নান্দাইলে ইফতার নিয়ে সংঘর্ষের পর পৌর বিএনপির আহ্বায়ককে অব্যাহতি
Published: 20th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহের নান্দাইলে ইফতার অনুষ্ঠানকে ঘিরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর পৌর বিএনপির আহ্বায়ককে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ ভোরে বিএনপির বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি বহিষ্কারাদেশ প্রকাশ করা হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সংঘাত সৃষ্টি ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার কারণে ময়মনসিংহ উত্তর জেলাধীন নান্দাইল পৌর বিএনপির আহবায়ক এ এফ এম আজিজুল ইসলাম ওরফে পিকুলকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। অব্যাহিতপ্রাপ্ত এ এফ এম আজিজুল ইসলামের স্থলে নান্দাইল পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ফকিরকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।’
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গতকাল তাদের (কমিটি বিরোধীদের) সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। ইফতার একটি ধর্মীয় আবেগের বিষয়। রাজনীতি ও কমিটি নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু ইফতার নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে না। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ককে যেহেতু কলেজ কর্তৃপক্ষ ইফতার অনুষ্ঠান করতে লিখিতভাবে অনুমতি দিয়েছে, সে জায়গায় একই দলের আরেকজন ইফতার আয়োজন করবে, এটি অযৌক্তিক। বিষয়টি আমরা আমাদের বিভাগীয় টিমকে জানালে তারা সবার সঙ্গে কথা বলে দলীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া আজিজুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আদৌ জানি না, আমি দলে কী বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছি।’ গতকালের ঘটনায় আপনাকে দায়ী করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ওই প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিলেন। বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল কমিটিতে রিক্রুট হওয়া নব্য আওয়ামী-বিএনপি। তারা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সামনে যখন অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে, তখন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা তা সহ্য করেননি। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ অব্যাহতির বিষয়ে তিনি দলের কাছে আপিল করবেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নান্দাইল উপজেলা ও পৌর শাখা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করে জেলা উত্তর বিএনপি। ১০২ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ইয়াসের খান চৌধুরীকে। পৌর বিএনপির কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় সাবেক পৌর মেয়র এ এফ এম আজিজুল ইসলামকে।
গতকাল বুধবার নান্দাইল পৌর এলাকার শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। অপর দিকে ওই স্থানেই পাল্টা ইফতার মাহফিল আয়োজনের কথা জানায় স্থানীয় বিএনপির পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীদের একটি পক্ষ। গতকাল দুপুরের পর থেকে নতুন বাজার এলাকায় দুটি পক্ষই অবস্থান নেয় এবং বিকেল চারটার পর তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই কলেজ ও আশপাশের এলাকায় রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আজ জ ল ইসল ম অব য হ উপজ ল ইফত র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিক্ষোভ করেছেন যমুনা অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মিলগেট এলাকায় প্রথমে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে পরে আঞ্চলিক সড়কে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে তাঁদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলা হলে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গীর যমুনা অ্যাপারেলস কারখানায় ২২ এপ্রিল বিশৃঙ্খলাসহ নানা অভিযোগে কারখানার ১১৪ শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ। শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের সব পাওনা পরিশোধও করা হয়। শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২৬ এপ্রিল কারখানা খুলে দেওয়া হলে সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। এরপর ওই দিন চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা। এর পর থেকে শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে কারখানা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
আজ সকালে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও ছাঁটাই করা শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। প্রথমে তাঁরা ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। পরে তাঁরা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিল্প পুলিশ, থানা–পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ধাওয়া ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, ১০ দিন আগে কারখানার কোয়ালিটি সেকশনের শ্রমিক মো. হুমায়ুন দুই দিনের ছুটি চেয়েছিলেন। ছুটি না পেয়ে হুমায়ুন নিজেই অনুপস্থিত থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান এবং হুমায়ুনকে মারধর ও গুম করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে হুমায়ুনকে কারখানার নিচতলার গুদামঘরের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। চার ঘণ্টা পর হুমায়ুন মুঠোফোনে সহকর্মীদের খবর দিলে তাঁরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১১৪ শ্রমিককে ছাঁটাই করে। শ্রমিক ছাঁটাই, গুমের হুমকি ও বহিরাগতদের দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এ সময় কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।