সুপারিশের ১৫ বছর পর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ
Published: 22nd, March 2025 GMT
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নির্বাচন বোর্ডের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার ১৫ বছর পর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন ডা. আব্দুল আলীম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবেদনবিদ্যা (অ্যানেসথেসিওলজি) বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলামের সই করা এক অফিস আদেশে ডা. আলীমের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নিয়োগপত্র পেয়ে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) কাজে যোগ দেন তিনি। এত বছর পর হলেও বর্তমান প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার পেয়ে সন্তুষ্ট এই চিকিৎসক।
ডা.
নতুন পদে যোগদানের আগে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে অবেদনবিদ্যা বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিলেন ডা. আলীম।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ) তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবেদনবিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে ২০১০ সালে ছয়টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে নির্বাচন বোর্ড ডা. আব্দুল আলীমকে নিয়োগের সুপারিশ করে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সুপারিশপ্রাপ্ত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়। বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আজীবন সদস্য হওয়ায় তার নিয়োগ আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ডা. আলীম।
২০১৪ সালে একই বিভাগের দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বছরেই নেওয়া হয় লিখিত ও চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা। তাতে উত্তীর্ণ হন তিনি। তবে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
২০১৫ সালে একই বিভাগে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ডা. আলীম সেই নিয়োগ পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। তার অভিযোগ, তবে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষা দিতে গেলে আচমকা ধরে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখার পাশাপাশি লাঞ্ছিত করেন আওয়ামীপন্থি কয়েকজন চিকিৎসক।
ওই চিকিৎসকরা তখন তাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিতে দিবেন না। পরে প্রক্টর এসে উদ্ধার করলেও আর পরীক্ষা দিতে পারেননি, কোনো রকমে ফিরে যান বাসায়।
এ ঘটনা নিয়ে সেসময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর অপহরণ ও আটকে রাখার অভিযোগ এনে ২০১৬ সালে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন ডা. আলীম।
আওয়ামী সরকার পতনের পর ১৮ আগস্ট উত্তীর্ণ পদে নিয়োগের আবেদন করেন।
ডা. আলীমের নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, “লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পরও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ডা. আলীমের নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়। তবে তার উত্তীর্ণের ফলাফল সংরক্ষিত ছিল। বর্তমান প্রশাসন সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে। ডা. আলীম এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক।”
ঢাকা/হাসান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম খ ক পর ক ষ পর ক ষ য় বছর পর
এছাড়াও পড়ুন:
মাদক মামলার আসামি, দিয়েছেন ‘জাল’ সনদ, তবু তিনি স্কুল কমিটির সভাপতি
চট্টগ্রামে মাদক মামলার এক আসামিকে বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সভাপতির যোগ্যতা পূরণ করতে স্নাতকের ‘জাল’ সনদ ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার উত্তর গোমদণ্ডী উচ্চবিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে ঘিরে এসব অভিযোগ ওঠে। গত ২৪ মার্চ চার সদস্যের এই অ্যাডহক কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
ছয় মাসের জন্য চার সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেন বোর্ডের তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী। পদাধিকারবলে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে। অন্য দুই সদস্য হলেন শিক্ষক প্রতিনিধি আলিম উদ্দিন ও অভিভাবক প্রতিনিধি মো. ইউছুপ মিয়া চৌধুরী।
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি সাধারণত কোনো শিক্ষক বা কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারেন না। তবে বিদ্যালয়ের আর্থিক লেনদেনে তাঁর সই প্রয়োজন হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক মামলা থাকলে সেটি ভিন্ন বিষয়। তবে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা শিক্ষার্থীদের জন্য নেতিবাচক বার্তা দেবে। পাশাপাশি একটি ‘জাল’ সনদ দিয়ে একটি কমিটিতে আসা বোর্ডের দায়িত্বের অবহেলার দিকে ইঙ্গিত দেয়।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর বোয়ালখালীতে এক হাজার লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) সুমন কান্তি দে বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে এসআই রহমত উল্লাহ মোহাম্মদ আলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এ মামলায় ২০২২ সালের ২২ জুলাই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। বর্তমানে মাদক মামলাটি বিচারাধীন।
নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি হতে মোহাম্মদ আলী স্নাতকের যে সনদ জমা দিয়েছেন, সেটিও ‘জাল’ বলে জানা গেছে। আবেদনের পর সব সনদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অ্যাডহক কমিটির সদস্যসচিব এ কে এম হারুন। এরপর বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ সেটি জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়ে দেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় ধরনের অভিযোগ থাকলে সেটি বোর্ডে জানানোর সুযোগ আছে। মূলত প্রধান শিক্ষকের পাঠানো তালিকাটি ডিসি স্যারের (জেলা প্রশাসক) সঙ্গে আলোচনা করে বোর্ডে পাঠানো হয়। বোর্ডই নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। তালিকা পাওয়ার পর কেউ অভিযোগ করলে আমরা খোঁজখবর নিয়ে থাকি।’
মোহাম্মদ আলী নিজেকে সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁর ফেসবুক আইডিতে তিনি নিজেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বোয়ালখালী পৌরসভা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং দৈনিক আলোকিত শতাব্দীর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেন।
যোগ্যতা পূরণে ‘জাল’ সনদ
গত বছরের ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলীর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অ্যাডহক কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা কলেজের ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর ও স্কুলের ক্ষেত্রে স্নাতক পাস। মোহাম্মদ আলী তাঁর দাখিল, আলিম ও স্নাতকের সনদ জমা দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০০৩ সালে তিনি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন।
তবে সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এই নামে কোনো বিভাগ তাঁদের নেই। যেটি আছে, সেটির নাম ইসলামিক স্টাডিজ। এটি চালু হয়েছে ২০১০ সালে। বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, ‘এই নামে কোনো বিভাগ আমাদের নেই। ২০১০ সালে ইসলামিক স্টাডিজ চালু হয়েছে। সনদটি ফেইক (জাল) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
জানতে চাইলে উত্তর গোমদণ্ডী উচ্চবিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ১টি নয়, ১৭টি মামলা আছে। মাদকের মামলাটিও রাজনৈতিক। আমি ঘটনা জেনেছি চার্জশিট হওয়ার কয়েক মাস পর। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমি জামিন নিয়েছি। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকেন্দ্রিক সমস্যা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মাদক মামলাটি সামনে আনা হয়েছে।’
২০১০ চালু হওয়া বিভাগ থেকে ২০০৩ সালে কীভাবে সনদ পেলেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এগুলো অনেক আগের পুরোনো ফাইল। সভাপতি মনোনয়নের সময় আমি খুঁজে সনদের ছবি তুলে দিয়েছি। আমি কোনো আর্থিক লাভের জন্য সভাপতি হয়নি।’
বেসরকারি বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি নিয়োগ দেওয়া হয় ২০২৪ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা অনুযায়ী। চট্টগ্রাম বোর্ডের এই প্রবিধানমালা অনুযায়ী, অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হবে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত। সভাপতির জন্য তিনজন মনোনীত ব্যক্তির তালিকা বোর্ডে পাঠাতে হবে।
চট্টগ্রাম বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. আবুল কাসেম বলেন, চার্জশিটভুক্ত আসামি হলে কোনোভাবেই সভাপতি থাকতে পারবে না। সনদের জালিয়াতির বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হবে যাচাই না করে তালিকা পাঠানোর জন্য।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক হলেন আখতার কবীর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সেখানে একজন মাদক ব্যবসায়ী ও যাঁর সনদ প্রশ্নবিদ্ধ তাঁকে সভাপতি করে আমরা শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দিচ্ছি, সেটি প্রশ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, বোর্ড এটি জানার পর ব্যবস্থা নেবে।’