জাতীয় নাগরিক পার্টি আগামীর বাংলাদেশে কোনোভাবেই বিভাজনের রাজনীতি হতে দেবে না। সবার জন্য এক বাংলাদেশ বিনির্মাণের শপথ নিয়ে রাজনীতি করতে চায় তারা। যেখানে বাংলাদেশের এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়াবে। আজ শনিবার রাজধানীর ইস্কাটনের নেভি কলোনিতে দলিত, হরিজন ও তফসিলি সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় এনসিপির গণমানুষের ইফতার আয়োজনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এসব কথা বলেন।

আখতার হোসেন বলেন, ‘নতুন ধারার রাজনীতি তৈরি করতে আমরা মধ্যম পন্থা চর্চার কথা বলেছি। আমাদের রাজনীতির শপথ এক বাংলাদেশ বিনির্মাণের, যেখানে বাংলাদেশে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ, পাহাড় কিংবা সমতলের এক হয়ে রাজনীতি করবে।’

ধর্মীয় বিভাজনকে পুঁজি করে বিদেশিরা তাদের আগ্রাসনের রাজনীতি তৈরি করে এমন মন্তব্য করে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা সকল সম্প্রদায়ের যে অনুভূতি, সেটাকে আমরা ধারণ করতে চাই। বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে আমরা আবদার রাখতে চাই, তরুণেরা যে বার্তা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছে, সে বার্তায় আপনারা সায় দেবেন।’

তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, ‘এই মানুষেরা, আমরা যাদের সংখ্যালঘু বলি, তারা সংখ্যালঘুর মাঝেও সংখ্যালঘু। তারা আমাদের জন্য ইফতার আয়োজন করেছে। এ এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির। আমরা তাই ভালোবেসে আনন্দচিত্তে সে আহার গ্রহণের জন্য বসে আছি। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর মুসলিম ভাই হিন্দু ভাইয়ের জন্য পাহারা দিতে গিয়েছিল। আজকে একজন দলিত ভাই মুসলমানের মুখে আহার নিয়ে এসেছে। তাই আমাদের লক্ষ রাখা উচিত যেন ধর্ম ও জাতের নামে কাউকে যেন ছোট করা না হয়।’

ইফতার আয়োজন নিয়ে দলিত, হরিজন ও তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস বলেন, ৫৩ বছর পর এই প্রথম রাজনীতিতে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁরা ঐতিহ্যগত, কাঠামোগত, আইনত বৈষম্যের শিকার। সামনের দিনে এই বৈষম্যগুলো দূর করার সময় এসেছে।

ভীমপল্লী ডেভিড রাজু বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল মানুষ এক। তাই আমরা আপনাদের সঙ্গে এক হতে যোগদান করেছি। ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন র র জন ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ