ঘর বেচে কেনা হয়েছিল কম্পিউটার, এখন কোটি টাকার মালিক ফ্রিল্যান্সার রায়হান
Published: 21st, March 2025 GMT
অভাব এতই প্রকট ছিল যে রাবার দিয়ে মুছে খাতার একটি পৃষ্ঠায় তিনবার লিখতে হয়েছে। অনেক বেলায় পেটে ভাত জোটেনি। পড়াশোনা চালিয়েছেন টিউশনি করে। তবু দারিদ্র্যের কাছে হার মানেননি। একটি কম্পিউটার কিনতে চাওয়ায় বাবাকে বেচতে হয়েছে তিন বসতঘরের একটি। মা বিক্রি করেছেন ছাগল। সেই কম্পিউটারের বদৌলতে এখন বহুতল বাড়ি, চার চাকার গাড়ি, গরুর খামার আর কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রায়হান মিয়া।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পারেরহাট গ্রামে নিভৃত পল্লিতে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের (তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মুক্ত পেশাজীবী) কাজ করেন রায়হান মিয়া (৩২)। পাশাপাশি নিজের আইটি প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখিয়ে পথ দেখাচ্ছেন এলাকার বেকার তরুণদের। যাঁদের কাছে তিনি এখন অনুপ্রেরণা। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা স্বীকৃতিও পেয়েছেন।
রায়হানের কর্মকাণ্ড একজন ‘জনসেবকের’ মতো বলে মনে করেন পারেরহাট গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, বেকার শিক্ষিত যুবকদের স্বাবলম্বী করতে রায়হান গ্রামে গড়ে তুলেছেন সাদিয়া আইটি ফার্ম। সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ শিখিয়ে যুবকদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন। তিনি এখন শত যুবকের স্বপ্ন দেখার চোখ।
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন তাঁকে প্রথম ৪৮০ ডলারের একটি কাজ দেন। সময়মতো কাজটি শেষ করায় ১০০ ডলার বকশিশও পান। এরপর শুধুই সফলতার গল্প।দারিদ্র্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠা
রংপুর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে বিনোদনকেন্দ্র ‘ভিন্নজগৎ’ পার হতেই পারেরহাট গ্রাম। পাকা সড়ক ধরে গ্রামে প্রবেশের মুখেই রায়হান মিয়ার বাড়ি। তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন রায়হান। নিচতলায় করেছেন মাদ্রাসা। তৃতীয় তলায় সাজানো-গোছানো আইটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে কাজ করেন রায়হানের বেতনভুক কর্মীরা। কেউ কেউ সেখানে আসেন শেখার জন্য। বাড়ির ১০০ গজ দক্ষিণে গড়ে তুলেছেন গাভির খামার।
নিজের প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন রায়হান। ১৯৯২ সালে অভাবী পরিবারে জন্ম রায়হানের। ছয় ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ভালো পোশাক তো দূরের কথা, সন্তানদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতেন বাবা অলিয়ার রহমান। প্রায়ই তাঁকে না খেয়ে স্কুলে যেতে হতো। এভাবে কিশোরগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের কারিগরি শাখা থেকে ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করেন। ওই বছর ভর্তি হন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগে। থাকতেন একটি ছাত্রাবাসে।
রায়হান জানান, ঢাকায় গিয়ে টিউশনি শুরু করেন। তা দিয়ে অতি কষ্টে লেখাপড়া চলত। বাড়ি থেকে টাকা দিতে না পারায় কোনো কোনো দিন দুপুরের খাবার খাওয়া হতো না। হেঁটেই যাতায়াত করতেন।
ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে এখন আয় তাঁর পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া ফাইবারে লেভেল ওয়ান সেলার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ছাড়াও সরাসরি বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানে তাঁর অধীনে কাজ করেন ১৫ জন বেতনভুক্ত কর্মী।মা বেচেন ছাগল, বাবা ঘর
অভাবের মধ্যে বেড়ে উঠতে উঠতে রায়হান কিছু একটা করার চেষ্টা করতে থাকেন। তখন সাতক্ষীরার এক বন্ধু তাঁকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা বলেন। একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্প রায়হানের ভাবনার জগতে নাড়া দেয়। রাজধানীর ভাষানটেকের একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে তাঁর ফ্রিল্যান্সিংয়ের হাতেখড়ি। ২০১০ সালে তিনি গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর ছয় মাসের কোর্স করেন।
রায়হান মিয়া বলেন, কাজ শেখার পরও কম্পিউটারের অভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। ২০১১ সালে ডিপ্লোমা শেষ করে গ্রামে চলে আসেন। কম্পিউটার কেনার কথা জানানোর পর মা ময়না বেগম নিজের দুটি ছাগল বেচে ছেলেকে ছয় হাজার টাকা দেন। বাবা বাড়ির তিনটি টিনের ঘরের মধ্যে একটি বসতঘর বিক্রি করে দেন আরও ২০ হাজার টাকা। সেই টাকায় একটি পুরোনো কম্পিউটার কেনেন। আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া-নেওয়ার কয়েকটি ওয়েবসাইটে (অনলাইন মার্কেট প্লেস) যুক্ত হন।
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একজন তাঁকে প্রথম ৪৮০ ডলারের একটি কাজ দেন। সময়মতো কাজটি শেষ করায় ১০০ ডলার বকশিশও পান। এরপর শুধুই সফলতার গল্প। রায়হান জানান, তিনি এখন অনলাইন মার্কেট প্লেস আপওয়ার্কে টপ রেটেড প্লাস ফ্রিল্যান্সার। শুধু আপওয়ার্ক থেকে তাঁর কয়েক কোটি পেরিয়েছে। তাঁর গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের কোম্পানি। ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে এখন আয় তাঁর পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া ফাইবারে লেভেল ওয়ান সেলার হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি ইউটিউব ও ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ছাড়াও সরাসরি বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানে তাঁর অধীনে কাজ করেন ১৫ জন বেতনভুক্ত কর্মী।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি দুটি পুকুরে ছয় বছর ধরে বিভিন্ন মাছ চাষ করছেন। খামারে বিদেশি জাতের গাভি আছে ৩৫টি। জমি কিনে তিনতলা পাকা বাড়ি করেছেন, কিনেছেন দুই একর আবাদি জমি। রংপুর শহরেও বাড়ি করেছেন, আছে প্রাইভেট কার।
রায়হানের পথ ধরে অন্যরাও সফল
রায়হান শুধু নিজেই সফল হয়ে বসে থাকেননি; ২০১৮ সালে গ্রামের তরুণ-যুবকদের ফ্রিল্যান্সিং শেখানো শুরু করেন। প্রথমে কেউ সাড়া দেননি; কিন্তু রায়হানের সাফল্য দেখে ধীরে ধীরে অনেকেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন। রায়হান তাঁদের বিনা পারিশ্রমিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখানো শুরু করেন।
রায়হানের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পারেরহাট গ্রামের অনেক তরুণ-যুবকই সচ্ছল হয়েছেন। আহসান হাবীব, মারজান হোসেন, রাতুল ইসলাম, হাসান রাজা, সাকিব হোসেনদের মাসিক আয় এখন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
গ্রামের তরুণ রিপন হোসেন ২০১৭ সালে এইচএসসি পাসের পর চাকরির পেছনে ছুটে বেড়িয়েছেন চার বছর। মাঝখানে ছোটখাটো ব্যবসা করেও সুবিধা হয়নি। ২০২১ সালে রায়হানের কাছে ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। এখন তাঁর মাসিক আয় দেড় লাখ টাকা। রিপন মিয়া বলেন, ‘রায়হান স্যারের প্রশিক্ষণ ও প্রেরণা আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।’
আরও বড় স্বপ্ন রায়হানের
সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে রায়হান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড’ পান। এ ছাড়া জেলাভিত্তিক সেরা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ২০২৩ সালে জুলাইয়ে ‘রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। ২০১২ সালে রুমানা আক্তারকে বিয়ে করেন রায়হান। এই দম্পতির তিন সন্তান।
কিশোরগঞ্জ বহুমুখী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, রায়হান ফ্রিল্যান্সিং করে সহায়সম্পত্তি, জমি, গাড়ি করেছেন; কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে সেই আগের মানুষটিই আছেন। রংপুর শহরে বাসা থাকার পরও তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন গ্রামে। শিক্ষিত যুবকদের দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ।
রায়হানের বাবা অলিয়ার রহমান বলেন, ‘একদিন সমাজে কোনো পরিচয় ছিল না। মাথা নিচু করে চলতে হতো। আজ সফল ছেলের বাবা হিসেবে গর্ববোধ করি।’
নিজের পরিশ্রম আর চেষ্টায় এত দূর এসেছেন উল্লেখ করে রায়হান বলেন, ‘আমি চাই আরও তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সফল হতে সাহায্য করতে। আমার স্বপ্ন, বাংলাদেশে আরও বেশি মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ে এগিয়ে আসুক এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে নিজেরা সচ্ছল হোক।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক জ কর ন য বকদ র কর ছ ন র একট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। পানিতে ডুবে যাওয়ার পর উদ্ধারে ধীরগতি, প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ কিছু বিষয় উঠে এসেছে প্রাথমিক প্রতিবেদনে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্য, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী শারীরিক শিক্ষা বিভাগের নিয়মানুযায়ী হলগুলোর সাঁতারু দলের জন্য একজন প্রশিক্ষক বাধ্যতামূলক। সব হলে একজন করে ক্রীড়া প্রশিক্ষকের পদ থাকলেও সায়মার হলে (মন্নুজান হল) পদটি ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া সায়মা সাঁতার দলের সদস্য ছিল না। তবু তিনি সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ঘটনার দিন আরও দুটি হলের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ছিল। সেই হল দুটির প্রশিক্ষকেরা সুইমিংপুলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই সাঁতার অনুশীলন করছিলেন সায়মাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই সবাই সাঁতার কাটলেও সবার অগোচরে হঠাৎ ডুবে যান সায়মা। বিষয়টি টের পাওয়ার পর তাঁকে পুল থেকে ওপরে তুলতে সময় লেগেছে ২০ মিনিটের বেশি। বাইরে থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সায়মাকে পুল থেকে উদ্ধার করেন প্রশিক্ষকেরা। ওপরে তুলে তাঁর বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুখ দিয়ে পানির সঙ্গে খাবার বের হচ্ছিল।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে সেখান থেকে রওনা করা অ্যাম্বুলেন্সে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। জরুরি বিভাগে থাকা সিলিন্ডারেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল না। সেটি বদলে গাড়ি প্রস্তুত করে রওনা দিতে আট মিনিট সময় লেগেছে। একটি সিলিন্ডারে কতটুকু অক্সিজেন আছে বা নেই, সে সম্পর্কে কর্তব্যরত নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও চর্চা না থাকায় সেখানেও সময় নষ্ট হয়। তবে সায়মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অনেক বেশি চেষ্টা ছিল।
সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সায়মার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। এর জন্য তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতেন তিনি।’
প্রতিবেদনে সুপারিশের বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রশিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী সাঁতার কাটার সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও প্রায় ২০ মিনিট পর তাঁর বিষয়টি নজরে আসা প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। দুজন প্রশিক্ষক বসে নিজেরা গল্প করছিলেন। ওনারা যদি এটা না করতেন, হয়তো তাঁদের দৃষ্টিতে মেয়েটি থাকতেও পারত। তাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রশিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে। সুইমিংপুল তদারকির জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে কর্মরতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে একটি প্রশ্ন করাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন ও অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। শিক্ষার্থীদের দাবি, সিনেট ভবনে ওই শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দিয়ে হেনস্তা করেন ওই কর্মকর্তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকই বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মা হোসাইনের মৃত্যুতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ও ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের আশ্বাসে সেদিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা গত তিন দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্যারিস রোডে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। গতকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের কথা থাকলেও করা হয়নি। এ জন্য আজ দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।