মক্কা বিজয় ও হুদায়বিয়া সন্ধির কথা
Published: 23rd, March 2025 GMT
আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের ২৬তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা আহকাফ, সুরা মুহাম্মদ, সুরা ফাতহ, সুরা হুজুরাত ও সুরা জারিয়াতের ১ থেকে ৩০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। আজকের তারাবিহতে আল্লাহর সাহায্য, মুত্তাকিদের পুরস্কার, মা–বাবার আনুগত্য, নবীজির মুখে জিনদের কোরআন শ্রবণ, গুজব রটানো, যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে আচরণনীতি, হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়, সাহাবিদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের সঙ্গে দুজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকা, কাফেরদের উত্থাপিত আপত্তির জবাব, যুদ্ধের হুকুম, মুমিনরা পরস্পরে ভাই ভাই, তাকওয়া, কসম, ওয়াদা, আল্লাহর আজমত ও বড় ইত্যাদির আলোচনা রয়েছে।
দুই সন্তানের দৃষ্টান্ত
কোরআনের ৪৬তম সুরা আহকাফ মক্কায় অবতীর্ণ, এর আয়াতের সংখ্যা ৩৫। এ সুরার ১৫ থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে মা–বাবার অনুগত বিশ্বাসী সন্তান এবং মা–বাবার অবাধ্য সন্তানের উদাহরণ রয়েছে।
আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪ভালো সন্তান সে, যার অন্তরে আছে আলো। আল্লাহ বিশ্বাসী, আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও খুশির জন্য আমল করতে চায়। মাতা–পিতার কল্যাণ কামনা করে। এমন সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে আছে পুরস্কার—জান্নাত।
খারাপ সন্তান সে, মাতা–পিতা যাকে ইমানের পথে দাওয়াত দিলেও যে দাওয়াত গ্রহণ করে না। অহংকার করে। তাদের কষ্ট দেয়। তাদের নির্বোধ মনে করে। এমন সন্তানের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি।
এ ছাড়া এই সুরায় আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ, মুহাম্মদ (সা.
রাসুলুল্লাহ (সা.)-নামে সুরার নাম
কোরআনের ৪৭তম সুরা মুহাম্মদ মক্কায় অবতীর্ণ, এতে আয়াত আছে ৩৮টি। এ সুরায় মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম থাকায়, এর নাম রাখা হয়েছে সুরা মুহাম্মদ। এটিকে সুরা কিতালও বলা হয়। কারণ, অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদের যুদ্ধের বয়ান আছে। এ সুরায় বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মধ্যে চির সংঘাত, আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের সাহায্য, মুত্তাকিদের পুরস্কার, যুদ্ধ, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় ও কৃপণতা করা নিষেধ ইত্যাদির বয়ান রয়েছে।
সুরা মুহাম্মদের ৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এক. যারা অবিশ্বাসী, দুই. যারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে ও তিন. অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়।
আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪সুরা মুহাম্মদের ৩৮ নম্বর আয়াতে আছে, ‘দেখ, তোমরাই তারা, যাদের আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছ; যারা কার্পণ্য করে, তারা কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত, যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো, তাহলে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; তারা তোমাদের মতো হবে না।’ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা এবং অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো সম্পদশালীর ইমানি দায়িত্ব। ইসলাম ও মানুষের উপকারে সম্পদ ব্যয়ে কার্পণ্য করা নিন্দনীয় কাজ। সাধারণ খাতেও খরচ না করে কার্পণ্য করা উত্তমের পরিপন্থী এক অভ্যাস। রাসুল (সা.) কৃপণতা থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি চাইতেন। মানুষকে এ অভ্যাস ছাড়ার আদেশ দিয়েছেন তিনি।
নবীজি (সা.)-র প্রিয় যে সুরা
২৯ আয়াতবিশিষ্ট সুরা ফাতহ মক্কায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের ৪৯ নম্বর সুরা। ফাতহ অর্থ বিজয়। তখন ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাস। রাসুল (সা.) মক্কার অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সন্ধি চুক্তি শেষে মদিনার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন সুরাটি নাজিল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আজ বিকেলে আমার ওপর এমন এক সুরা নাজিল হয়েছে, যা আমার কাছে দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী যা আছে, সব থেকে প্রিয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৮৩৩)
আরও পড়ুনইসলাম যাদেরকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে১৩ মার্চ ২০২৪মক্কা বিজয় ও হুদায়বিয়া সন্ধির কথা
আল্লাহ হুদাইবিয়ার সন্ধির আকারে মুসলমানদের যে মক্কায় বিজয় দান করেছিলেন, সে বিষয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে সুরা মুহাম্মদে। রাসুল (সা.) একবার মদিনায় স্বপ্ন দেখলেন, তিনি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছেন। সাহাবিরা স্বপ্নের কথা জেনে খুব আনন্দিত হলেন। ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে ১৪ শ সাহাবি নিয়ে ওমরাহ করতে নবীজি মক্কার পথ ধরলেন। পথে জানতে পারলেন, মক্কাবাসী যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। নবীজি জানালেন, তিনি শুধু ওমরাহ করতে আসছেন। এর মধ্যে নানা ঘটনা ঘটল। দুই দল আলোচনায় বসল। ১০ বছর পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলো। চুক্তির শর্তগুলো বাহ্যত মুসলমানদের দুর্বলতা প্রকাশ করলেও আল্লাহ এটাকে সুস্পষ্ট বিজয় বলেছেন। পরে বিজয় হয় মক্কা।
এ সুরায় মুমিন নর-নারীদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা এবং অবিশ্বাসী ও কপট ব্যক্তিদের শাস্তি, হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে নবীজির সঙ্গে উপস্থিত সাহাবিদের প্রতি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির ঘোষণা, খায়বার বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান, নবীজির আনীত ধর্ম সব ধর্মের ওপর বিজয় লাভের কথা ও দুটি বিপরীতমুখী দলের আলোচনা রয়েছে।
গুজব ছড়ানো পাপ
১৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা হুজুরাত মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরার ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুসলমানেরা, যদি কোনো পাপাচারী লোক কোনো খবর নিয়ে আসে, তাহলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে, যেন অজ্ঞতাবশত কোনো জাতির ওপর আক্রমণ করা না হয়। এরূপ কাজ করলে তোমাদের নিজেদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনুতাপ করতে হবে।’
আরও পড়ুননারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং অলৌকিক তিন ঘটনা১২ মার্চ ২০২৪সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে। এখন যেকোনো তথ্য মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাই দুষ্কৃতকারীরাও এই মাধ্যমকে গুজব ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত করেছে। সংবাদ যাচাই-বাছাই না করে গুজব ছড়ানো মারাত্মক গুনাহ।
মানুষের মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে। সমাজজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সুরা হুজুরাতের ১১ থেকে ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন উপহাস করা, খোঁটা দেওয়া, মন্দ নামে ডাকা, অনুমান করা, দোষ অনুসন্ধান ও কুৎসা করা।
সুরা কফে যা আছে
৪৫ আয়াতবিশিষ্ট সুরা কফ মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরায় ইসলামের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস, অবিশ্বাসীদের প্রতি সতর্কবার্তা, পূর্ববর্তী জাতি ধ্বংসের কারণ, মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা, মানুষের সঙ্গে দুজন ফেরেশতা, মৃত্যুর সময় মানুষের আমলনামা বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাশরের ময়দানে মানুষের আমলের জবাব, জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ, আল্লাহর ইবাদত ও তাসবিহ পাঠের বর্ণনা রয়েছে।
সুরা জারিয়াতের বিষয়বস্তু
মক্কায় অবতীর্ণ সুরা জারিয়াতের আয়াতের সংখ্যা ৬০। এ সুরার শুরুর অংশে আছে চারটি কসমের বয়ান। পরে মুত্তাকিদের উত্তম পরিণতি, তাদের উন্নত গুণ, আল্লাহর বড়ত্বের নিদর্শন ও ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে ফেরেশতাদের আগমন ইত্যাদি আলাপ রয়েছে।
রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম
আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব শ ব স দ র আল ল হ ত আল ম হ ম মদ ক রআন র র আয় ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’
কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি।
এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়।
মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন।
বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।
শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ
রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে।
প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।