বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মিথ্যা তথ্যে চাকরি: পুতুলের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা
Published: 20th, March 2025 GMT
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরি ও সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে চাপ দিয়ে ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা সংস্থাটির উপপরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক মামলা দুটি দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুদক মহাপরিচালক মো.
জানা যায়, পুতুল এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। পুতুলকে তার পদ থেকে অপসারণের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে দুদক।
প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ওরফে সায়মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) শিক্ষকতা বা শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি বা রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশ না নিয়েও নিজেকে এই কাজে সম্পর্কিত মর্মে মিথ্যা দাবি করে ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় আবেদন করেন। পরবর্তী সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়ে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মাধ্যমে ২০১৭ সালে অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যাবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন নিযুক্ত হন সায়মা ওয়াজেদ। ওই পদে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দাখিল করা সিভিতে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে পুতুল লেখেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল রিভিউ সম্পর্কিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, অটিজম এবং মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত কারিগরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। এসব দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা উল্লেখ করায় আসামির সিভিসমৃদ্ধ হয়, যার ফলে আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগের পথ সুগম হয়। পুতুল দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন কি-না তা যাচাইয়ের জন্য দুদকের পক্ষ থেকে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বরাবর চিঠি পাঠিয়ে জানা যায় হাসপাতালটিতে পুতুল-অনানারি স্পেশালিস্ট/এক্সপার্ট হিসেবে শিক্ষকতা/শিক্ষা ম্যানুয়েল তৈরি অথবা রিভিউ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় দাখিল করা সিভিতে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া যোগ্যতা উল্লেখপূর্বক আবেদন ও নিয়োগ লাভ করেছেন সায়মা ওয়াজেদ।
দ্বিতীয় মামলার এজাহারে বলা হয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকের সিএসআর খাত থেকে সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ৩৩ কোটি টাকা সহায়তার নামে আদায় করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
এতে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ২০টি ব্যাংক থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে মোট ৩৩ কোটি টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-এর ৫(২) ধারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
সূচনা ফাউন্ডেশনের সভাপতিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের গত জানুয়ারি একটি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে এনফোর্সমেন্ট টিম কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সূচনা ফাউন্ডেশনের নিবন্ধিত কার্যালয় যার ঠিকানা: বাড়ি নং-৫৪, রোড নং-৫ (পুরাতন) ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকায় অফিসটির অস্তিত্ব নেই।
অনুসন্ধানকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচনা ফাউন্ডেশন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, ঢাকার রেজি: নং-ঢ-০৯১২২ মূলে নিবন্ধিত। ২০১৪ সালে ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সভার গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে চেয়ারম্যান করে দুই বছরের জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয় যা মেয়াদান্তে সাধারণ সভার মাধ্যমে নবায়ন ও পুনর্গঠন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে ২০১৭ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা নিরসনে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির কার্যাবলি সম্পাদনে সহায়তা, কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়নে পরামর্শ প্রদানের নিমিত্ত গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
আসামি সায়মা ওয়াজেদ ও অপর আসামি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসভুক্ত ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে টাকা দিতে চাপ প্রদানের জন্য সময়ে সময়ে পত্ৰ প্ৰদান করে। এর প্রেক্ষিতে, ২০১৭ সালের মে মাসে ১৭টি ব্যাংক বাধ্য হয়ে তাদের সিএসআর খাত থেকে মোট ২১ কোটি টাকা প্রদান করে এবং এ প্রক্রিয়ায় মোট ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুকূলে প্রদানের জন্য বাধ্য করা হয়।
চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাধ্য করে আদায়কৃত ওই অর্থ পরবর্তীতে কীভাবে কোন খাতে খরচ হয়েছে সেটি জানার জন্য সূচনা ফাউন্ডেশনের ঠিকানায় অনুসন্ধানকালে পত্র প্রদান করা হলেও কোনো রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি তাই উক্ত অর্থ উত্তোলনপূর্বক/বিভিন্ন ভুয়া রেকর্ডপত্র সৃজনপূর্বক আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ৩৩ ক ট পর চ ল কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জেমাইমার কান্নার ম্যাচে টুপটাপ ভাঙল রেকর্ডও
নাবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৮ রান তাড়া করতে নেমে ভারত জয় তুলে নেয় ৯ বল হাতে রেখে। নারী বিশ্বকাপে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু রেকর্ড হয়েছে এ ম্যাচে। আসুন, দেখে নিই।৩৩৯
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান তাড়ায় ভারতের লক্ষ্য। নারী বিশ্বকাপে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের বিশ্ব রেকর্ড। এবারের নারী বিশ্বকাপের বিশাখাপত্তনমে ভারতের দেওয়া ৩৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই রেকর্ড ভেঙে গতকাল রাতে নতুন রেকর্ড গড়েছে ভারত। মেয়েদের ওয়ানডেতে এর আগে সর্বোচ্চ ২৬৪ রান তাড়া করে জিতেছে ভারত। তবে মেয়েদের বিশ্বকাপে ভারত এর আগে কখনো ন্যূনতম ২০০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি।
১৫নারী বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার টানা ম্যাচ জয়সংখ্যা। গতকাল রাতে হারের আগে সর্বশেষ ২০১৭ নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই ভারতের বিপক্ষেই হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। নারী বিশ্বকাপে এটা যৌথভাবে টানা সর্বোচ্চ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটিও ছিল অস্ট্রেলিয়ার (১৯৯৩-২০০০)।
৬৭৯ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট রান। নারী বিশ্বকাপে দুই দলের ইনিংস মিলিয়ে এটাই সর্বোচ্চ রানের ম্যাচ। ২০১৭ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ম্যাচে উঠেছিল ৬৭৮ রান।
আরও পড়ুনচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে ফাইনালে ভারত১১ ঘণ্টা আগে৩ছেলে ও মেয়েদের ওয়ানডে মিলিয়ে নকআউট ম্যাচে ৩০০–এর বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের নজির। আগের দুবার এই নজির গড়েছে ভারতের ছেলেদের ক্রিকেট দল। ১৯৯৮ সালে ইনডিপেনডেন্স কাপের তৃতীয় ফাইনালে পাকিস্তানের ৩১৪ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ইংল্যান্ডের ৩২৫ রান তাড়া করে জেতে ভারত।
১২৭*নারী ওয়ানডেতে রান তাড়ায় ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, যেটা গতকাল রাতে খেলেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। গত মাসে দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২৫ রানের ইনিংস খেলেন স্মৃতি মান্ধানা।
৭৭ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করতে অস্ট্রেলিয়ার ফোবে লিচফিল্ডের খেলা বলসংখ্যা। মেয়েদের ওয়ানডেতে নকআউট ম্যাচে এটা দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯০ বলে সেঞ্চুরি করেন হারমানপ্রীত কৌর। ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের ন্যাট শিভার-ব্রান্টও ৯০ বলে সেঞ্চুরি করেন।
০২০২৫ সালে মেয়েদের এই বিশ্বকাপ ফাইনালই প্রথম ফাইনাল যেখানে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মধ্যে কাউকে দেখা যাবে না। আগের সব কটি বিশ্বকাপের ফাইনালেই এই দুই দলের মধ্যে কেউ না কেউ ছিল।
আরও পড়ুনবোলাররা ভাসান, ব্যাটসম্যানেরা ডোবান—আজ কী করবে বাংলাদেশ৩ ঘণ্টা আগে