ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও চাপাপাড়া এলাকার তরুণ মিলন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তায় অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় শহরজুড়ে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছন থেকে নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন দিবাগত রাত একটার দিকে ভুক্তভোগী পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা। পরে মিলনকে ফিরে পেতে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীরা ৯ মার্চ রাত ১০টায় ঢাকাগামী ট্রেনে টাকা নিয়ে মিলনের বাবাকে উঠতে বলে। এরপর চলে মুঠোফোনে যোগাযোগ। পরে মিলনের বাবাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের সেনুয়া এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে টাকার ব্যাগটি বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতে বলে। টাকা পেয়ে অপহরণকারীরা সে সময় মিলনকে দিনাজপুর রেলস্টেশনে পাওয়া যাবে বলে তথ্য দেয়। কিন্তু খোঁজাখুঁজি করেও সেখানে মিলনের সন্ধান পায়নি পরিবার। ১৯ মার্চ দিবাগত রাতে সদর উপজেলার মহেশপুর বিট বাজার এলাকার একটি বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত টয়লেটের গর্ত থেকে মিলনের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশিদ জানান, ১৯ মার্চ রাতে মিলনকে অপহরণের ঘটনায় সেজান আলী (২৫) ও আরাজী পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ হোসেনকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা মিলনকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিলনের লাশ উদ্ধার হয়। পরে ঘটনায় জড়িত থাকায় সেজান আলীর মা শিউলি (৪৫) বেগম, সদর উপজেলার তেলীপাড়া এলাকার রত্না আক্তার (১৯) ও আকচা শামসনগর এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলামকে (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিলন হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও চাপাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে মিলন হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থানের পর তাঁরা বিক্ষোভ করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে চৌরাস্তায় এসে সড়কে অবস্থান নেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁরা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় শহরজুড়ে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলে তাঁরা সড়ক ছেড়ে যান। এরপর বেলা একটার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিক্ষোভকারীরা জানান, অপহরণের পর মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা নিয়েও মিলনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধু হত্যাই করেনি, তাঁর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, জিব কেটে নেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর কেউ ঘটানোর সাহস না করতে পারে, এ জন্য তাঁরা অপহরণ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, মিলন হত্যার ঘটনা নিয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপহরণ র অবস থ ন উপজ ল র এল ক র ঠ ক রগ ঘটন য় ম লনক

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক

বাড়ির ভেতর ঢুকে বাবা-মাকে মারধরের পর এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের বেপারীপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। বিকেল ৫টার দিকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও মূল অভিযুক্ত আটক করে পুলিশ। 

অভিযুক্ত সঞ্চয় (২০) উপজেলার ফাঁসিতলা এলাকার মোঘলটুলী গ্রামের রাফিউল ইসলাম রাফির ছেলে।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরেন ওই শিক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পর সঞ্চয়সহ ১৫-২০ জন লাঠি নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরের দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মালামাল লুট করে। এসময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। পরে তারা শিক্ষার্থীকে টেনেহিঁচড়ে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। 

আরো পড়ুন:

ধামরাইয়ে চালক-হেলপারকে মারধর করে তেলবাহী ট্রাক ছিনতাই 

সিরাজগঞ্জে সহপাঠীদের মারধরে আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু

পুলিশ বিকেল ৫টার দিকে পার্শ্ববর্তী কামারদহ ফেলুপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে চাঁন মিয়ার বাড়ি থেকে অপহৃত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। এসময় অভিযুক্ত সঞ্চয়কে আটক ও তার কাছে থাকা মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাওয়া আসার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছিলেন সঞ্চয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্চয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। 

ঘটনাটি নিশ্চিত করে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার অভিযান চালায়। একটি বাড়ি থেকে শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত সঞ্চয়কে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”

ঢাকা/মাসুম/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগারগাঁওয়ে সেনা অভিযানে অপহৃত ৪ কিশোর উদ্ধার
  • গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক
  • অপহরণে বাঁধা দেওয়ায় যুবককে গুলি করে হত্যা, আটক ৩
  • অপহৃতকে ছেড়ে দিয়ে পালানোর সময় অস্ত্র ও গুলিসহ অপহরণকারী আটক
  • ছাড়া পেলেন অপহৃত কৃষক, এক অপহরণকারী অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার