ধারে টাকা নিয়ে বুকের ধনই ‘হাতছাড়া’ মা-বাবার
Published: 22nd, March 2025 GMT
ধারে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নজরুল ইসলাম নামে এক দিনমজুর। সুদি কারবারি শিপন হাওলাদারের কাছ থেকে টাকাগুলো ধার করেন। এই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাঁর সঙ্গে নজরুলের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির ফুফু জাহানারা বেগম বেড়াতে নিয়ে গিয়ে এমন কাণ্ড করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিশুর বাড়ি কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য টিয়াখালী গ্রামে। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী সুদি কারবারি শিপন বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর প্রতিবেশী জাহানারা বেগম। শিশুটিকে দুই দফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করায় ভুক্তভোগী পরিবারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযুক্তদের দাবি, ধারের টাকা পরিশোধ না করতেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ৪ মাস আগে দিনমজুর নজরুল ইসলাম তাঁর বোন জাহানারার মাধ্যমে সুদি কারবারি শিপনের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার করেন। সময়মতো টাকাগুলো পরিশোধ করতে পারেননি বলে দাবি জাহানারার। ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নজরুল ইসলাম। এরই মধ্যে পাওনাদার শিপনকে নিয়ে একটি পরিকল্পনার ফাঁদ পাতেন জাহানারা বেগম। সেই অনুযায়ী মাসখানেক আগে ভাই নজরুলের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে প্রথমে লেমুপাড়া নিজ বাড়িতে নিয়ে যান জাহানারা। এর পর কলাপাড়া শহরের একটি বাড়িতে নিয়ে যান মেয়েটিকে। সেখানে আটকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একজন মৌলভি ডেকে শিপনের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেন। এর পর শিশুটি বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের কাছে ঘটনা খুলে বলে কান্না জুড়ে দেয়। সম্প্রতি পাওনাদার শিপন ও জাহানারা ওই শিশু শিক্ষার্থীকে দুই দফায় তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালান। তবে এলাকাবাসীর বাধায় তাদের চেষ্টা পণ্ড হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, তাকে ভয় দেখিয়ে বিয়েতে বাধ্য করা হয়েছে। এর পর দুইবার জোর করে তুলে নিতে চাইলে এলাকাবাসী বাধা দেন। সে সময় অন্য একটি বাড়িতে পালিয়েছিল সে।
শিশুটির মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘ননদ জাহানারার মাধ্যমে সুদি কারবারি শিপনের কাছ থেকে এক বছরের জন্য ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছি আমরা। কিন্তু এমন ষড়যন্ত্র করবে বুঝতে পারিনি। বউ-বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও শিপন আমার মেয়ের সর্বনাশ করতে এমন অপকর্ম করেছে।’
তবে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শিপন ও জাহানারা। তাদের দাবি, ধারের টাকা পরিশোধ করবে না বলেই যড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো.
এটি মারাত্মক অপরাধ। বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযুক্তের এক মাসের সাজা হতে পারে। এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন– এমনটিই জানিয়েছেন আইনজীবী খন্দকার নাসির উদ্দিন।
উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, মেয়েটির নিরাপত্তা ও বাল্যবিয়ে রোধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কলাপাড়া থানা পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। তার পরও খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও রবিউল ইসলামের ভাষ্য, কোনোভাবেই যাতে এ বাল্যবিয়ে না হতে পারে, তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য ল ইসল ম পর শ ধ ক রব র নজর ল
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।