ঈদের আগে বিশেষ কাউন্টার খুলে নতুন নোট বিনিময় না করার সিদ্ধান্তের পর উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের ৮০টি শাখার ভল্টে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার ফ্রেশ নোটের বিশাল ভান্ডার থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। আবার এসব নোট ফেরতও নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে শাখার ভল্টের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে নোটগুলো। আরেক দিকে প্রতিটি শাখার উল্লেখযোগ্য পরিমাণের টাকা আটকা পড়েছে। এ তালিকায় সংকটে থাকা ব্যাংকের ১৯টি শাখাও রয়েছে। ব্যাংকগুলোর জন্য এসব নতুন টাকা যেন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকাররা জানান, প্রতিটি শাখার ভল্টের ধারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ একটি সীমা নির্ধারিত আছে। কোথাও ওই সীমার বেশি টাকা জমা হলে তা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সোনালী ব্যাংকের ‘চেস্ট’ শাখায় জমা দিতে হয়। প্রতিটি ব্যাংকে সাধারণত ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট থাকে বেশি। এতে জায়গা লাগে কম। ঈদ উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে আগামী ২৫ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত নতুন নোট বিতরণ করার কথা ছিল। ঈদের আগে ছোট ছোট এসব নোট খালি হবে, সে আশায় ছিল ব্যাংকগুলো। নতুন নোট বিতরণ স্থগিত করার সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবার ঈদের আগে নতুন নোট বিনিময়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে নির্ধারিত শাখাগুলোতে ৬৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ নোট পাঠানো হয়। এসব নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকায় বিতর্কের কারণে আপাতত বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত না হওয়ায় এখনই ফেরত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ব্যাংকের ভল্টে নোট পাঠানোর জন্য একটি খরচ আছে। আবার নোট ফেরত আনতেও খরচ আছে। যে কারণে কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।
নতুন নোট বিনিময়ের জন্য নির্ধারিত একটি শাখার ব্যবস্থাপক সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে এর পর নতুন নোট নিতে হয়। আবার স্থান সংকুলান বিবেচনায় ঈদের আগেই এসব নোট ছেড়ে ভল্টের জায়গা বের করা হয়। এবার ব্যাংকের ভল্টে নোট থাকলেও তা বিনিময় স্থগিত করায় এখন বিপদে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে ঈদের পর যখন টাকা ফেরত আসতে শুরু করবে, তখন চরম সংকট দেখা দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ২০ লাখ কোটি টাকার মতো সঞ্চয় থাকলেও সব ছাপানো নোট নয়। সারাদেশে দৈনিক লেনদেনের প্রয়োজনে সব মিলিয়ে ছাপানো টাকা রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে সাধারণ সময়ে ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থাকে মানুষের হাতে। আর ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়ে ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ১৫ হাজার কোটি টাকা হয়। সাধারণভাবে প্রতি বছরের এই সময়েই নতুন টাকা বাজারে আসে বেশি। দেশের প্রচিলত অধিকাংশ নোটেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে।
ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কোন কোন শাখার মাধ্যমে নতুন নোট বিনিময় করা যাবে, তা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। রোজা শুরুর আগেই এসব শাখায় ৫, ২০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানের ৬৫ লাখ টাকা করে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর বিপরীতে এসব ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার বদলের এতদিন পরও বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নোট ছাড়া নিয়ে বিতর্কের মুখে গত ১০ মার্চ নোট বিতরণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও নোট ফেরত নেওয়া হয়নি। কবে ফেরত নেবে, তা নিয়ে শাখাগুলো রয়েছে অন্ধকারে।
বেশি সমস্যায় পড়েছে দুর্বল ব্যাংক
নতুন নোটের বিপরীতে টাকা আটকে যাওয়ায় বেশি বিপদে পড়েছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকের জমা টাকা ফেরত দিতে পারছে না। অথচ তাদের প্রতিটি শাখা ৬৫ লাখ টাকা করে ভল্টে রেখেও লেনদেন করতে পারছে না। এমন সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচটি শাখা রয়েছে জনতা ব্যাংকের। তিনটি করে শাখা রয়েছে এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। ন্যাশনাল ব্যাংকের উত্তরা ও গাজীপুরের শ্রীনগর এবং এবি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা রয়েছে তালিকায়।
চাইলেই কী টাকা ছাপা যায়
সরকার পতনের প্রায় আট মাস পরও নতুন ডিজাইনের নোট কেন বাজারে এলো না, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নতুন ডিজাইনের নোট আনা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। একটি নোটের ডিজাইন চূড়ান্ত করা থেকে শুরু করে বাজারে আনা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। গত ১৬ বছরে যেসব নোট ছাপা হয়েছে তার সবই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিযুক্ত। আবার যেসব কাগজ, কালি মজুদ আছে তাও আগের নকশার। ফলে চাইলেই তা বদলানো সম্ভব নয়। সব প্রক্রিয়া শেষে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসতে পারে আগামী এপ্রিলের শেষ কিংবা মে মাসের শুরুর দিকে। এরই মধ্যে নতুন ডিজাইনের নোট প্রিন্টিংয়ের জন্য প্লেট তৈরি করা হয়েছে। কাগজ, কালি কেনার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের দিকে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে অথবা মে মাসের প্রথম দিকে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসব ন ট সব ন ট পর ম ণ র জন য ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের
ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।