আলোচনার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
Published: 22nd, March 2025 GMT
ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরীয় বন্দর শহর ওডেসায় বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত তিন কিশোর আহত হয়েছে এবং অনেকগুলো আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় একটি গাড়ি মেরামত কেন্দ্রে আগুন ধরে পুড়ে গেছে অন্তত ২৫টি গাড়ি। রাশিয়ার ভয়াবহ এ হামলার সময় ওডেসায় অবস্থান করছিলেন ইউক্রেনের অন্যতম মিত্র চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পেত্র পাভেল।
এই হামলার মাত্র কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত আলোচনার তৎপরতা বাড়িয়েছে। অন্তত দেশ দুটির জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধ করার একটি আংশিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য কাজ করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। রাশিয়া এখনও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি।
ওডেসায় ভয়াবহ এ হামলার পর রাশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বোমারু বিমান ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। বৃহস্পতিবার রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। হামলার সময় আশপাশের এলাকায় বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর পরপরই বিমান ঘাঁটিটিতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমান ঘাঁটি থেকে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে এবং সেখানে তীব্র আগুন জ্বলছে। রাশিয়ার সারাতোভ ওব্লাস্টের শহর এঙ্গেলসের এই ঘাঁটি সোভিয়েত আমলে নির্মিত। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ১৩২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
আগামী সোমবার সৌদি আরবে রাশিয়া, ইউক্রেন ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের মধ্যে অন্তত জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের বিষয়ে একটি চুক্তি করতে আগ্রহী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ আলোচনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা ভালো অবস্থানে আছি, শিগগির একটা সমাধান আসতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন পারমাণবিক বিতর্ক
যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, আলোচনাটি শুধু রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে হয়েছে। তিনি বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র এই কেন্দ্রের আধুনিকায়নে বিনিয়োগ করতে চায়, তাহলে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, তবে মালিকানা হস্তান্তরের প্রশ্নই আসে না।
রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ নিয়ে দ্বিধান্বিত ইউরোপ
যুদ্ধের ব্যয় বাড়ায় ইউক্রেনকে সহায়তা করতে ইউরোপের দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে। তাই জব্দ করা রাশিয়ার মালিকানাধীন ২২৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ এ খাতে ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করলে ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইউরোপে বিনিয়োগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারেন। খবর রয়টার্স, সিএনএন, আলজাজিরা ও বিবিসির।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।