চট্টগ্রামের কেইপিজেড এলাকায় আবার হাতির আক্রমণ কেন, যা জানা গেল
Published: 22nd, March 2025 GMT
বন্য হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কে ৬ ঘণ্টার অবরোধ করেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এলাকায় কেইপিজেড ফটকের সামনে অবরোধের কারণে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।
এর আগে শুক্রবার রাত দুইটার দিকে বড় উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর গ্রামের জমাদারপাড়ার কয়েকটি বাড়িতে বন্য হাতি আক্রমণ করে। এতে মো.
কোরিয়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-কেইপিজেড এলাকার পাহাড়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি বন্য হাতি আশ্রয় নিয়েছে। হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এত দিন সেখানে নিয়োজিত ছিলেন ১৫ জন ইআরটি (এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম) সদস্য। কিন্তু জানুয়ারি থেকে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাঁদের বেতন–ভাতা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া শুক্রবার হাতির আশ্রয়স্থল বনাঞ্চলে স্থানীয় লোকজন আগুন দেয় বলেও অভিযোগ। এর ফলে হাতি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে পাড়ায় আক্রমণ করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত দুইটার দিকে জমাদারপাড়া এলাকায় নামা হাতিটিকে বিরক্ত করে স্থানীয় লোকজন। এরপর হাতিটি মো. ইব্রাহিমের টিনের ঘরে ভাঙচুর শুরু করে। ইব্রাহিমের স্ত্রী খজিমা বেগম (৩০) আতঙ্কিত হয়ে আরমানকে কোলে নিয়ে বের হওয়ার সময় হাতির সামনে পড়েন। তখন হাতি তাঁদের আছাড় মারে। ঘটনাস্থলে মো. আরমান জাওয়াদ মারা যায়। পরে হাতিটি পাশে শাহজাহান নামের আরেক ব্যক্তির ঘরেও হামলা করে।
ঘটনার পর শনিবার সকাল ৬টা থেকে নিহত শিশুর লাশ নিয়ে কেইপিজেড ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিশুটির বাবাসহ স্থানীয় লোকজন। তাঁরা কেইপিজেডের পাহাড় থেকে হাতি সরানোর দাবি জানান।
বিক্ষোভকারীদের একজন ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘মাসের পর মাস হাতি লোকালয়ে এসে মানুষ মারবে তা আর হতে দেওয়া যায় না। এর স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার, তাই আমরা বিক্ষোভ করেছি। আগামী চার দিনের মধ্যে হাতি সরিয়ে নিতে হবে।’
বিক্ষোভস্থলে সকাল ১০টায় ওই শিশুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেলা ১১টার সময় কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য ও কর্ণফুলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী বিক্ষুব্ধ জনতাকে অবরোধ সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হাতি সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টায় অবরোধ তুলে নেন স্থানীয়রা।
এর মধ্যে দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবী, কেইপিজেডের শ্রমিক ও যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘আগামী চার দিনের মধ্যে হাতি কীভাবে সরানো যায় তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক থেকে সরে যান।’
জলদি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে ১৫ জন ইআরটি সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয় কেইপিজেডের ভেতরে। গত জানুয়ারি থেকে তাঁদের বেতন বন্ধ করে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। ৮ মার্চ তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘গত অক্টোবর থেকে আমরা ১৫ জনের জন্য ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছি। পরে আমরা আমাদের নিজস্ব ১০০ জনকে প্রশিক্ষিত করে তুলি এবং তাঁরা দায়িত্ব পালন করে। তাই বন বিভাগের ১৫ জন ইআরটি চলে যায়। তবে ইআরটি থাকার সময়ও হাতির উৎপাত খুব একটা বন্ধ হয়নি।’
এদিকে বন বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন অধিদপ্তর থেকে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল ইআরটি সদস্য না থাকলে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব বাড়তে পারে। এ ছাড়া সেখানে প্রতিনিয়ত পাহাড় ও বনাঞ্চল কাটা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। ঘটনার কিছুদিন আগে একই এলাকায় দোকানে বিদ্যুতের কেব্ল দিয়ে রেখেছিল, যাতে হাতি এলে শক খায়। শুক্রবার রাতে ওই এলাকার মানুষ বনে আগুন দিয়ে হাতিকে বিরক্ত করেছে। ফলে হাতি বেশি উত্তেজিত হয়, যার ফলে আক্রমণে শিশুটির মৃত্যু হয়।
এ নিয়ে ৬ বছরে হাতির আক্রমণে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় ১৯ জন নিহত হন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক রব র এল ক য় উপজ ল ১৫ জন অবর ধ ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমস্যা কী, সমাধান কোথায়: শুনুন তামিমের মুখে
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? কোন বিষয়টি সবার আগে সমাধান করা উচিত?
দুটি প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অনেক কথাই বলবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কারও বিষয়টি ভালো জানার কথা। যেমন তামিম ইকবাল। প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র তামিমের সামনে দুটি প্রশ্ন রেখেছিলেন। তামিমের উত্তর, ‘আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের ফ্যাসিলিটিজ (অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধা) নাই।’
প্রথম আলোর কার্যালয়ে উৎপল শুভ্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে আড্ডার মেজাজে তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। নিজের ক্যারিয়ার, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—এসব নিয়েও বেশ খোলামেলা কথা বলেন সাবেক এই ওপেনার।
আলাপচারিতার একপর্যায়েই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ মুহূর্তের সমস্যার প্রসঙ্গ উঠেছিল। অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ–সুবিধার অভাবকে সামনে টেনে এনে তামিম বলেছেন, ‘একটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার হয় কিংবা বাংলাদেশের মতো দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার একটি (ক্রিকেট), যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, তার আশপাশেও নেই। পৃথিবীর তৃতীয়, চতুর্থ ধনী বোর্ডের যে ফ্যাসিলিটিজ থাকা উচিত, আমরা এর আশপাশেও নেই।’
তামিম বিষয়টি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করলেন, ‘ক্রিকেট দলের প্রতি ভক্তদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণের জন্য যে ফ্যাসিলিটিজ দরকার, আমরা তার আশপাশেও নেই। আপনি মাঝারি মানের ক্রিকেটার হতে পারেন কিংবা মাঝারি মানের ব্যাটসম্যান হতে পারেন, সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে কিন্তু আপনি মাঝারি মান থেকে দুই ধাপ ওপরে উঠতে পারবেন।’
মুশফিকুর রহিম