সমাজে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হচ্ছে না
Published: 21st, March 2025 GMT
সরকার যা বলে আর যা করে, তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে সুবোধ ও সুচিন্তিত সরকারের পক্ষেও সমাজে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। গণতন্ত্রের অভাবে যারা বিপন্ন ছিল, তাদের বিপন্নতা এখনও দূর হয়নি। তাদের মনের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ আসেনি। এসব মন্তব্য করেছেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড.
গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংলাপে তিনি বলেছেন, অনেকে এখন নৈতিকতার খবরদারির দায়িত্ব নিয়েছেন। এদের সংখ্যা বেশি নয়, কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এই কণ্ঠস্বর মোকাবিলা করতে উদারনৈতিক বহুত্ববাদী সমাজের পক্ষের মানুষকে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি নিরাপদে থাকব ঘরে আর আমার পক্ষে মানুষ পরিবর্তন করে দেবে কিংবা আবার ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করবে– মনে করা বোকামি। প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য।
‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শিরোনামের সংলাপ রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডি।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার প্রমুখ। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে সাড়ে ৩ কোটি যুবক ভোট দিতে পারেনি। তারা এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে কিনা, ভোট দেওয়ার পর নিরাপদ থাকতে পারবে কিনা, সে আলোচনা খুব একটা দেখা যায় না। নির্বাচনের ইশতেহার নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। ইশতেহারে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আলাদা করে প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। যে দলের ইশতেহার এ রকম প্রতিশ্রুতি থাকবে না, তা গ্রহণ করা হবে না। অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও টেকসই সমাজ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
বৈষম্য পরিস্থিতি নিয়ে ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, দেশে সবচেয়ে বড় আন্দোলন হলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। কিন্তু সব বৈষম্যের কথা বলা হয় না। কোনো বৈষম্যের কথা বলা হয়, কোনো বৈষম্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। নারী ও পুরুষের বৈষম্যের কথায় লিঙ্গবৈচিত্র্যের কথা বলা হয় না। জাতীয়তার প্রশ্নে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা তাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির কথা হয় না। যখন নতুন করে জাতীয় সত্তার অনুসন্ধান চলছে, তখনও বহুত্ব বা বহু ধরনের মানুষ নিয়ে যে বাংলাদেশ, সে কথা তেমন করে উচ্চারিত হয় না।
লামিয়া মোরশেদ বলেন, বিগত দিনে এসডিজি কার্যক্রমে রাজধানীর বাইরে তেমন অংশগ্রহণ ছিল না। সরকারি পর্যায়ে তা সীমাবদ্ধ ছিল। আগস্ট বিপ্লব অংশীদারিত্বমূলক উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক সুযোগ করে দিয়েছে। অন্তর্ভুক্তি টেকসই উন্নয়নের এ সুযোগ হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না।
সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনীতি এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের মতো বড় দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি এবং রাজনীতি প্রয়োজন। শান্তিপূর্ণ এবং অগ্রগতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাঁর দেশ বাংলাদেশের সহায়তায় অতীতের মতো পাশে থাকবে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী শহীদ উজ জামান, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে
একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।
এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।
আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।
সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়