যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মহাকাশ থেকে সদ্য ফিরে আসা নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে প্রয়োজন হলে ‘নিজের পকেট থেকে’ ওভারটাইম দিতে চান তিনি।

ওয়াশিংটনে ওভাল অফিসে গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সময় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল থেকে ৫০ মাইল দূরে সমুদ্রে অবতরণ করে নভোচারী সুনিতা ও বুচকে বহনকারী ক্যাপসুল। তাঁরা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারী।

সুনিতা ও বুচ গত বছরের জুন থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) ছিলেন। আট দিনের মহাকাশ মিশনে সেখানে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে তাঁরা সেখানে আটো পড়েন। প্রায় ৯ মাস পর তাঁরা নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরেন।

মহাকাশে বাড়তি দিন কাটিয়ে আসায় সুনিতা আর বুচ ওভারটাইম পাবেন কি না—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প সোজাসাপটা জবাব দেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কেউ আমাকে আগে বলেনি। যদি আমাকে করতেই হয়, আমি নিজের পকেট থেকেই তা দেব।’

ফক্স নিউজের সাংবাদিক ট্রাম্পকে জানান, মহাকাশে প্রতিদিনের জন্য ৫ ডলার করে ওভারটাইম দেওয়া হয়। সুনিতা ও বুচকে আট দিনের মিশনে গিয়ে ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটাতে হয়েছে। সেই হিসাবে, তাঁরা অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৩০ ডলার পাবেন।

আরও পড়ুনদ্রুত বুড়িয়ে যাওয়াসহ সুনিতা ও বুচের শরীরে কী কী প্রভাব পড়তে পারে২০ মার্চ ২০২৫

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘শুধু এটুকুই? তাঁরা যেই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছেন, সেই তুলনায় এটা কিছুই নয়।’

৫৯ বছর বয়সী সুনিতা ও ৬২ বছর বয়সী বুচকে ফিরিয়ে আনতে গত ১৪ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে একটি মিশন পাঠায় নাসা ও ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। সেই ক্যাপসুলে চেপে তাঁরা পৃথিবীতে ফেরেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এজন্য স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্ককে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। এই ধনকুবের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা, মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’–এর (সাবেক টুইটার) মালিক। সেই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ইলন মাস্ক।

আরও পড়ুনমহাকাশে আটকে পড়া ৯ মাসে কী খেতেন সুনিতারা১৯ মার্চ ২০২৫

স্পেসএক্সের প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘একবার ভাবুন, তিনি যদি না থাকতেন? যদি আমাদের ইলন না থাকতেন, তাঁদের (সুনিতা ও বুচ) আরও দীর্ঘদিন মহাকাশে আটকে থাকতে হতো। আর কেইবা তাঁদের ফিরিয়ে আনতো?’

ট্রাম্প আরও যোগ করেন, মহাকাশে কয়েক মাস প্রদক্ষিণ করার পর থেকে ‘শরীরে ক্ষয় শুরু হয়ে’ যায়।

মাসের পর মাস মহাকাশে থাকলে পেশি ও হাড়ক্ষয়সহ শরীরের ওপর বেশকিছু প্রভাব দেখা যায়। পানীয়র মাত্রা বদলানোর ফলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। দৃষ্টির সমস্যাও হতে পারে।

আরও পড়ুনমহাকাশ স্টেশনে ৯ মাস আটকে থেকে পৃথিবীতে ফিরলেন বুচ ও সুনিতা১৯ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনমহাকাশ থেকে ফেরা সুনিতাদের ‘স্বাগত জানাতে’ সাগরে হাজির ডলফিনও১৯ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প সএক স

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ