সস্তা শ্রম ও বাজারসুবিধায় প্রাধান্য দিচ্ছেন জাপানি ব্যবসায়ীরা: জেট্রোর প্রতিবেদন
Published: 23rd, March 2025 GMT
বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে সস্তা শ্রম ও বাজারসুবিধায় প্রাধান্য দিচ্ছেন জাপানি ব্যবসায়ীরা। ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ জাপানি কোম্পানি সস্তা শ্রম ও বাজার সম্ভাবনার জন্য ব্যবসার পরিবেশের দিক থেকে বাংলাদেশকে শীর্ষে রেখেছে।
এ ছাড়া সাধারণ শ্রমিক ও কর্মচারীদের সহজ প্রাপ্তির জন্য ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ, ভাষাগত সুবিধার জন্য ২০ শতাংশ ও কোম্পানির করছাড়, প্রণোদনাসুবিধা ও বিশেষায়িত জনশক্তির জন্য ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ জাপানি ব্যবসায়ী বাংলাদেশের ব্যবসা পরিবেশকে এগিয়ে রাখছেন।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন, জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই) ও জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার (জেসিআইএডি) যৌথ আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জেট্রোর এদেশীয় প্রতিনিধি ইউজি আন্দো জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন।
এ অঞ্চলে ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ভারতকে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছেন জাপানিরা। প্রায় ৮০ শতাংশ জাপানি কোম্পানি ভারতে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। এরপরই আছে বাংলাদেশের অবস্থান। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৫৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। যদিও এই হার গত বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে।
জরিপে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, এ দেশে ব্যবসা পরিবেশের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। এ ছাড়া সরকারের অস্পষ্ট নীতি ব্যবস্থাপনা, বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর ঘাটতি, আইনের অস্পষ্টতা ও জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা—এই পাঁচ কারণ বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রধান ঝুঁকি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আমি তেমন চিন্তিত নই। গত ১৫ বছরে যে ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে, তা যথেষ্ট ছিল না। তাই জুলাই আন্দোলনের পর আমাদের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে ভালো ভিত্তি তৈরি করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে যাওয়া। এরপর আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যেন বিচার বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি ভালো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে, যাতে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি অব্যাহত থাকে।’ তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগের চেয়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে চাকরির বাজার তৈরিতে।
জরিপে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ২০২৪ সালে ব্যবসায়িক আস্থা সূচক ৪১ দশমিক ৮ থেকে কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে। তবে ২০২৫ সালে এই সূচক বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, তাই ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ভালোর দিকে এগোচ্ছে। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে পণ্য সংগ্রহের সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে পণ্যের মান ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ সরবরাহে উপযুক্ত সরবরাহকারীর অভাবকেও দায় করা হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমাতে স্থানীয় পর্যায়ে কেনাবেচা বৃদ্ধিতে নজর বাড়াতে বলা হয় জরিপে।
জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি তারেক রাফি ভূইয়া বলেন, বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশকে আরও ভালো করতে হলে সংযোগশিল্পের উন্নয়ন, স্থানীয় পর্যায়ে কেনাবেচা বৃদ্ধি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিমণ্ডল উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে, যেখানে তাদের অংশীদারি ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে আছে জাপানি ও চীনা কোম্পানিগুলো। যাদের অংশীদারি যথাক্রমে ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৪২ দশমিক ৪শতাংশ।
জরিপে আরও যা উঠে এসেছে তা হলো ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে বাংলাদেশে কাজ করা ৫০ শতাংশ জাপানি কোম্পানির মুনাফা বাড়তে পারে। এ ছাড়া চলতি বছর এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগারীয় দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কাজ করা জাপানি কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি মুনাফা করবে বলে জরিপে উঠে এসেছে। এই তালিকায় শ্রীলঙ্কার পরে আছে পাকিস্তান, ভারত, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের অবস্থান। গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এই জরিপে বাংলাদেশে কাজ করা ১৭৫টি জাপানি কোম্পানিসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগারীয় অঞ্চলের মোট ১৩ হাজার ৭২৭টি জাপানি কোম্পানি এই জরিপে অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ঢাকার (জেসিআইএডি) সহসভাপতি ইউজি ওয়াগাতা। আরও উপস্থিত ছিলেন জাপানি ব্যবসায়ী, বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় ক র জন ত ক পর স থ ত ক জ কর পর ব শ র জন য সবচ য় দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে
তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।
এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।
বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে।
রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা।
নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা।
রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।
বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।
ঢাকা/শংকর/রফিক