মাদকের ছয় মামলায় পলাতক, অথচ সাক্ষাৎ করেছেন ডিবি কর্মকর্তা
Published: 23rd, March 2025 GMT
ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশ বলছে তাঁর খোঁজ মিলছে না। অথচ পলাতক এই ব্যক্তির করা একেকটি মামলার সূত্রে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক উপপরিদর্শক। লক্ষ্মীপুরে ঘটেছে এমন ঘটনা।
পুলিশের কাছে পলাতক এই ব্যক্তির নাম আবুল কালাম ওরফে জহির। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে পাশের নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানায় পাঁচটি ও সোনাইমুড়ি থানায় একটি মাদকের মামলা রয়েছে। মামলাগুলোয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর আবুল কালাম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলায় চাঁদার দাবিতে তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ১০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। গত ১৮ নভেম্বর আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেন ডিবির উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রমজান আলী।
প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রমজান আলী উল্লেখ করেন, মামলাটি তিনি প্রকাশ্যে ও গোপনীয়ভাবে ব্যাপক তদন্ত করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাদীকে মামলার ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বাদী মামলার অভিযোগের হুবহু বর্ণনা দেওয়ায় তা জবানবন্দি আকারে লিপিবদ্ধ করেছেন।
জানতে চাইলে পলাতক আসামি আবুল কালামের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং তাঁর জবানবন্দি নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রমজান আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাদী আবুল কালামের বিরুদ্ধে মাদক মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। আবুল কালাম নিজেকে প্রবাসী বলে দাবি করেছেন।
আবুল কালাম বাদী হয়ে করা মামলাটিতে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে আসামিরা তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। মামলার নামোল্লেখ করা আসামিদের একজন নবম শ্রেণির ছাত্র। মামলাটি গ্রহণ করে আদালত ডিবি পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পলাতক থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম বলেন, তিনি ১২ বছর এলাকায় থাকেন না। আগে সৌদি আরব প্রবাসী ছিলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। নোয়াখালীতে যেসব মাদক মামলায় তাঁকে জড়ানো হয়েছে, সেগুলোয় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি নন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে তাঁকে জড়ানো হয়েছে।
জানতে চাইলে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়সার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কালামের বিরুদ্ধে ছয়টি মাদকের মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ খুঁজছে। দ্রুত অবস্থান পরিবর্তনের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত কর ছ ন পর য় ন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও দেড় শ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ও অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থার উপপরিচালক মো. আজিজুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ১ হাজার ১৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা নিজের দখলে রেখেছেন। এ ছাড়া আসাদুজ্জামান নূরের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৯টি হিসাবে ১৫৮ কোটি ৭৮ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০০৩-০৪ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আসাদুজ্জামান নূরের বৈধ আয় ছিল ৩২ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৮ টাকা। এ সময়ে তাঁর পারিবারিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৭৬১ টাকা। সে অনুযায়ী নিট সঞ্চয় দাঁড়ায় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৭ টাকা। অথচ তাঁর অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২৯ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৭ টাকা। এতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার উৎস পাওয়া যায়নি বলে দুদক জানিয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান নূরের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৮৫ কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৩ টাকা জমা এবং ৭৩ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন হয়েছে। এসব লেনদেনের উৎস অস্পষ্ট।
২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। এরপর ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে একে একে মামলা ও গ্রেপ্তার শুরু করে দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে নিজ বাসা থেকে আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়।