত বছর পর হলেও বর্তমান প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ডা. আলীম। মঙ্গলবার সমকালকে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ ১৫ বছর পর নায্য অধিকার বুঝে পেলাম।
তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তা আটকে রেখেছিল বিগত প্রশাসনগুলো। বর্তমান উপাচার্য ও প্রশাসন উদ্যোগ নেওয়ায় আমার দীর্ঘ যন্ত্রণার অবসান ঘটলো। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। নতুন পদে যোগদানের আগে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে অবেদনবিদ্যা বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন এই চিকিৎসক।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ) তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবেদনবিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে ২০১০ সালে ছয়টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নির্বাচন বোর্ড ডা. আব্দুল আলীমকে নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সুপারিশপ্রাপ্ত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আজীবন সদস্য হওয়ায় তাঁর নিয়োগ আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ডা. আলীম।
এরপর ২০১৪ সালে একই বিভাগের দুই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বছরেই নেওয়া হয় লিখিত ও চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা। এই পরীক্ষায়ই তিনি উত্তীর্ণ হন। তবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালে একই বিভাগে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ডা. আলীম সেই নিয়োগ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। তবে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলে আচমকা ধরে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখার পাশাপাশি লাঞ্ছিত করেন আওয়ামীপন্থী কয়েক চিকিৎসক বলে অভিযোগ করেন ডা. আলীম। ওই চিকিৎসকরা তখন তাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিতে দিবেন না। পরে প্রক্টর এসে উদ্ধার করলেও আর পরীক্ষা দিতে পারেননি, কোনোরকমে ফিরে যান বাসায়। এ ঘটনা নিয়ে সে সময় সমকালসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর অপহরণ ও আটকে রাখার অভিযোগ এনে ২০১৬ সালে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন ডা. আলীম। আওয়ামী সরকার পতনের পর ১৮ আগস্ট উত্তীর্ণ পদে নিয়োগের আবেদন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পরও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ডা. আলীমের নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়। তবে তার উত্তীর্ণের ফলাফল সংরক্ষিত ছিল। বর্তমান প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে। ডা. আলীম এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ কর ম খ ক পর ক ষ পর ক ষ য় সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।