ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে তৎপর
Published: 18th, March 2025 GMT
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে ব্রিটিশ কাউন্সিল তৎপর। এ জন্য তারা সরকারের স্পষ্ট নির্দেশিকা, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারত্ব মনোভাব চায়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এক্টিসের একটি গবেষণায় এই বিষয়টি উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) শীর্ষক এই গবেষণার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এগিয়ে গেছে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি তৈরি ও বৈশ্বিক শিক্ষা অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে কাজ করে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, টিএনই একাডেমিক উৎকর্ষ ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে। এটা উভয় দেশের জন্যই উপকারি। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, জ্ঞানবিনিময় এবং এই খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে টিএনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস। তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে টিএনই-এর প্রসারসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ সুগম করবে।
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের সম্ভাবনা ও সামাজিক মূল্য’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী কাউকে বাদ না দিয়ে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন রূপকল্পে টিএনই প্রোগ্রাম চালানোর আহ্বান জানান ইউজিসির সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
এ সময় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ বলেন, বাংলাদেশে টিএনই প্রোগ্রাম ঠিকমতো চালু করতে হলে সঠিক শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন জরুরি। যেমনটি ভারত কিংবা মালয়েশিয়া করেছে।
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েটরা বর্তমান বাজারে চাকরি পাচ্ছেন না। বেকারত্ব বাড়ছে। আমাদের দরকার কর্মমুখী শিক্ষা।’
অনুষ্ঠানে টিএনই–২০২৫ অনুদান বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব এডুকেশন তৌফিক হাসান। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার পাউন্ড করে অনুদান দেওয়া হবে।
অনুদানের আওতায় লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ একসঙ্গে কাজ করবে। এ ছাড়া নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশও একসঙ্গে কাজ করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া রয়েল হলোওয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং কিল ইউনিভার্সিটি ও ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি) যৌথভাবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এডুকেশন) জাকিয়া শারমিন। প্যানেল আলোচনা পর্বটি পরিচালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) ডেভিড নক্স। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ইশতিয়াক আবেদিন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট অন ষ ঠ ন ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে
তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।
এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।
বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে।
রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা।
নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।
বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।
ঢাকা/শংকর/রফিক