ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর শহর ওডেসায় বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত তিন কিশোর আহত হয়েছে এবং অনেকগুলো আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় একটি গাড়ি মেরামত কেন্দ্রে আগুন ধরে পুড়ে গেছে অন্তত ২৫টি গাড়ি। রাশিয়ার ভয়াবহ এ হামলার সময় ওডেসায় অবস্থান করছিলেন ইউক্রেনের অন্যতম মিত্র চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পেত্র পাভেল।

এই হামলার মাত্র কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত আলোচনার তৎপরতা বাড়িয়েছে। অন্তত দেশ দুটির জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধ করার একটি আংশিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য কাজ করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। রাশিয়া এখনও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি।

ওডেসায় ভয়াবহ এ হামলার পর রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বোমারু বিমান ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। বৃহস্পতিবার রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। হামলার সময় আশপাশের এলাকায় বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর পরপরই বিমান ঘাঁটিটিতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমান ঘাঁটি থেকে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে এবং সেখানে তীব্র আগুন জ্বলছে। রাশিয়ার সারাতোভ ওব্লাস্টের শহর এঙ্গেলসের এই ঘাঁটি সোভিয়েত আমলে নির্মিত। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ১৩২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

আগামী সোমবার সৌদি আরবে রাশিয়া, ইউক্রেন ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের বিষয়ে একটি চুক্তি করতে আগ্রহী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ আলোচনা সম্পর্কে  বলেছেন, ‘আমরা ভালো অবস্থানে আছি, শিগগির একটা সমাধান আসতে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন পারমাণবিক বিতর্ক
যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, আলোচনাটি শুধু রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে হয়েছে। তিনি বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র এই কেন্দ্রের আধুনিকায়নে বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, তবে মালিকানা হস্তান্তরের প্রশ্নই আসে না।

রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ নিয়ে দ্বিধান্বিত ইউরোপ
যুদ্ধের ব্যয় বাড়ায় ইউক্রেনকে সহায়তা করতে ইউরোপের দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে। তাই জব্দ করা রাশিয়ার মালিকানাধীন ২২৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ এ খাতে ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইউরোপে বিনিয়োগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারেন। খবর  রয়টার্স, সিএনএন, আলজাজিরা ও বিবিসির।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানদের টানে বিচ্ছেদ থেকে বন্ধন, আদালত চত্বরে আবার বিয়ে

তিন বছর আট মাস আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয় এক দম্পতির। পরে দুই কন্যাসন্তানের হেফাজত চেয়ে আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা করেন মা ও বাবা। শুনানির সময় বাবার সঙ্গে আদালতে সন্তানদের দেখা হতো। কিন্তু এতটুকু দেখাতে মন ভরত না সন্তানদের। সন্তানেরা মা-বাবাকে সব সময় একসঙ্গে কাছে পেতে চাইত। সাত বছর বয়সী বড় কন্যা প্রতিবার সাক্ষাতের সময় কান্নাকাটি করে মা-বাবাকে একসঙ্গে থাকার জন্য আকুতি জানাত।

পরে দুই কন্যার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে  ব্যথা ও অভিমান ভুলে ওই দম্পতি আবার একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় তিন বছর মামলা চালানোর পর গত মার্চ মাসে আদালত চত্বরে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, শুধু কন্যাদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ওই দম্পতি আবার এক হয়েছেন। আপসের পর ধর্মীয় বিধান মেনে আদালত চত্বরে তাঁদের আবার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা সংসার শুরু করেছেন।

যেভাবে দ্বন্দ্ব, যেভাবে আপস

২০১৭ সালে পারিবারিকভাবে এই দুজনের বিয়ে হয়। তাঁরা দুজনই উচ্চশিক্ষিত। দুজনই উচ্চপদে চাকরি করেন। বিয়ের পর নারীর বাবার বাড়িতে তাঁদের সংসার শুরু হয়। পরে রাজধানীতে একটি ভাড়া বাসা নিয়ে থাকা শুরু করেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

নারীর ভাষ্য, বিয়ের পর তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। স্বামী যৌতুক চেয়েছিলেন। এ কারণে মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক হিসেবে ছয় লাখ টাকা ব্যয় করে টিভি, ফ্রিজ, খাট ও আলমারি উপহার দেন তাঁর বাবা।

মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁর স্বামীর ভাড়া বাসায় ওঠার কয়েক মাস পর থেকে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। ভাড়া বাসার পাশে তাঁর ননদের বাসা ছিল। শাশুড়ি কখনো তাঁদের সঙ্গে, আবার কখনো মেয়ের বাসায় থাকতেন। তুচ্ছ কারণে শাশুড়ির সঙ্গে তাঁর প্রায় সময় মনোমালিন্য হতো। এ নিয়ে স্বামী তাঁকে কটু কথা বলতেন। একপর্যায়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন স্বামী। তবু সন্তানের কথা ভেবে অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে থাকেন তিনি।

মামলায় ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে বাবার কাছ থেকে জমি লিখে নিতে স্বামী তাঁকে চাপ দিতে শুরু করেন। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়। একসময় তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পরে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিয়ের চার বছরের মাথায় তিনি স্বামীকে তালাক দিয়ে সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।

তালাক কার্যকরের (তিন মাস) আগে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করতে থাকেন। স্বামী ও তাঁদের স্বজনেরা ওই নারীর কাছে অঙ্গীকার করেন, আর কখনোই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা হবে না। স্বামীর অনুরোধ ও সন্তানের কথা ভেবে কার্যকর হওয়ার আগে ওই নারী তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করে নেন। আবার সংসার শুরু করেন।

আদালতের কাছে নারী দাবি করেন, আবার সংসার শুরুর পর থেকে কয়েক মাস তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। তবে দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে আবারও স্বামী নির্যাতন করা শুরু করেন। তিনি এতটাই উগ্র হয়ে ওঠেন যে নির্যাতন ঠেকাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এগিয়ে এলে স্বামী তাঁদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করতেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আবারও স্বামীর বাসা ছেড়ে চলে যান বাবার বাসায়। ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট তিনি আবার তাঁর স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন। তালাক কার্যকরও হয়। ছয় মাস পর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। স্বামী কখনো দ্বিতীয় সন্তানকে দেখতে আসেননি।

তবে এই নারীর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁর সাবেক স্বামী। সাবেক স্বামীর অভিযোগ, তাঁর মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা হতো না। এ কারণে স্ত্রী প্রায় সময় তাঁর মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। একদিন রাগ করে তাঁর স্ত্রী বড় মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর কন্যাদের দেখতে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করেন। এ সময় তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দেন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।

এ ঘটনার পর তাঁদের দুজনের মধ্যে আর কোনো সমঝোতা হয়নি। পরে দুই কন্যার হেফাজত চেয়ে সাবেক স্ত্রীকে বিবাদী করে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন সাবেক স্বামী। অন্যদিকে ওই নারীও সাবেক স্বামীকে বিবাদী করে একই ধারায় মামলা করেন।

আরও পড়ুনবিয়ের অনেক বছর পরও কেন বিচ্ছেদ হয়১০ জুলাই ২০২৪

বিবাদীপক্ষের আইনজীবী মলয় কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, এই দম্পতির বড় সন্তানের বয়স প্রায় সাত বছর, আর ছোট সন্তানের বয়স চার বছর। পারিবারিক আদালতে মামলার শুনানি চলাকালে আদালতকক্ষে স্বামী-স্ত্রীর দেখা হতো। দুই কন্যা তখন মা–বাবা দুজনের সঙ্গেই কথা বলত। তারা কান্নাকাটি করত; সবাই মিলে একসঙ্গে থাকতে চাইত। একসময় স্বামী-স্ত্রী দুজনই সন্তানের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আবার একসঙ্গে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন।

আইনজীবী মলয় কুমার সাহা বলেন, মা–বাবার বিচ্ছেদের পর সন্তানেরা মানসিক যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়। শিশুর মানসিক বিকাশে মা–বাবার আদর-ভালোবাসা বিরাট ভূমিকা রাখে। বিচ্ছেদের কারণে আদর-ভালোবাসার ঘাটতি সন্তানদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এ কারণে দুই কন্যার মানসিক সুস্থতার কথা ভেবে গত মার্চ মাসে আপস করে ওই দম্পতি আবার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা সংসার শুরু করেছেন। তাঁদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাঁরা এখন সুখে আছেন।

আরও পড়ুনবিচ্ছেদের ৫০ বছর পর আবার একসঙ্গে দুজন ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪আরও পড়ুনডিভোর্সের পরও সন্তানের কথা ভেবে এক ছাদের নিচে থাকা কি ঠিক২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ