আদেশ লঙ্ঘন করে ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের বিতাড়ন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে বিচারপতির হুঁশিয়ারি
Published: 20th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভেনেজুয়েলার শত শত অভিবাসীকে বিতাড়নের সিদ্ধান্তের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ লঙ্ঘন করা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন বিচারপতি।
গতকাল বুধবার ওয়াশিংটনভিত্তিক মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জজ জেমস বোসবার্গ বলেন, আদেশ লঙ্ঘন করলে ট্রাম্প প্রশাসনকে ফলাফল ভোগ করতে হতে পারে। তবে তিনি ভেনেজুয়েলার ওই নাগরিকদের বিতাড়িত করার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করতে সরকারকে আরও সময় দিয়েছেন।
সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিকসহ মোট ২৬১ জনকে এল সালভাদরে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। বিচারপতি বোসবার্গ তাঁদের সাময়িকভাবে বিতাড়িত না করার আদেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশ উপেক্ষা করেই তাঁদের বিতাড়িত করা হয়। ভেনেজুয়েলা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কাজের সমালোচনা করেছে।
বিচারকের সাময়িকভাবে দেওয়া আদেশটি ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি করেছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মঙ্গলবার বোসবার্গকে অভিশংসিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এ আহ্বানকে তিরস্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস, যা বিরল ঘটনা।
সাবেক ডেমোক্র্যাট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাতে ফেডারেল বেঞ্চে নিয়োগ পেয়েছিলেন বোসবার্গ। সপ্তাহান্তে ভেনেজুয়েলার শত শত অভিবাসীকে বিতাড়িত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ওপর তিনি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন। ভেনেজুয়েলার ওই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সদস্য।
এ আদেশ সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার বেশ কিছু অভিবাসীকে তিনটি বিমানে এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অভিবাসীদের আটকে রাখা হচ্ছে।
প্রথম দুটি উড়োজাহাজ কখন রওনা করেছে ও অবতরণ করেছে, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বোসবার্গ। তিনি বলেন, এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে এখতিয়ার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। এরপর বোসবার্গ প্রশাসনকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা বাড়িয়ে দেন।
বিচারপতি বোসবার্গ বলেন, তিনি যে কর্তৃত্ব দেখানোর অংশ হিসেবে এমনটা করছেন, তা নয়; বরং সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে আদেশ লঙ্ঘন করেছে কি না, তা নিরূপণ করতে এমনটা করছেন। আর তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে পরিণতি কী হওয়া উচিত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বোসবার্গ। তবে সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি তিনি।
সাবেক কৌঁসুলি বোসবার্গ সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। আর ২০১১ সালে ফেডারেল বেঞ্চে বোসবার্গের নিয়োগ চূড়ান্ত করে মার্কিন সিনেট। ৯৬-০ ভোটে তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হয়।
ভেনেজুয়েলার গ্যাং গোষ্ঠী ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্যদের দ্রুত প্রত্যর্পণে গত শুক্রবার কয়েক শতকের পুরোনো ভিনদেশি শত্রু আইন বা এলিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি যুদ্ধকালীন আইন হিসেবে পরিচিত। পরের দিন শনিবার জেমস বোসবার্গ ১৭৯৮ সালের ওই আইন প্রয়োগ করে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি ১৪ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তাঁর যুক্ত ছিল, এই আইনে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত এমন ‘শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডকে’ বোঝানো হয়েছে, যা ‘যুদ্ধের সমতুল্য’।
নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে ভেনেজুয়েলা। দেশটি বলেছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের অন্যায়ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করছে। (এটি) দাসপ্রথা থেকে শুরু করে নাৎসি বন্দিশিবিরের ভয়াবহ স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে, যা মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্ব হিসেবে পরিচিত।’নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে ভেনেজুয়েলা। এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের অন্যায়ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করছে। (এটি) দাসপ্রথা থেকে শুরু করে নাৎসি বন্দিশিবিরের ভয়াবহ স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে, যা মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্ব হিসেবে পরিচিত।’
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অন্য দেশের অপরাধীদের এল সালভাদরের কারাগারে রাখার জন্য গত মাসে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হয়েছে।
আরও পড়ুনকারাগারে রাখার জন্য ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিককে এল সালভাদরে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র১৬ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ত ড় ত কর ব সব র গ ব চ রপত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।