যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভেনেজুয়েলার শত শত অভিবাসীকে বিতাড়নের সিদ্ধান্তের ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ লঙ্ঘন করা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন বিচারপতি।

গতকাল বুধবার ওয়াশিংটনভিত্তিক মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট জজ জেমস বোসবার্গ বলেন, আদেশ লঙ্ঘন করলে ট্রাম্প প্রশাসনকে ফলাফল ভোগ করতে হতে পারে। তবে তিনি ভেনেজুয়েলার ওই নাগরিকদের বিতাড়িত করার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করতে সরকারকে আরও সময় দিয়েছেন।

সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিকসহ মোট ২৬১ জনকে এল সালভাদরে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। বিচারপতি বোসবার্গ তাঁদের সাময়িকভাবে বিতাড়িত না করার আদেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশ উপেক্ষা করেই তাঁদের বিতাড়িত করা হয়। ভেনেজুয়েলা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কাজের সমালোচনা করেছে।
বিচারকের সাময়িকভাবে দেওয়া আদেশটি ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি করেছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মঙ্গলবার বোসবার্গকে অভিশংসিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর এ আহ্বানকে তিরস্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস, যা বিরল ঘটনা।

সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিকসহ মোট ২৬১ জনকে এল সালভাদরে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। বিচারপতি বোসবার্গ তাঁদের সাময়িকভাবে বিতাড়িত না করার আদেশ দিয়েছিলেন। সে আদেশ উপেক্ষা করেই তাঁদের বিতাড়িত করা হয়। ভেনেজুয়েলা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ট্রাম্প প্রশাসনের ওই কাজের সমালোচনা করেছে।

সাবেক ডেমোক্র্যাট মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাতে ফেডারেল বেঞ্চে নিয়োগ পেয়েছিলেন বোসবার্গ। সপ্তাহান্তে ভেনেজুয়েলার শত শত অভিবাসীকে বিতাড়িত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের ওপর তিনি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন। ভেনেজুয়েলার ওই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সদস্য।

এ আদেশ সত্ত্বেও ভেনেজুয়েলার বেশ কিছু অভিবাসীকে তিনটি বিমানে এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে অভিবাসীদের আটকে রাখা হচ্ছে।

প্রথম দুটি উড়োজাহাজ কখন রওনা করেছে ও অবতরণ করেছে, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বোসবার্গ। তিনি বলেন, এসব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে এখতিয়ার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। এরপর বোসবার্গ প্রশাসনকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা বাড়িয়ে দেন।

বিচারপতি বোসবার্গ বলেন, তিনি যে কর্তৃত্ব দেখানোর অংশ হিসেবে এমনটা করছেন, তা নয়; বরং সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে আদেশ লঙ্ঘন করেছে কি না, তা নিরূপণ করতে এমনটা করছেন। আর তা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে পরিণতি কী হওয়া উচিত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বোসবার্গ। তবে সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি তিনি।

সাবেক কৌঁসুলি বোসবার্গ সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। আর ২০১১ সালে ফেডারেল বেঞ্চে বোসবার্গের নিয়োগ চূড়ান্ত করে মার্কিন সিনেট। ৯৬-০ ভোটে তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হয়।

ভেনেজুয়েলার গ্যাং গোষ্ঠী ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্যদের দ্রুত প্রত্যর্পণে গত শুক্রবার কয়েক শতকের পুরোনো ভিনদেশি শত্রু আইন বা এলিয়েন এনেমিস অ্যাক্ট ব্যবহারের নির্দেশ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি যুদ্ধকালীন আইন হিসেবে পরিচিত। পরের দিন শনিবার জেমস বোসবার্গ ১৭৯৮ সালের ওই আইন প্রয়োগ করে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি ১৪ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তাঁর যুক্ত ছিল, এই আইনে অন্য দেশের দ্বারা সংঘটিত এমন ‘শত্রুতাপূর্ণ কর্মকাণ্ডকে’ বোঝানো হয়েছে, যা ‘যুদ্ধের সমতুল্য’।

নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে ভেনেজুয়েলা। দেশটি বলেছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের অন্যায়ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করছে। (এটি) দাসপ্রথা থেকে শুরু করে নাৎসি বন্দিশিবিরের ভয়াবহ স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে, যা মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্ব হিসেবে পরিচিত।’

নিজ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন আইন প্রয়োগ করায় যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে ভেনেজুয়েলা। এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ‘ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের অন্যায়ভাবে অপরাধী সাব্যস্ত করছে। (এটি) দাসপ্রথা থেকে শুরু করে নাৎসি বন্দিশিবিরের ভয়াবহ স্মৃতিকে উসকে দিয়েছে, যা মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার পর্ব হিসেবে পরিচিত।’

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অন্য দেশের অপরাধীদের এল সালভাদরের কারাগারে রাখার জন্য গত মাসে দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তি হয়েছে।

আরও পড়ুনকারাগারে রাখার জন্য ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিককে এল সালভাদরে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র১৬ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ত ড় ত কর ব সব র গ ব চ রপত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ