রোজায় মুখ দুর্গন্ধ করে রাখা উচিত কিনা
Published: 23rd, March 2025 GMT
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়; আল্লাহ বলেন, “সে আমার উদ্দেশ্যে তার পানাহার ও প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করেছে, রোজা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান। পুণ্যকর্মের প্রতিদান দশগুণ।”’ (বুখারি, হাদিস: ১,৮৯৪)
ভিন্ন শব্দে একই হাদিস আছে এভাবে, ‘রোজাদারের আনন্দের মুহূর্ত দুটি—ইফতারের সময়, আরেকটি হলো যখন সে প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। নিশ্চয় তার মুখের দুর্গন্ধ মেশকের সুগন্ধি থেকেও আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৫১)
এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে রোজাদার মুখ অপরিষ্কার রাখবেন। বরং রোজাদারের উচিত নিজেকে আল্লাহর সন্নিধানে পেশ করার জন্য পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকা। যাদের মুখ থেকে কোনো কারণে দুর্গন্ধ বের হয়, তারা অবশ্যই রমজান মাসে এই বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যাতে তার মুখের দুর্গন্ধের কারণে অন্য রোজাদারের কষ্ট না হয় এবং রোজার ও রোজাদারের অসম্মান না হয়।
আরও পড়ুনমক্কার খাবার পানির সমস্যা দূর করেছিল নহরে জুবাইদা১৬ মার্চ ২০২৫অনেকে বলেন যে রোজা থাকা অবস্থায় মুখ পরিষ্কার করা এবং মেসওয়াক করা মাকরুহ। রমজানে রাসুলের (সা.
এমনিতেও তিনি মেসওয়াকের প্রতি অশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। হাদিসে আছে, ‘মেসওয়াক মুখ পবিত্র করে এবং প্রভুর সন্তুষ্টি আনে।’ অন্য হাদিসে আছে, ‘মেসওয়াকের ব্যাপারে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমনকি একসময় আমার মনে হয়েছিল যে এ ব্যাপারে আমার ওপর কোরআন কিংবা ওহি নাজিল হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৩, ৭ ও ২২)
বোঝাই যায় যে রাসুল (সা.) রোজায় দিনের যেকোনো সময় মেসওয়াক করতেন, সকাল বা সন্ধ্যার পার্থক্য করতেন না। হাদিসে আছে, ‘আমার উম্মতের ওপর যদি বিষয়টি কঠিন না হতো, তবে প্রতি অজুর সময় তাদের জন্য মেসওয়াক আবশ্যক করে দিতাম।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৯,৯৩০)
আরও পড়ুনরমজানে নবীজির (সা.) সফর হলে১৭ মার্চ ২০২৫অন্য হাদিসে আছে, ‘মুমিনদের কষ্টকর না হলে প্রতি নামাজের সময় তাদের জন্য মেসওয়াক করা আবশ্যক করে দিতাম।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫২)
খ্যাতিমান হাদিস বিশারদ ইবনে আব্দুল বার বলেন, ‘এ-হাদিস প্রমাণ করে, যেকোনো সময় মেসওয়াক বৈধ। হাদিস দুটিতে রাসুল (সা.) ‘প্রতি ওজুকালে’ এবং ‘প্রতি নামাজকালে’ বাক্যাংশ দুটি ব্যবহার করেছেন। নামাজ নির্দিষ্ট একটি সময়ে নয়, বরং ওয়াজিব হয় দ্বিপ্রহর, বিকেল ও রাতের নানা সময়ে।’ (আত-তামহিদ , ৭/১৯৮)
এই হাদিসের ভাষ্যে ইমাম বোখারির উক্তি হলো, ‘রোজাদারকে এ হুকুমের আওতা-বহির্ভূত করা হয়নি।’
ইবনে খুযাইমা বলেন, ‘হাদিসে প্রমাণ হয় স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তির জন্য যেভাবে প্রতি নামাজের সময় মেসওয়াক করা ফজিলতের বিষয়, তেমনিভাবে ফজিলতের বিষয় রোজাদারের জন্যও। সুন্নতের অনুসারীগণের অবশ্য কর্তব্য বিষয়টির প্রতি যত্নশীল হওয়া।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, ৩/২৪৭)
মেশকের সুঘ্রাণের চেয়েও আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ অধিক প্রিয়—হাদিসটির অর্থ হচ্ছে, রোজা রাখার কারণে পেট খালি থাকায় অনেক সময় এক ধরনের গন্ধ অনুভব হয়। রোজাদারের মুখের এই গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েই উত্তম, ভালো ও প্রিয়। কারণ, এই গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে তার ইবাদত পালন ও আল্লাহ তাআলার হুকুমের অনুসরণের ফলে। সুতরাং রোজা অবস্থায় মেসওয়াক করাকে পূর্বসূরি আলেম দূষণীয় মনে করেননি।
তবে কেউ কেউ কাঁচা ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা এবং দিবস শেষে মেসওয়াক করাকে মাকরুহ মনে করেছেন। যদিও ভেজা ও শুকনা মেসওয়াকের মধ্যে রাসুল (সা.) পার্থক্য করেছেন—এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইবনে সিরিনের (রহ.) কাছে কেউ এমন ভেজা মেসওয়াকের প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘এতে কোনো অসুবিধা নেই, এটা কেবল খেজুরের ডাল, এর স্বাদ রয়েছে। যেমন স্বাদ রয়েছে পানির, অথচ তা দিয়ে তুমি কুলি কর।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯১৭১)
ইবনে উলায়া বলেন, ‘রোজাদার কিংবা পানাহারকারী—উভয়ের জন্যই মেসওয়াক করা সুন্নত। মেসওয়াক শুকনা হোক কিংবা ভেজা—দুটোই সমান।’ (আত-তামহিদ, ৭/১৯৯)
আরও পড়ুনবদর যুদ্ধ: ইতিহাসের বাঁক বদলের ঘটনা১৭ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম সওয় ক র অবস থ য় কর ছ ন র জন য আল ল হ র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’