বগুড়ায় হামলার প্রতিবাদে ২২ রুটে বাস চলাচল বন্ধ, শ্রমিকদের মিছিল থেকে আড়তে আগুন
Published: 19th, March 2025 GMT
শ্রমিক নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বগুড়া থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার ২২ রুটে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার সকাল থেকে বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে।
হঠাৎ বাস বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। আজ সকালে রাস্তায় বের হয়ে গন্তব্যের বাস না পেয়ে অটোরিকশা-ভ্যানে রওনা দিতে হয়েছে তাঁদের।
এর আগে গতকাল বগুড়ায় ব্যস্ত সড়কে অটোরিকশা দাঁড় করানো নিয়ে শহরের নারকেল আড়তদারদের সঙ্গে চালকদের বাগ্বিতণ্ডার জেরে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার ওপর হামলা হয়। গতকাল ইফতারের আগে শহরের স্টেশন সড়কে মিতালী পাম্পের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে হামলায় দুই শ্রমিক নেতা আহত হওয়ার জেরে আজ বেলা ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে শহরের স্টেশন সড়কে বেশ কয়েকটি নারকেল আড়তে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে আসেন। তখন বিক্ষুব্ধ মোটর শ্রমিকেরা স্টেশন সড়কে তাঁদের কার্যালয়ের সামনে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেন। সার্ভিসের সদস্যরা নারকেলের আড়তের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের স্টেশন সড়কে নারকেলের বেশ কিছু আড়ত রয়েছে। এসব আড়তের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ অটোরিকশাস্ট্যান্ড। গতকাল আড়তের সামনে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা নিয়ে চালকদের সঙ্গে কয়েকজন আড়তদারের বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি হলে সেখানে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও সদস্য হযরত আলী উপস্থিত হন। তাঁরা দুজন অটোরিকশাচালকদের পক্ষ নেন। এ সময় আড়তদারদের হামলায় ওই দুই নেতাও আহত হন। তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ‘অটোরিকশাচালকদের মারধরের খবর পেয়ে সেখানে গেলে নারকেল ব্যবসায়ী ও তাঁদের সঙ্গে থাকা লোকজন বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হামলা করেন। তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করেন।’
বগুড়া বাস–মিনিবাস–কোচ পরিবহন মালিক সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া-জয়পুরহাট, বগুড়া-নওগাঁ, বগুড়া-দিনাজপুর, বগুড়া-রংপুর, বগুড়া-কুড়িগ্রাম, বগুড়া-লালমনিরহাট, বগুড়া-ঠাকুরগাঁও, বগুড়া-গাইবান্ধা, বগুড়া-ময়মনসিংহ, বগুড়া-পাবনা, বগুড়া-নগরবাড়ী, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ, বগুড়া-বরিশাল, বগুড়া-কুষ্টিয়া, বগুড়া-খুলনা, বগুড়া-নাটোর, বগুড়া-রাজশাহী ছাড়াও অভ্যন্তরীণ কয়েকটি রুটে প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক বাস, মিনিবাস ও দূরপাল্লার কোচ চলাচল করে। আজ সকাল থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুই নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিছিল থেকে নারকেলের আড়তে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে প্রশাসনের বৈঠক চলছে। বৈঠক শেষে বাস চলাচল শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ লকদ র আড়ত র শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
জব্দ করা জাটকা এতিমখানায় বিতরণ, সেই মাছ লুট করলেন আড়তদারেরা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জব্দ করা ৭০ কেজি জাটকা দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছিল। তবে সেই মাছ লুট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আড়তদারের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জাটকা রক্ষার অভিযানে আমিরাবাদ ও দশানী বাজার থেকে ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। পরে আমিরাবাদ এলাকায় জব্দ করা জাটকা উপজেলার হাজীপুর ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় কিছু দুস্থ মানুষকেও কিছু জাটকা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জাটকা নিয়ে ওই দুই মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কমিটির লোকজন সন্ধ্যায় আমিরাবাদের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান। তখন আমিরাবাদ বাজারের মাছের আড়তদার আবুল প্রধান, আরিফ গাজী, সেরু প্রধানিয়া, দেলু বেপারীসহ আরও কয়েকজন তাঁদের পথরোধ করেন এবং জাটকাগুলো লুট করে নিয়ে যান।
হাজীপুর মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, মাছের ওই আড়তদারেরা তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে জাটকা লুট করে নিয়ে যান। বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে আবুল প্রধান, আরিফ গাজী ও সেরু প্রধানিয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দেলু ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, জাটকা লুট করা তাঁদের উচিত হয়নি। ওই জাটকা আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁরা ফেরত দেবেন। এটি তাঁদের বড় ভুল হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। জাটকা উদ্ধারে ব্যবস্থাপনা নেওয়া হচ্ছে।
ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর জাটকা উদ্ধারে তিনি থানার ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতিমদের জাটকা লুট হওয়ার বিষয়টি খুব দুঃখজনক।