ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান পুতিনের
Published: 20th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ফোনালাপে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা না করার বিষয়ে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরের বেসামরিক নাগরিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টাপাল্টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুই নেতার মধ্যে এ ফোনালাপ হয়। এ সময় ট্রাম্প ৩০ দিনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিলেও পুতিন তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তেলক্ষেত্রসহ জ্বালানি স্থাপনায় হামলা কমানোর বিষয়ে সম্মতি দেন। রাতেই দুই পক্ষই জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায়।
গতকাল বুধবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ফোনালাপে পুতিন বলেন, তিনি জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে সম্মতি জানিয়েছেন। বুধবার ভোরে যেসব হামলা হয়েছে, তাতে তাদের আলোচনা যে ফলপ্রসূ হয়নি, তারই প্রমাণ বহন করে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়াকে যুদ্ধের বাইরে আনার চেষ্টা থেকে যেন বিশ্ব বিরত থাকে। পুতিনের কথা ও কাজের মিল নেই বলে জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক টেলিগ্রামে বলেন, ‘রাশিয়া এখন বেসামরিক স্থাপনা ও লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা সাময়িক বন্ধ রাখতে পুতিনের প্রতিশ্রুতি আদৌ কোনো অর্থ বহন করে না। বরিস পিস্টরিয়াস জার্মান সংবাদমাধ্যম জেডিএফকে বলেন, ‘কথিত গুরুত্বপূর্ণ ও বিরাট ফোনালাপের পর প্রথম রাতেই বেসামরিক স্থাপনায় হামলা হলো। পুতিন আসলে খেলছেন। আমার বিশ্বাস, বিষয়টি বুঝতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।’ উভয় পক্ষই বিপুল সংখ্যক ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
রাশিয়ার দাবি, তারা ইউক্রেনের ৫৭টি ড্রোন অকার্যকর করতে সমর্থ হয়েছে। আর কিয়েভ বলছে, তারা ৭২টি রুশ ড্রোন ধ্বংস করেছে। ইউক্রেনের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুমি এলাকা ও রাজধানী কিয়েভের আশপাশে ড্রোন আঘাত হেনেছে। দক্ষিণে রেলওয়েকে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী স্থাপনায় হামলা হয়েছে। আর রুশ কর্তৃপক্ষ বলছে, দক্ষিণ রাশিয়ায় ইউক্রেন তাদের একটি তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়েছে। ইউক্রেনের সুমি এলাকায় রুশ ড্রোন হামলায় দুটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হননি। পরে রোগী ও স্টাফদের সরিয়ে নেওয়া হয়। কিয়েভে ৬০ বছরের এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপকে ঘিরে সচেতন রয়েছে যুক্তরাজ্যও। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ফোনে তিনি জেলেনস্কিকে যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ফোনে স্টারমার ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার জন্য নির্ধারিত ফোনালাপের আগে পুতিন এক ঘণ্টারও বেশি সময় ট্রাম্পকে অপেক্ষায় রেখেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের একটি ভিডিও। যেখানে তিনি ফোন কলে দেরি করার বিষয়টি হাস্যকরভাবে উড়িয়ে দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানের প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার মস্কোয় শিল্পপতিদের এক বার্ষিক সভায় ব্যস্ত ছিলেন পুতিন। মস্কোর স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চলা ওই অনুষ্ঠানের মাঝেই তাঁকে ফোন কলে দেরি হওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক পর্যায়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপক পুতিনকে জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে নির্ধারিত ফোন কলে দেরি হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।