বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে সস্তা শ্রম ও বাজারসুবিধায় প্রাধান্য দিচ্ছেন জাপানি ব্যবসায়ীরা। ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ জাপানি কোম্পানি সস্তা শ্রম ও বাজার সম্ভাবনার জন্য ব্যবসার পরিবেশের দিক থেকে বাংলাদেশকে শীর্ষে রেখেছে।

এ ছাড়া সাধারণ শ্রমিক ও কর্মচারীদের সহজ প্রাপ্তির জন্য ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ, ভাষাগত সুবিধার জন্য ২০ শতাংশ ও কোম্পানির করছাড়, প্রণোদনাসুবিধা ও বিশেষায়িত জনশক্তির জন্য ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ জাপানি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশকে এগিয়ে রাখছেন।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন, জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই) ও জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার (জেসিআইএডি) যৌথ আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেট্রোর এদেশীয় প্রতিনিধি ইউজি আন্দো জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন।

এ অঞ্চলে ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ভারতকে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছেন জাপানিরা। প্রায় ৮০ শতাংশ জাপানি কোম্পানি ভারতে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। এরপরই আছে বাংলাদেশের অবস্থান। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। যদিও এই হার গত বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে।

জরিপে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, এ দেশে ব্যবসা পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। এ ছাড়া সরকারের অস্পষ্ট নীতি ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর ঘাটতি, আইনের অস্পষ্টতা ও জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা—এই পাঁচ কারণ বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রধান ঝুঁকি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আমি তেমন চিন্তিত নই। গত ১৫ বছরে যে ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে, তা যথেষ্ট ছিল না। তাই জুলাই আন্দোলনের পর আমাদের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’

আশিক চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে ভালো ভিত্তি তৈরি করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে যাওয়া। এরপর আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন বিচার বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি ভালো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে, যাতে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি অব্যাহত থাকে।’ তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের চেয়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে চাকরির বাজার তৈরিতে।

জরিপে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ২০২৪ সালে ব্যবসায়িক আস্থা সূচক ৪১ দশমিক ৮ থেকে কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে। তবে ২০২৫ সালে এই সূচক বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, তাই ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ভালোর দিকে এগোচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে পণ্য সংগ্রহের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে পণ্যের মান ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ সরবরাহে উপযুক্ত সরবরাহকারীর অভাবকেও দায় করা হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমাতে স্থানীয় পর্যায়ে কেনাবেচা বৃদ্ধিতে নজর বাড়াতে বলা হয় জরিপে।

জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি তারেক রাফি ভূইয়া বলেন, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশকে আরও ভালো করতে হলে সংযোগশিল্পের উন্নয়ন, স্থানীয় পর্যায়ে কেনাবেচা বৃদ্ধি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিমণ্ডল উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।

বাংলাদেশের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে, যেখানে তাদের অংশীদারি ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে আছে জাপানি ও চীনা কোম্পানিগুলো। যাদের অংশীদারি যথাক্রমে ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৪২ দশমিক ৪শতাংশ।

জরিপে আরও যা উঠে এসেছে তা হলো ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে বাংলাদেশে কাজ করা ৫০ শতাংশ জাপানি কোম্পানির মুনাফা বাড়তে পারে। এ ছাড়া চলতি বছর এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগারীয় দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কাজ করা জাপানি কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি মুনাফা করবে বলে জরিপে উঠে এসেছে। এই তালিকায় শ্রীলঙ্কার পরে আছে পাকিস্তান, ভারত, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের অবস্থান। গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এই জরিপে বাংলাদেশে কাজ করা ১৭৫টি জাপানি কোম্পানিসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগারীয় অঞ্চলের মোট ১৩ হাজার ৭২৭টি জাপানি কোম্পানি এই জরিপে অংশ নেয়।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার (জেসিআইএডি) সহসভাপতি ইউজি ওয়াগাতা। আরও উপস্থিত ছিলেন জাপানি ব্যবসায়ী, বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় ক র জন ত ক পর স থ ত ক জ কর পর ব শ র জন য সবচ য় দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যানসারে আক্রান্ত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর শরীরে ত্বকের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। বমি ও নিম্ন রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।

আরো পড়ুন:

৬ বছর পর ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ প্লে-অফে বলিভিয়া

মারাকানায় ব্রাজিলের বড় জয়

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একদিন পর তার ত্বকের ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে।

বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তার ত্বকের পরীক্ষা করে ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ শনাক্ত হয়েছে।এটি ত্বকের মাঝারি মাত্রার ক্যানসার, যা সবচেয়ে হালকা ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ধাপের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেছেন যে, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৭০ বছর বয়সী বলসোনারো গত মঙ্গলবার বমি এবং নিম্ন রক্তচাপের কারণে ব্রাসিলিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ক্যানসারের বিষয়টি গত রবিবারের পরীক্ষায় ধরা পড়ে, যখন তার বুক ও হাতে থাকা ক্ষতস্থানের টিস্যু অপসারণ করা হয়েছিল।

তার অনকোলজিস্ট ক্লাউদিও বিয়ারোলিনি জানিয়েছেন, বলসোনারোর ক্যানসার ‘ইন সিটু’ ধাপে রয়েছে, অর্থাৎ অস্বাভাবিক কোষগুলো এখনো ছড়িয়ে পড়েনি। অস্ত্রোপচারই এর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট হবে। বর্তমানে বলসোনারোর শরীরে সেলাই ও ব্যান্ডেজ রয়েছে, যা দুই সপ্তাহের মধ্যে খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন, যেখানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

বলসোনারো ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই গৃহবন্দি ছিলেন। সম্প্রতি তাকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরেসের নির্দেশ অনুযায়ী, গৃহবন্দিত্বে থাকলেও চিকিৎসা জরুরি হলে তিনি বাসার বাইরে যেতে পারেন। তবে প্রতিবারই তার আইনজীবীদের আদালতে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়।

বলসোনারোর সমর্থকরা তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন, যাতে তিনি কারাগারে না গিয়ে বাড়িতেই সাজা ভোগ করতে পারেন। তাদের দাবি, কারাগারে নিলে তার শারীরিক জটিলতা বা দুর্ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়বে।

তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “আমার বাবা আগেও কঠিন লড়াই লড়ে জয়ী হয়েছেন। এবারও ভিন্ন কিছু হবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ