ঠাকুরগাঁওয়ে তরুণের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
Published: 23rd, March 2025 GMT
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও চাপাপাড়া এলাকার তরুণ মিলন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তায় অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় শহরজুড়ে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছন থেকে নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন দিবাগত রাত একটার দিকে ভুক্তভোগী পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা। পরে মিলনকে ফিরে পেতে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীরা ৯ মার্চ রাত ১০টায় ঢাকাগামী ট্রেনে টাকা নিয়ে মিলনের বাবাকে উঠতে বলে। এরপর চলে মুঠোফোনে যোগাযোগ। পরে মিলনের বাবাকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের সেনুয়া এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে টাকার ব্যাগটি বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতে বলে। টাকা পেয়ে অপহরণকারীরা সে সময় মিলনকে দিনাজপুর রেলস্টেশনে পাওয়া যাবে বলে তথ্য দেয়। কিন্তু খোঁজাখুঁজি করেও সেখানে মিলনের সন্ধান পায়নি পরিবার। ১৯ মার্চ দিবাগত রাতে সদর উপজেলার মহেশপুর বিট বাজার এলাকার একটি বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত টয়লেটের গর্ত থেকে মিলনের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মামুনুর রশিদ জানান, ১৯ মার্চ রাতে মিলনকে অপহরণের ঘটনায় সেজান আলী (২৫) ও আরাজী পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ হোসেনকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা মিলনকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিলনের লাশ উদ্ধার হয়। পরে ঘটনায় জড়িত থাকায় সেজান আলীর মা শিউলি (৪৫) বেগম, সদর উপজেলার তেলীপাড়া এলাকার রত্না আক্তার (১৯) ও আকচা শামসনগর এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলামকে (১৮) গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিলন হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও চাপাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে মিলন হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থানের পর তাঁরা বিক্ষোভ করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে চৌরাস্তায় এসে সড়কে অবস্থান নেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁরা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় শহরজুড়ে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলে তাঁরা সড়ক ছেড়ে যান। এরপর বেলা একটার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভকারীরা জানান, অপহরণের পর মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা নিয়েও মিলনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধু হত্যাই করেনি, তাঁর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, জিব কেটে নেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর কেউ ঘটানোর সাহস না করতে পারে, এ জন্য তাঁরা অপহরণ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, মিলন হত্যার ঘটনা নিয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপহরণ র অবস থ ন উপজ ল র এল ক র ঠ ক রগ ঘটন য় ম লনক
এছাড়াও পড়ুন:
আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
আড়াইহাজার উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল ও তার সহযোগী ফজলুল হক ওরফে ফজুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি ব্রিজের টোল-প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল (৩৮) আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ মকবুল হোসেনের পুত্র। অপরদিকে ফজলুল হক ওরফে ফজু (৩০) একই এলাকার আউয়ালের পুত্র।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সূকৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর বিরুদ্ধে নারয়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী ও মাদক, অপহরণ, চুরি, হত্যা চেষ্টাসহ ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফজলুল হক ফজু এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে র্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল বিগত ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে।
পরবর্তীতে সে অবৈধ মাদক সেবন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এক সময় সে এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। তখন থেকে সবাই ফেন্সি সোহেল হিসাবে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। তার পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফজলুল হক ফজু এই শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর একান্ত সহযোগী। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত। যারাই তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে তাদেরকেই সোহেল ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে।