বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মিথ‌্যা তথ‌্য দি‌য়ে চাকরি ও সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে চাপ দিয়ে ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগে সা‌বেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরু‌দ্ধে পৃথক দু‌টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা সংস্থাটির উপপরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক মামলা দু‌টি দা‌য়ের ক‌রেন। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুদক মহাপরিচালক মো.

আক্তার হোসেন বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, পুতুল এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালকের দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন। পুতুলকে তার পদ থেকে অপসারণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে দুদক।

প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ওরফে সায়মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষকতা বা শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি বা রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশ না নিয়েও নিজেকে এই কাজে সম্পর্কিত মর্মে মিথ্যা দাবি করে ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আবেদন করেন। পরবর্তী সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়ে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে ২০১৭ সালে অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যাবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন নিযুক্ত হন সায়মা ওয়াজেদ। ওই পদে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দাখিল করা সিভিতে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পুতুল লেখেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, অটিজম এবং মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। এসব দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা উল্লেখ করায় আসামির সিভিসমৃদ্ধ হয়, যার ফলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগের পথ সুগম হয়। পুতুল দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন কি-না তা যাচাইয়ের জন্য দুদ‌কের পক্ষ থে‌কে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বরাবর চিঠি পাঠিয়ে জানা যায় হাসপাতালটিতে পুতুল-অনানারি স্পেশালিস্ট/এক্সপার্ট হিসেবে শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি অথবা রিভিউ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দাখিল করা সিভিতে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা উল্লেখপূর্বক আবেদন ও নিয়োগ লাভ করেছেন সায়মা ওয়াজেদ।

দ্বিতীয় মামলার এজাহা‌রে বলা হয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকের সিএসআর খাত থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ৩৩ কোটি টাকা সহায়তার নামে আদায় করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

এতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ২০টি ব্যাংক থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে মোট ৩৩ কোটি টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-এর ৫(২) ধারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের গত জানুয়ারি একটি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে এনফোর্সমেন্ট টিম কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সূচনা ফাউন্ডেশনের নিবন্ধিত কার্যালয় যার ঠিকানা: বাড়ি নং-৫৪, রোড নং-৫ (পুরাতন) ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকায় অফিসটির অস্তিত্ব নেই।

অনুসন্ধানকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচনা ফাউন্ডেশন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, ঢাকার রেজি: নং-ঢ-০৯১২২ মূলে নিবন্ধিত। ২০১৪ সালে ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে চেয়ারম্যান করে দুই বছরের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয় যা মেয়াদান্তে সাধারণ সভার মাধ্যমে নবায়ন ও পুনর্গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে ২০১৭ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা নিরসনে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির কার্যাবলি সম্পাদনে সহায়তা, কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়নে পরামর্শ প্রদানের নিমিত্ত গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

আসামি সায়মা ওয়াজেদ ও অপর আসামি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে টাকা দিতে চাপ প্রদানের জন্য সময়ে সময়ে পত্ৰ প্ৰদান করে। এর প্রেক্ষিতে, ২০১৭ সালের মে মাসে ১৭টি ব্যাংক বাধ্য হয়ে তাদের সিএসআর খাত থেকে মোট ২১ কোটি টাকা প্রদান করে এবং এ প্রক্রিয়ায় মোট ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে প্রদানের জন্য বাধ্য করা হয়।

চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করে আদায়কৃত ওই অর্থ পরবর্তীতে কীভাবে কোন খাতে খরচ হয়েছে সেটি জানার জন্য সূচনা ফাউন্ডেশনের ঠিকানায় অনুসন্ধানকালে পত্র প্রদান করা হলেও কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি তাই উক্ত অর্থ উত্তোলনপূর্বক/বিভিন্ন ভুয়া রেকর্ডপত্র সৃজনপূর্বক আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ৩৩ ক ট পর চ ল কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন

সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বুধবার সকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন।

এর ফলে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই সুবিধা পাবেন। রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইব্রাহিম খলিল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারি চাকরিজীবীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। সংক্ষুব্ধ চাকরিজীবীদের এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

পরিপত্রে যা বলা হয়েছে
২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এক পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, একই পদে কর্মরত কোনো সরকারি কর্মচারী দুই বা তার চেয়ে বেশি টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে থাকলে নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী তিনি উচ্চতর গ্রেড পাবেন না। তবে ইতোমধ্যে একটিমাত্র টাইম স্কেল অথবা সিলেকশন গ্রেড পেলে নতুন স্কেলে শুধু একটি উচ্চতর গ্রেড পাবেন।

পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারীদের প্রদত্ত এসব আর্থিক সুবিধা কোনোক্রমেই ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের আগে দেওয়া হবে না। পরবর্তী সময়ে পরিপত্রের এ আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সংক্ষুব্ধ সরকারি চাকরিজীবীরা।

মূল পে-স্কেলে যা বলা আছে
সরকারি চাকরিতে নিচের স্তরের কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ সীমিত। এসব পদোন্নতিবঞ্চিতদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বহুল আলোচিত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের পুরোনো প্রথা বাতিল করে। একইসঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেড প্রথা প্রবর্তন করে। নতুন স্কেল অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী একই পদে ১০ বছর চাকরি করার পর পদোন্নতি না পেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুটি উচ্চতর গ্রেড পাবেন। এরমধ্যে একটি পাবেন চাকরির ১০ বছর পর (১১তম বছরে)। আর অপরটি ১৬ বছর পর অর্থাৎ ১৭তম বছরে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূল পে-স্কেলে এ বিধান করা হলেও এ সুবিধা কীভাবে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে কোনো দিক-নির্দেশনা ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে মূল পে-স্কেলে উল্লেখিত নিয়ম কার্যকর করতে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। মূল পে-স্কেল কার্যকর হওয়ার ৩ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে এটি জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন