আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা আহজাবের ৩১ থেকে সুরা সাবা, সুরা ফাতির ও সুরা ইয়াসিনের ১ থেকে ২১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। ২২তম পারা পড়া হবে। আজকের এই অংশে আল্লাহর প্রশংসা, নবীপত্নী ও নারীদের উপদেশ, রিজিক, মহানবী (সা.) শেষ নবী, নবীজির বহুবিবাহ, সামাজিক শিষ্টাচার, নবীজির প্রতি দরুদ পাঠ, আল্লাহর অনুগ্রহ, দীনের ওপর অবিচল, ইমান ও কুফরের পার্থক্য, উম্মতে মুহাম্মাদির প্রশংসা, গুনাহের কঠোর শাস্তিসহ নানা বিষয়ের বিবরণ রয়েছে।

আজকের তারাবিহর শুরুতে নবী পরিবারের জন্য কিছু উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো সব নারীর জন্যই উপদেশ। এখানে তাঁদের সংযত আচরণ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামের মূল আকিদাগুলো অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও কোরআন তিলাওয়াত এবং হাদিসচর্চা করার উপদেশ দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, এমন ১০টি বিশেষ গুণ আছে, যা মানুষ ধারণ করতে পারলে জীবন সুন্দর হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বিশেষ পুরস্কার যাবে। সুরা আহজাবের ৩৫ নম্বর আয়াতে যে গুণগুলোর উল্লেখ রয়েছে তা হলো— ইসলাম, ঈমান, আল্লাহর আনুগত্য, সত্যবাদিতা, ধৈর্য, নম্রতা, দান-সদকা, রোজা, লজ্জাস্থানের হেফাজত ও বেশি বেশি আল্লাহর জিকির।

আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪

আল্লাহ তাআলা সুরা আহজাবের ৪০ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘মুহাম্মাদ তোমাদের কারও পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।’ পৃথিবীতে আদম (আ.

)-এর মাধ্যমে চালু হওয়া নবুওয়তের ধারা পূর্ণ হয়েছে মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে। তাঁর পরে আর কেউ নবী-রাসুল হবেন না, আর কারও ওপর অহিও নাজিল হবে না। প্রত্যেক মুসলমানের এ বিশ্বাস রাখা ফরজ।

সুরা আহজাবের ৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে তিনটি সামাজিক শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। এক. কারও ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। দুই. কোথাও খাবারের দাওয়াতে গেলে খানা শেষে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। অনর্থক কথাবার্তায় মশগুল হয়ে মেজবানের সময় নষ্ট করা যাবে না। তিন. পর্দা ফরজ—এমন নারীর কাছে কিছু চাইতে হলে, পর্দা বজায় রেখে চাইতে হবে।

 এ সুরার ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি সালাত-দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনেরা, তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ আল্লাহ নবীর প্রতি দরুদ পড়েন—এই একটি মাত্র বাক্য নবীর মর্যাদা ও সম্মানের জন্য যথেষ্ট। এই বাক্যটি প্রমাণ করে নবীর প্রতি দরুদ পাঠের গুরুত্ব কতটুকু। তাঁর নামে দরুদ পড়া ঈমানের অংশ। তাঁর প্রতি সালাম জানানো ইবাদত। নবীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও তাঁকে খুশি করার জন্য দরুদ পাঠের বিকল্প নেই। দরুদ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার দরুদ পাঠ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৩৮৪)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর আকাশভ্রমণ এবং আসহাবে কাহাফের কাহিনি২২ মার্চ ২০২৪

সুরা সাবায় আছে সাবাবাসীর কাহিনি

 মক্কায় অবতীর্ণ সুরা সাবার আয়াত সংখ্যা ৫৪। এটি কোরআনের ৩৪ তম সুরা। এ সুরায় সাবাবাসীর ঘটনা থাকায় এর নাম সুরা সাবা রাখা হয়েছে। এতে আখেরাত ও পুনরুত্থান, দাউদ ও সুলাইমান (আ.) এবং সাবাবাসীকে প্রদত্ত আল্লাহর নেয়ামত, নবীদের কৃতজ্ঞতা আর কওমে সাবার অকৃতজ্ঞতা, তাদের পরিণাম, অবিশ্বাসীদের কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাসের খণ্ডন, রিজিকের মালিক আল্লাহ ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।

প্রাচীন নগরী মাআরিবে সাবা জাতির বসবাস ছিল। ইয়েমেনের সানা থেকে কিছু দূরে এ নগরীর অবস্থান। আল্লাহর নেয়ামতে ভরপুর ছিল সেই জনপদ। তেমন গরম ছিল না, ক্ষুধায় মানুষ অস্থির হতো না। সেখানে ছিল স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও আবহাওয়া, উর্বর জমি। তাদের ছিল দুটি বাগান—একটি ডান দিকে, আরেকটি বাম দিকে। পানি জমা করার জন্য ছিল বিরাট জলাধার। কিন্তু তারা ছিল অকৃতজ্ঞ জাতি। নবীদের মাধ্যমে আল্লাহ তাদের কৃতজ্ঞতা আদায়ের আদেশ দিলেন। কিন্তু তারা অবাধ্য হলো। ফলে বন্যা দিয়ে আল্লাহ তাদের সুন্দর বাগান ধ্বংস করে দিলেন। বাগানে তখন বিস্বাদ ফলমূল হতো। কিছু হতো কুলগাছ। ঝাউগাছে ভরে গিয়েছিল বাগান। আল্লাহ অকৃজ্ঞতার কারণে তাদের এ শাস্তি দিয়েছিলেন। সুরা সাবার ১৫ থেকে ২২ নম্বর আয়াতে সাবাবাসীর প্রতি আল্লাহর এসব নেয়ামত, নবীদের দাওয়াত, তাদের অকৃতজ্ঞতা ও ধ্বংসের বিবরণ রয়েছে।

আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সুরা ফাতির

৪৫ আয়াত বিশিষ্ট সুরা ফাতির মক্কায় অবতীর্ণ। ফাতির আল্লাহর গুণবাচক নামের একটি। এর অর্থ আদি স্রষ্টা। সুরায় আল্লাহর একত্ববাদ, আল্লাহর অমুখাপেক্ষিতা, নেয়ামত ও কুদরতের আলোচনা থাকায় এর নাম ফাতির রাখা হয়েছে। এ সুরায় আছে আল্লাহর একত্ববাদ, সঠিক দীনের ওপর থাকার তাগিদ, আল্লাহর অমুখাপেক্ষিতা, আল্লাহর নেয়ামত, তাঁর কুদরতের বয়ান, কুদরতের নিদর্শন, এগুলোর সুস্পষ্ট দলিল, কোরআন পাঠের ফজিলত, মানুষের শ্রেণিবিন্যাস, জান্নাতবাসী, আল্লাহ গুনাহগারদের তাৎক্ষণিক সাজা দেন না, বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের পার্থক্য, উম্মতি মুহাম্মাদির মর্যাদা, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সহনশীলতা ইত্যাদির বয়ান রয়েছে।

আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪

কোরআনের হৃদয় সুরা ইয়াসিন

কোরআনের ৩৬তম সুরা ইয়াসিন মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৮৩। এ সুরাকে কোরআনের হৃদয় বলেছেন নবীজি (সা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি বস্তুর একটি হৃদয় রয়েছে, আর কোরআনে হৃদয় হচ্ছে ইয়াসিন। যে ইয়াসিন পড়বে আল্লাহ তার আমলনামায় দশবার পূর্ণ কোরআন পড়ার নেকি দান করবেন।’ (তিরমিজি: ২৮৮৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা ইয়াসিন কোরআনের হৃদয়। যে সুরা ইয়াসিন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের কল্যাণ লাভের জন্য পাঠ করবে, তার মাগফেরাত হয়ে যায়। তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য এ সুরা পড়ো।’ (মুসনাদে আহমদ)। আজকের তারাবিহতে সুরা ইয়াসিনের যে অংশ তিলাওয়াত করা হবে, সেখানে নবীকে সত্য রাসুল বলে কোরআনের কসম খেয়ে আল্লাহর ঘোষণা, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীদের আলোচনা ও তাদের দৃষ্টান্তের বিবরণ রয়েছে।

রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম

আরও পড়ুনহজ ও কোরবানির বিধান এবং আল্লাহর পছন্দনীয় বিচারের গল্প২৪ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত দর দ প ঠ র র জন য ক রআন র র আয় ত বল ছ ন ন য় মত উপদ শ

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ