ময়মনসিংহের নান্দাইলে ইফতার অনুষ্ঠানকে ঘিরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর পৌর বিএনপির আহ্বায়ককে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ ভোরে বিএনপির বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি বহিষ্কারাদেশ প্রকাশ করা হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সংঘাত সৃষ্টি ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার কারণে ময়মনসিংহ উত্তর জেলাধীন নান্দাইল পৌর বিএনপির আহবায়ক এ এফ এম আজিজুল ইসলাম ওরফে পিকুলকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। অব্যাহিতপ্রাপ্ত এ এফ এম আজিজুল ইসলামের স্থলে নান্দাইল পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ফকিরকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।’

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন হওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গতকাল তাদের (কমিটি বিরোধীদের) সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। ইফতার একটি ধর্মীয় আবেগের বিষয়। রাজনীতি ও কমিটি নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু ইফতার নিয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে না। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ককে যেহেতু কলেজ কর্তৃপক্ষ ইফতার অনুষ্ঠান করতে লিখিতভাবে অনুমতি দিয়েছে, সে জায়গায় একই দলের আরেকজন ইফতার আয়োজন করবে, এটি অযৌক্তিক। বিষয়টি আমরা আমাদের বিভাগীয় টিমকে জানালে তারা সবার সঙ্গে কথা বলে দলীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া আজিজুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আদৌ জানি না, আমি দলে কী বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছি।’ গতকালের ঘটনায় আপনাকে দায়ী করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ওই প্রোগ্রামের আয়োজন করেছিলেন। বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিল কমিটিতে রিক্রুট হওয়া নব্য আওয়ামী-বিএনপি। তারা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সামনে যখন অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে, তখন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা তা সহ্য করেননি। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ অব্যাহতির বিষয়ে তিনি দলের কাছে আপিল করবেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নান্দাইল উপজেলা ও পৌর শাখা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করে জেলা উত্তর বিএনপি। ১০২ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ইয়াসের খান চৌধুরীকে। পৌর বিএনপির কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় সাবেক পৌর মেয়র এ এফ এম আজিজুল ইসলামকে।

গতকাল বুধবার নান্দাইল পৌর এলাকার শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ মাঠে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। অপর দিকে ওই স্থানেই পাল্টা ইফতার মাহফিল আয়োজনের কথা জানায় স্থানীয় বিএনপির পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীদের একটি পক্ষ। গতকাল দুপুরের পর থেকে নতুন বাজার এলাকায় দুটি পক্ষই অবস্থান নেয় এবং বিকেল চারটার পর তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই কলেজ ও আশপাশের এলাকায় রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আজ জ ল ইসল ম অব য হ উপজ ল ইফত র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক

জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।

গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’

২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।

থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১০ শ্রমিক আহত
  • ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে উচ্ছেদ হচ্ছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
  • ময়মনসিংহে ময়লা ছিটিয়ে টাকা ছিনতাই, দুই বছর পর ঢাকা থেকে আসামি গ্রেপ্তার
  • সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত, ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহের সেই মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল, অপসারণের উদ্যোগ
  • ময়মনসিংহে বন্ধুর বাড়িতে যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ
  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস