বন্য হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কে ৬ ঘণ্টার অবরোধ করেছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এলাকায় কেইপিজেড ফটকের সামনে অবরোধের কারণে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়ে  মানুষ।

এর আগে শুক্রবার রাত দুইটার দিকে বড় উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর গ্রামের জমাদারপাড়ার কয়েকটি বাড়িতে বন্য হাতি আক্রমণ করে। এতে মো.

আরমান জাওয়াদ নামে এক শিশু মারা যায়। আহত হয় শিশুটির মা খজিমা বেগম (৩০)। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কোরিয়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-কেইপিজেড এলাকার পাহাড়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনটি বন্য হাতি আশ্রয় নিয়েছে। হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এত দিন সেখানে নিয়োজিত ছিলেন ১৫ জন ইআরটি (এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম) সদস্য। কিন্তু জানুয়ারি থেকে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাঁদের বেতন–ভাতা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া শুক্রবার হাতির আশ্রয়স্থল বনাঞ্চলে স্থানীয় লোকজন আগুন দেয় বলেও অভিযোগ। এর ফলে হাতি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে পাড়ায় আক্রমণ করে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত দুইটার দিকে জমাদারপাড়া এলাকায় নামা হাতিটিকে বিরক্ত করে স্থানীয় লোকজন। এরপর হাতিটি মো. ইব্রাহিমের টিনের ঘরে ভাঙচুর শুরু করে। ইব্রাহিমের স্ত্রী খজিমা বেগম (৩০) আতঙ্কিত হয়ে আরমানকে কোলে নিয়ে বের হওয়ার সময় হাতির সামনে পড়েন। তখন হাতি তাঁদের আছাড় মারে। ঘটনাস্থলে মো. আরমান জাওয়াদ মারা যায়। পরে হাতিটি পাশে শাহজাহান নামের আরেক ব্যক্তির ঘরেও হামলা করে।

ঘটনার পর শনিবার সকাল ৬টা থেকে নিহত শিশুর লাশ নিয়ে কেইপিজেড ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিশুটির বাবাসহ স্থানীয় লোকজন। তাঁরা কেইপিজেডের পাহাড় থেকে হাতি সরানোর দাবি জানান।

বিক্ষোভকারীদের একজন ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘মাসের পর মাস হাতি লোকালয়ে এসে মানুষ মারবে তা আর হতে দেওয়া যায় না। এর স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার, তাই আমরা বিক্ষোভ করেছি। আগামী চার দিনের মধ্যে হাতি সরিয়ে নিতে হবে।’

বিক্ষোভস্থলে সকাল ১০টায় ওই শিশুর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেলা ১১টার সময় কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য ও কর্ণফুলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী বিক্ষুব্ধ জনতাকে অবরোধ সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেন। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে হাতি সরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ১২টায় অবরোধ তুলে নেন স্থানীয়রা।

এর মধ্যে দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবী, কেইপিজেডের শ্রমিক ও যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘আগামী চার দিনের মধ্যে হাতি কীভাবে সরানো যায় তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হলে বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক থেকে সরে যান।’

জলদি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, গত বছরের অক্টোবর থেকে ১৫ জন ইআরটি সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয় কেইপিজেডের ভেতরে। গত জানুয়ারি থেকে তাঁদের বেতন বন্ধ করে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। ৮ মার্চ তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘গত অক্টোবর থেকে আমরা ১৫ জনের জন্য ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছি। পরে আমরা আমাদের নিজস্ব ১০০ জনকে প্রশিক্ষিত করে তুলি এবং তাঁরা দায়িত্ব পালন করে। তাই বন বিভাগের ১৫ জন ইআরটি চলে যায়। তবে ইআরটি থাকার সময়ও হাতির উৎপাত খুব একটা বন্ধ হয়নি।’

এদিকে বন বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন অধিদপ্তর থেকে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল ইআরটি সদস্য না থাকলে মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব বাড়তে পারে। এ ছাড়া সেখানে প্রতিনিয়ত পাহাড় ও বনাঞ্চল কাটা হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। ঘটনার কিছুদিন আগে একই এলাকায় দোকানে বিদ্যুতের কেব্‌ল দিয়ে রেখেছিল, যাতে হাতি এলে শক খায়। শুক্রবার রাতে ওই এলাকার মানুষ বনে আগুন দিয়ে হাতিকে বিরক্ত করেছে। ফলে হাতি বেশি উত্তেজিত হয়, যার ফলে আক্রমণে শিশুটির মৃত্যু হয়।

এ নিয়ে ৬ বছরে হাতির আক্রমণে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় ১৯ জন নিহত হন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক রব র এল ক য় উপজ ল ১৫ জন অবর ধ ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে পাঠ্যবই থেকে বাদ মোগল-সুলতানি শাসন, যুক্ত মগধ মৌর্য শুঙ্গ

ভারতে সপ্তম শ্রেণির নতুন সমাজবিজ্ঞান বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে দিল্লির মোগল এবং সুলতানি শাসনামলের কথা। এর বদলে নতুন সংযোজন করা হয়েছে ভারতীয় শাসকদের কথা।

নতুন শিক্ষানীতি অনুসরণ করে চলতি বছরে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সমাজবিজ্ঞানের নতুন বই প্রকাশ করেছে ভারতের ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং–এনসিইআরটি। পুরোনো বইয়ে মোগল আমল এবং সুলতানি সাম্রাজ্য নিয়ে আলাদা দুটি পরিচ্ছদ ছিল। নতুন বইয়ে ওই পরিচ্ছদ দুটি আর নেই। এ দুটির পরিবর্তে প্রাচীন ভারতীয় সাম্রাজ্যের ওপর লেখা একটি নতুন পরিচ্ছদ। মোগল আমল ও সুলতানি সাম্রাজ্যর ওই পরিচ্ছদে মুহাম্মদ বিন তুঘলক, ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি, মামলুক ও ইব্রাহিম লোদির কথাও পড়ানো হতো। এগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় শাসকদের মধ্য মগধ, মৌর্য ও শুঙ্গ সাম্রাজ্যসহ কয়েকজন শাসকের কথা নতুন বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৫ সালে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে হওয়া কুম্ভমেলার প্রসঙ্গও আছে নতুন বইয়ে। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ এবং অটল টানেলের কথা। নতুন বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের২৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে এনসিইআরটি। নতুন বইগুলোতে ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এনসিইআরটির পাঠ্যপুস্তক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কেন্দ্রীয় বোর্ডের অধীন স্কুলগুলোতে পড়ানো হয়। এনসিইআরটির নির্দেশিকা মেনে গত কয়েক বছরে পরিবর্তন ঘটেছে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রম। কোনো শ্রেণিতে মোগল যুগ বাদ পড়েছে। কোথাও ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও কোথাও নারী আন্দোলনের ইতিহাসও বাদ দেওয়া হয়েছে।

তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস ও আনন্দবাজার

আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি ছাত্রদের ভিসা ফি আরও বাড়ছে২৮ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনজাপানে উচ্চশিক্ষা: যাত্রা শুরু করবেন কোথা থেকে, কীভাবে?২৮ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে পাঠ্যবই থেকে বাদ মোগল-সুলতানি শাসন, যুক্ত মগধ মৌর্য শুঙ্গ