নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী
Published: 23rd, March 2025 GMT
সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঢাকা ও ময়মনসিংহে অবস্থানরত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী ও ইফতার ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর ও ময়মনসিংহের একটি রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যায় পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে দেড় শতাধিক সাবেক শিক্ষার্থী নিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা পুনর্মিলনীতে পরিচিত মুখগুলোকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন পরিচিত সব মুখ এক ছাদের নিচে দেখতে পেয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন তারা।
মিলনমেলার এই আয়োজনকে ক্যামেরাবন্দি করতে ভোলেননি তারা। আনাড়ি হাতেই সবাই যেন হয়ে উঠেন এক একজন আলোকচিত্রী। দীর্ঘদিন পর অগ্রজ ও অনুজদের দেখা হওয়ায় ক্যামেরায় সেই স্মৃতি ধরে রাখেন। কুশল বিনিময়, আলিঙ্গনে সবাই ফিরে যান প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।
পুনর্মিলনীতে আসা আরব আমিরাত দূতাবাসের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক লালন আলতাপ জানান, পরিচিত মুখগুলোকে একসাথে দেখে মনেই হয়নি ঢাকায় আছি। ফিরে গিয়েছিলাম সেই ক্যাম্পাস জীবনে। এমন মিলনমেলায় যুক্ত হতে পেরে ভীষণ আনন্দিত। এতদিনের কর্মক্লান্তি যেন মুহূর্তেই উবে গেছে।
আরেক নজরুলিয়ান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের উপ পরিদর্শক আবু সাঈদ বলেন, এ ইফতার ও পুনর্মিলনীতে যোগ দিতে পেরে অনেক আনন্দ অনুভব করছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরনো বন্ধু, বড় ভাই ও ছোটদের পেয়ে মনে হচ্ছে ক্যাম্পাস জীবনে চলে এসেছি। তাই ক্যাম্পাস জীবনে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো বেশি বেশি মনে পড়ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) এর সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌস আনাম জীবন বলেন, এত সুন্দর অনুষ্ঠানে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই। এই আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার (ডেপুটি ডিরেক্টর, আইসিটি) মাহমুদ মুনিম বলেন, অনেকের সাথে দেখা হলো প্রায় অর্ধযুগ, তারও বেশি সময় পরে। যাদের সাথে কাটিয়েছি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো, তাদের অনেককে দেখে খুবই ভালো লাগছে। সবাই স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত। কোনও সমস্যা কিংবা সহায়তায় আমরা একত্রিত হয়ে যেন কাজ করতে পারি সেটার চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম হবে সেই প্রত্যাশা করি।
সাবেকদের নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত হওয়া পুনর্মিলনীতে যোগ দেওয়া সাবেক শিক্ষার্থী হাসিব ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনরা একত্রিত হওয়ার প্রয়াস থেকেই এমন উদ্যোগ, ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ পরিসরে একসাথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে আমরা নানাধর্মী আয়োজন করবো।
আবদুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মিশকাত আল হারুন বলেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এমন আয়োজনের ধারাবাহিকতা এবার ভিন্নমাত্রা পেয়েছে প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহে উদযাপন করার মাধ্যমে। আশা করছি এর ব্যপ্তি বেড়েই চলবে।
ময়মনসিংহে অবস্থানরত প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শহীদ বীর উত্তম লে.
অনুষ্ঠানে আগত সাবেকদের ফটোসেশনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় সাবেকদের এ পুনর্মিলনী ও ইফতারপর্ব।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর আনন্দিপুর গ্রামের মামুন মিয়া (২২) ছোটবেলা থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। প্রায় প্রতি মাসেই তাঁর একাধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে এক সময় রক্তের জোগাড় বেশ কষ্টসাধ্যই হয়ে ওঠে। মানুষ বিনা স্বার্থে রক্ত দিতে চাইতেন না। ২০১৬ সাল থেকে পরিবারটিকে রক্তের জন্য আর কাউকে অনুরোধ করতে হচ্ছে না। মামুনের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সম্প্রতি মামুনের মা মাজেদা বেগম অতীতের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘পোলার রক্তের লাইগ্গা মাইনষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কেউ রক্ত দিতে চাইতো না। মানুষ টাকা ভিক্ষা চায়, আর আমি মানুষের কাছে আমার পোলার জন্য রক্ত ভিক্ষা করছি। শইল্যে রক্ত না ভরলে আমার পোলা মইরা যাইতো।’
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যক্তি, জরুরি বা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া কিংবা কিডনি আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রায়ই প্রয়োজন হয় রক্তের। আত্মীয়স্বজন বা চেনাজানা কারও কাছে প্রয়োজনমাফিক রক্ত না পেয়ে অনেকেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে। খবর পেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুততার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রক্তদাতাকে খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো মহৎ এই কাজেই তাঁদের আনন্দ বলে জানান ময়মনসিংহের ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কয়েকজন কর্মী।
শুধু রক্তদান নয়, সমাজ পরিবর্তনে নানা কাজও করে চলেছে তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায়। তবে এর দু-এক বছর আগেই সংগঠনটির কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান সংগঠনটির মূল পরিকল্পনাকারী মমিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়।
সম্প্রতি মমিনুর রহমান বলেন, ‘শুধু রক্তের অভাবে একটি মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে না, এই চিন্তা থেকে কাজ শুরু করি। ময়মনসিংহে রক্তদান নিয়ে কাজ করে—এমন কোনো সংগঠন ছিল না। তখন স্থানীয়ভাবে মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর ৩৯ জনকে নিয়ে প্রথম সভা করি। পরে সেখান থেকে রক্তদানের এই সংগঠন করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। যেহেতু ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বসে ওই সভা হয়েছিল, তাই সংগঠনটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটি’। ‘আর্তের মুখে হাসি ফোটানোই হয় যদি মানবতা, তবে তার শ্রেষ্ঠ সেবক হলো প্রতিটি রক্তদাতা’, এই স্লোগান সামনে রেখে শুরু হয় এর যাত্রা।
সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে, রক্তদাতা তরুণেরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সংগঠনটির একটি কমিটি ও ফেসবুক পেজ আছে। এর মাধ্যমে কিংবা মুঠোফোনে খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে যান তরুণেরা। তরুণদের তৎপরতায় দিন দিন সংগঠনটির পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার সদস্য আছেন, যাঁরা নিজেরা রক্তদান করেন এবং রক্তদানে অন্য তরুণদের উৎসাহিত করেন। ২০ বারের বেশি রক্ত দিয়েছেন, এমন রক্তদাতা আছেন ৮০ জন, যার ৬০ জনই শিক্ষার্থী। শুধু ময়মনসিংহ শহরেই ইতিমধ্যে ৩৫ হাজার ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন সংগঠনটির তরুণেরা। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ২০১৮ সাল থেকে ব্রহ্মপুত্র ব্লাড কল্যাণ সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার রক্ত দিয়েছেন। অন্যদের উৎসাহী করতে তিনি বলেন, ‘মুমূর্ষু অবস্থায় মানুষ রক্তের কারণে মারা যাবে, এটি কখনো হতে পারে না। তাই অসুস্থ জটিল রোগীর খবর পেলেই রক্ত দিতে যাই। রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই।’
সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আবিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সুমন রাহাত। স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত আবিদুর রহমান বলেন, ‘যাঁদের রক্তের প্রয়োজন, তাঁরা আমাদের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করেন। অথবা রক্তের প্রয়োজন ফেসবুকে কারও স্ট্যাটাস দেখলেই আমরা নিজে থেকে যোগাযোগ করে রক্তের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। আমরা রক্তদানের মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচিয়ে আনন্দিত হই। আমরা মানুষ বাঁচানোর এই আনন্দ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় রক্তের জন্য মানুষ যেন না মরে, এটিই আমাদের লক্ষ্য।’