একসময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার
Published: 19th, March 2025 GMT
এইচএসসি পাস করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে পরীক্ষা দিতে হয়, এ বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না লালমনিরহাটের পাটগ্রামের মো. মিঠু আলমের। তাই এইচএসসি পাসের পর ২০১৩ সালে চাকরির উদ্দেশে ঢাকায় আসেন।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। কারখানায় দাঁড়িয়ে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে শরীরে ব্যথা হতো। মিঠু আলমের মা ছেলের কষ্টের কথা শুনে তাঁকে বাড়িতে ডাকেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেক ঘাত–প্রতিঘাত পেরিয়ে এখন বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে চাকরি করছেন।
আরও পড়ুনশেষে রোল খুঁজতে গিয়ে দেখি প্রথমটাই আমার১০ মার্চ ২০২৫মিঠু আলম বলেন, ‘পোশাক কারাখানায় অমানুষিক পরিশ্রম করার সময় বুঝেছিলাম, পড়াশোনা একটা সহজ কাজ। কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে বাড়ি চলে আসি। আমার দুলাভাই পরামর্শ দেন স্নাতকে ভর্তি হওয়ার। তখন ভর্তির সময় প্রায় শেষ। কারমাইকেল কলেজে ফরম তুলে পরীক্ষা দিয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাই। ভর্তি হওয়ার পর কারমাইকেল কলেজে অধ্যয়নরত আমার এক চাচার কাছ থেকে প্রথম শুনতে পারি, পড়াশোনা করলে ঘুষ ছাড়াও চাকরি হয়। চাকরির জন্য ঘুষ দিতে হয়, এ জন্য কখনো চাকরির চেষ্টা করার কথা ভাবিনি। কারণ, ঘুষ দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। কিন্তু ঘুষ ছাড়াও চাকরি হওয়ার কথা শুনে ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।’
আরও পড়ুন‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ নামে অনুমোদন পেল নতুন বিশ্ববিদ্যালয়১৬ ঘণ্টা আগেএসএসসিতে মানবিক থেকে ৩.
ইংরেজি শেখার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত থেকে উপকৃত হয়েছেন মিঠু আলম। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি শেখাটা নেশায় পরিণত হয়েছিল। তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ভোকাবুলারি নোট করেছিলাম। ইংরেজি শেখা শেষে ব্যাংকের চাকরির জন্য অন্যান্য বিষয় সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা শুরু করি। সব বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া কষ্টকর ছিল। কিন্তু আমি থেমে যাইনি।’
স্নাতক পাসের পর ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সমন্বিত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে পরীক্ষা দেন, কিন্তু প্রথম চাকরির পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন মিঠু আলম। এরপর পড়াশোনা বাড়িয়ে আবার আবেদন শুরু করেন। এখন পর্যন্ত আটটি ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষা দিয়ে দুটিতে সফল হয়েছেন। এর মধ্যে একটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদ এবং অন্যটি সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির ভাইভা দেওয়ার সময় ওয়েটিং রুমে অন্য প্রার্থীদের ভালো ফলের কথা শুনে ভয় পেয়েছিলেন। মিঠু আলম বলেন, ‘ভাইভার আগে সব প্রার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও রেজাল্ট বলে। আমার পাশে বসা স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ও ভালো রেজাল্টধারী প্রার্থীদের দেখে আমার মনে হয়েছিল, আমার চাকরিটা হবে না। আত্মবিশ্বাস একটু কমে গেলেও প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল না। ভাইভা ভালো হয়েছিল। পরীক্ষার চূড়ান্ত রেজাল্ট পেয়ে খুশিতে কান্না চলে এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরির স্বপ্ন হয়তো অনেকের কাছে কিছু না, কিন্তু আমি যে অবস্থা থেকে উঠে এসেছি, এটা আমার জন্য জীবনের বড় পাওয়া।’
যাঁরা চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে মিঠু আলম বলেন, ‘সাধারণত একটি ব্যাংকে ১৫০ থেকে ২০০ জন নেওয়া হয়। চাকরি পেতে হলে জীবনযাপন ও পড়াশোনা সাধারণ প্রার্থীদের মতো হলে আমি ওই ১৫০ জনের তালিকায় জায়গা পাব না। আমাকে এমনভাবে পড়াশোনা করতে হবে, যেন আমার আশপাশের প্রার্থীদের থেকে প্রস্তুতি ও পরিশ্রম বেশি হয়।
আরও পড়ুনদক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা সংস্থায় চাকরি, বেতন ডলারে, আবেদন শেষ বৃহস্পতিবার ১৩ ঘণ্টা আগেতা না হলে সাধারণ প্রার্থীদের মধ্যেই আমাকে আটকে থাকতে হবে। তাই যখন দেখবেন আপনার পরিশ্রম অন্যদের চেয়ে আলাদা, তখন আপনি বুঝতে পারবেন, ওই ১৫০ জনের তালিকায় জায়গা পাবেন।’ এভাবে নিজেই নিজেকে যাচাই করে সফল হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে চাকরি করা মিঠু আলম।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অফ স র চ কর র প পর ক ষ র চ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
গল্প যখন জাহাজের রহস্যময় খুন, তখন সবার আগে মাথায় আসে ১৯৭৮ সালের ‘ডেথ অন দ্য নাইল’-এর কথা। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লাস্ট অব শিলা’ সিনেমাটিও এগিয়ে থাকবে এদিক দিয়ে।
তবে রুথ ওয়ারের উপন্যাসভক্তদের জন্য নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি হতে পারত এমনই এক অভিজ্ঞতা। রুথের উপন্যাস ‘দ্য ওমেন ইন কেবিন ১০’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেটফ্লিক্সে এসেছে একই নামের নতুন সিনেমা। তবে সাইমন স্টোন পরিচালিত সিনেমাটির শুরুটা আশা জাগানিয়া হলেও শেষপর্যন্ত রোমাঞ্চ ধরে রাখতে পারেনি।
লন্ডনের এক খ্যাতিমান অনুসন্ধানী সাংবাদিক লরা ব্ল্যাকলক (কিরা নাইটলি)। তিনি একটি হাইপ্রোফাইল অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করছিলেন। কিন্তু তাঁর সোর্সকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জন্য তিনি কাজে ফিরে এসেও ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি হঠাৎই তিন দিনের সমুদ্রযাত্রার আমন্ত্রণ পান। নরওয়েজীয় এক বিলিয়নিয়ার দম্পতি অ্যান লিংস্টাড (লিসা লোভেন কংসলি) ও তাঁর স্বামী রিচার্ডের (গাই পিয়ার্স) দাতব্য সংস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কাভার করার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। কাজ ও ছুটি কাটানোর এমন দারুণ সুযোগ লুফে নেন লরা।
‘দ্য ওমেন ইন কেবিন ১০’ –এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স