আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের ২৬তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা আহকাফ, সুরা মুহাম্মদ, সুরা ফাতহ, সুরা হুজুরাত ও সুরা জারিয়াতের ১ থেকে ৩০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। আজকের তারাবিহতে আল্লাহর সাহায্য, মুত্তাকিদের পুরস্কার, মা–বাবার আনুগত্য, নবীজির মুখে জিনদের কোরআন শ্রবণ, গুজব রটানো, যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে আচরণনীতি, হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়, সাহাবিদের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি, মানুষের সঙ্গে দুজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকা, কাফেরদের উত্থাপিত আপত্তির জবাব, যুদ্ধের হুকুম, মুমিনরা পরস্পরে ভাই ভাই, তাকওয়া, কসম, ওয়াদা, আল্লাহর আজমত ও বড় ইত্যাদির আলোচনা রয়েছে।

দুই সন্তানের দৃষ্টান্ত

কোরআনের ৪৬তম সুরা আহকাফ মক্কায় অবতীর্ণ, এর আয়াতের সংখ্যা ৩৫। এ সুরার ১৫ থেকে ১৭ নম্বর আয়াতে মা–বাবার অনুগত বিশ্বাসী সন্তান এবং মা–বাবার অবাধ্য সন্তানের উদাহরণ রয়েছে।

আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪

ভালো সন্তান সে, যার অন্তরে আছে আলো। আল্লাহ বিশ্বাসী, আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও খুশির জন্য আমল করতে চায়। মাতা–পিতার কল্যাণ কামনা করে। এমন সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে আছে পুরস্কার—জান্নাত।

খারাপ সন্তান সে, মাতা–পিতা যাকে ইমানের পথে দাওয়াত দিলেও যে দাওয়াত গ্রহণ করে না। অহংকার করে। তাদের কষ্ট দেয়। তাদের নির্বোধ মনে করে। এমন সন্তানের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি।

 এ ছাড়া এই সুরায় আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ, মুহাম্মদ (সা.

)-এর রিসালাত ও আখিরাত, মক্কার অবিশ্বাসীদের গোমরাহি, জেদ, গর্ব ও অহংকার, গোমরাহির ফলাফল সম্পর্কে অবিশ্বাসীদের সতর্কবার্তা, নবীজির মুখে কোরআন শুনে জিনদের মুগ্ধ হওয়ার গল্প, আদ জাতি ও তাদের ধ্বংসের ঘটনা রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-নামে সুরার নাম

কোরআনের ৪৭তম সুরা মুহাম্মদ মক্কায় অবতীর্ণ, এতে আয়াত আছে ৩৮টি। এ সুরায় মুহাম্মদ (সা.)-এর নাম থাকায়, এর নাম রাখা হয়েছে সুরা মুহাম্মদ। এটিকে সুরা কিতালও বলা হয়। কারণ, অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদের যুদ্ধের বয়ান আছে। এ সুরায় বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মধ্যে চির সংঘাত, আল্লাহর পক্ষ থেকে মুমিনদের সাহায্য, মুত্তাকিদের পুরস্কার, যুদ্ধ, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় ও কৃপণতা করা নিষেধ ইত্যাদির বয়ান রয়েছে।

সুরা মুহাম্মদের ৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। এক. যারা অবিশ্বাসী, দুই. যারা আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে ও তিন. অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়।

আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪

সুরা মুহাম্মদের ৩৮ নম্বর আয়াতে আছে, ‘দেখ, তোমরাই তারা, যাদের আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছ; যারা কার্পণ্য করে, তারা কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত, যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো, তাহলে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; তারা তোমাদের মতো হবে না।’ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা এবং অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো সম্পদশালীর ইমানি দায়িত্ব। ইসলাম ও মানুষের উপকারে সম্পদ ব্যয়ে কার্পণ্য করা নিন্দনীয় কাজ। সাধারণ খাতেও খরচ না করে কার্পণ্য করা উত্তমের পরিপন্থী এক অভ্যাস। রাসুল (সা.) কৃপণতা থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি চাইতেন। মানুষকে এ অভ্যাস ছাড়ার আদেশ দিয়েছেন তিনি।

নবীজি (সা.)-র প্রিয় যে সুরা

২৯ আয়াতবিশিষ্ট সুরা ফাতহ মক্কায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের ৪৯ নম্বর সুরা। ফাতহ অর্থ বিজয়। তখন ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাস। রাসুল (সা.) মক্কার অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সন্ধি চুক্তি শেষে মদিনার দিকে যাচ্ছিলেন, তখন সুরাটি নাজিল হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আজ বিকেলে আমার ওপর এমন এক সুরা নাজিল হয়েছে, যা আমার কাছে দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যবর্তী যা আছে, সব থেকে প্রিয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৮৩৩)

আরও পড়ুনইসলাম যাদেরকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে১৩ মার্চ ২০২৪

মক্কা বিজয় ও হুদায়বিয়া সন্ধির কথা

আল্লাহ হুদাইবিয়ার সন্ধির আকারে মুসলমানদের যে মক্কায় বিজয় দান করেছিলেন, সে বিষয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে সুরা মুহাম্মদে। রাসুল (সা.) একবার মদিনায় স্বপ্ন দেখলেন, তিনি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছেন। সাহাবিরা স্বপ্নের কথা জেনে খুব আনন্দিত হলেন। ষষ্ঠ হিজরির জিলকদ মাসে ১৪ শ সাহাবি নিয়ে ওমরাহ করতে নবীজি মক্কার পথ ধরলেন। পথে জানতে পারলেন, মক্কাবাসী যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। নবীজি জানালেন, তিনি শুধু ওমরাহ করতে আসছেন। এর মধ্যে নানা ঘটনা ঘটল। দুই দল আলোচনায় বসল। ১০ বছর পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির চুক্তি হলো। চুক্তির শর্তগুলো বাহ্যত মুসলমানদের দুর্বলতা প্রকাশ করলেও আল্লাহ এটাকে সুস্পষ্ট বিজয় বলেছেন। পরে বিজয় হয় মক্কা।

এ সুরায় মুমিন নর-নারীদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা এবং অবিশ্বাসী ও কপট ব্যক্তিদের শাস্তি, হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে নবীজির সঙ্গে উপস্থিত সাহাবিদের প্রতি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির ঘোষণা, খায়বার বিজয়ের সুসংবাদ প্রদান, নবীজির আনীত ধর্ম সব ধর্মের ওপর বিজয় লাভের কথা ও দুটি বিপরীতমুখী দলের আলোচনা রয়েছে।

গুজব ছড়ানো পাপ

১৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা হুজুরাত মদিনায় অবতীর্ণ। এ সুরার ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুসলমানেরা, যদি কোনো পাপাচারী লোক কোনো খবর নিয়ে আসে, তাহলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে, যেন অজ্ঞতাবশত কোনো জাতির ওপর আক্রমণ করা না হয়। এরূপ কাজ করলে তোমাদের নিজেদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনুতাপ করতে হবে।’

আরও পড়ুননারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং অলৌকিক তিন ঘটনা১২ মার্চ ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে। এখন যেকোনো তথ্য মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাই দুষ্কৃতকারীরাও এই মাধ্যমকে গুজব ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত করেছে। সংবাদ যাচাই-বাছাই না করে গুজব ছড়ানো মারাত্মক গুনাহ।

মানুষের মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে। সমাজজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সুরা হুজুরাতের ১১ থেকে ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন উপহাস করা, খোঁটা দেওয়া, মন্দ নামে ডাকা, অনুমান করা, দোষ অনুসন্ধান ও কুৎসা করা।

সুরা কফে যা আছে

৪৫ আয়াতবিশিষ্ট সুরা কফ মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরায় ইসলামের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস, অবিশ্বাসীদের প্রতি সতর্কবার্তা, পূর্ববর্তী জাতি ধ্বংসের কারণ, মানুষের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা, মানুষের সঙ্গে দুজন ফেরেশতা, মৃত্যুর সময় মানুষের আমলনামা বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাশরের ময়দানে মানুষের আমলের জবাব, জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ, আল্লাহর ইবাদত ও তাসবিহ পাঠের বর্ণনা রয়েছে।

সুরা জারিয়াতের বিষয়বস্তু

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা জারিয়াতের আয়াতের সংখ্যা ৬০। এ সুরার শুরুর অংশে আছে চারটি কসমের বয়ান। পরে মুত্তাকিদের উত্তম পরিণতি, তাদের উন্নত গুণ, আল্লাহর বড়ত্বের নিদর্শন ও ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে ফেরেশতাদের আগমন ইত্যাদি আলাপ রয়েছে।

রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম

আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অব শ ব স দ র আল ল হ ত আল ম হ ম মদ ক রআন র র আয় ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির। 

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”

আরো পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।

ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।

বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।

সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।

ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।

তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ