Samakal:
2025-05-01@11:44:01 GMT

ফলেন পরিচয়তে

Published: 21st, March 2025 GMT

ফলেন পরিচয়তে

সমগ্র দেশে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দকৃত বনের জমি পুনরুদ্ধারপূর্বক তথায় পুনর্বনায়নের যে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণ করিয়াছে, উহাকে আমরা স্বাগত জানাই। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতোমধ্যে একাধিক সরকারি সংস্থার নামে থাকা প্রাকৃতিক বনের ৮৭৫ একর জমির বরাদ্দ বাতিল করা হইয়াছে। শীঘ্রই আরও ১৩ সহস্র ৫৬৭ একরের বরাদ্দ বাতিল হইতেছে। আমরা জানি, একটা দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি না থাকিলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অথচ বাংলাদেশ বন বিভাগের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনমতে, দেশে বন আচ্ছাদিত অঞ্চল সমগ্র ভূমির ১৩ শতাংশেরও কম। এই বনভূমি হ্রাসের কারণে স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য ও অস্তিত্ব সংকটে পড়িয়াছে বন্যপ্রাণী। ইতোমধ্যে সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ ৩১টি প্রজাতি বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। উপরন্তু, প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের হিসাবে, বাংলাদেশে ৩৯০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রায় সকলেই অস্তিত্বের ঝুঁকিতে রহিয়াছে, যাহার মধ্যে মহাবিপন্ন বলিয়া চিহ্নিত হইয়াছে ৫৬টি বন্যপ্রাণী, বিপন্ন ১৮১ ও ঝুঁকিতে ১৫৩ প্রজাতি। বলা বাহুল্য, পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর এহেন বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তির প্রভাব নেতিবাচক হইতে বাধ্য। বাস্তবেই তাহা ঘটিয়াছে। একদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হইতেছে, অন্যদিকে প্রাণ ও সম্পদ বিধ্বংসী নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাইয়াছে। আমাদের বাঁচিয়া থাকিবার অন্যতম প্রধান অবলম্বন যে কৃষি, উহাও একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া চলিয়াছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাকৃতিক বন পুনরুদ্ধারের উক্ত সরকারি কর্মসূচিকে এক প্রকার আশার আলোরূপেও বর্ণনা করা যাইতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, গত তিন দশকে সমগ্র দেশে সরকারি ৪৫টি সংস্থার নামে ১ লক্ষ ৬১ সহস্র একর জমি বরাদ্দ করা হইয়াছিল এবং এই সকল জমির বৃহৎ অংশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ সম্পন্ন হইয়াছে। অথচ জাতীয় বননীতির ১৯ নম্বর ঘোষণায় বলা হইয়াছে, সরকারি মালিকানাধীন বনভূমি বনায়ন ব্যতীত অন্য কোনো কার্যে ব্যবহার করা যাইবে না। শুধু উহাই নহে, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, এমনকি প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন বনভূমিরূপে চিহ্নিত বনেও সরকারের প্রশাসন ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে জমি বরাদ্দ করা হইয়াছে। বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলিয়াছেন, অনেক বনভূমি বন অধিদপ্তরের নামে নিবন্ধন নাই। তাই জেলা প্রশাসকগণ খাসজমিরূপে সংরক্ষিত বনের জমি প্রতীকী মূল্যে বন্দোবস্ত দেন। তবে সমস্যাটার মূল আরও গভীরে প্রোথিত। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে যথার্থই বলিয়াছেন, ‘বনভূমি বরাদ্দের অর্থ ইহাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা।’ অর্থাৎ বনভূমির সংজ্ঞা অতীতের সরকারসমূহের নিকট নিছক জমি ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। পরিবেশ সচেতন মহলের চাপে তাহারা বিভিন্ন সময় পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষায় বনের গুরুত্ব স্বীকার করিতেন বটে, বাস্তবে সেই উপলব্ধি তাহারা হৃদয়ে ধারণ করিতেন না। ক্ষেত্রবিশেষ ক্ষমতায় টিকিয়া থাকিতেও তাহারা রাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংস্থাসমূহের বন বরাদ্দের অন্যায় আব্দার রক্ষা করিয়াছেন। প্রসঙ্গত, অতীতের কয়েকটি সরকার সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করিয়াছিল, যাহার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল প্রাকৃতিক বনের গুরুত্বকে হ্রাস করা। আমরা দেখিয়াছি, বিগত সরকারের আমলেও সরকারের শীর্ষ মহল প্রায়ই বড়াই করিয়া বলিত, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে তাহারা বনভূমি ৯ শতাংশের উপরে বৃদ্ধি করিয়াছেন। অথচ এই ধরনের বন কস্মিনকালেও প্রাকৃতিক বনের বিকল্প হইতে পারে না। কারণ, আর যাহাই হউক এই ধরনের বনে বন্যপ্রাণীর বসবাস সম্ভবপর নহে। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশের সহিতও উহার সংযোগ তেমন নিবিড় হইতে পারে না।

আমাদের প্রত্যাশা, সকল প্রতিরোধ উপেক্ষা করিয়া সরকার প্রাকৃতিক বন উদ্ধারে যে মনোযোগ দিয়াছে, উহা যে কোনো মূল্যে অব্যাহত থাকিবে। একই সঙ্গে বনের জমি বনকে ফিরাইয়া দিয়া বনকে নিজের মতো করিয়া থাকিবার নীতিতেও তাহারা অটল থাকিবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র ক ত ক বন পর ব শ বর দ দ কর য় ছ বনভ ম সরক র হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।

জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।

আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ