বিদেশে পড়াশোনা যাদের লক্ষ্য, তাদের পছন্দের শীর্ষে ইউরোপের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়। ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের স্কলারশিপ মেলে। ফলে ইউরোপের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি মওকুফের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এসব স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন।
আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
ফ্রান্স ইতোমধ্যে বিনা টিউশনে শিক্ষার জন্য পরিচিতি পেয়েছে। এ ছাড়া ফ্রেঞ্চ সংস্থা ক্যাম্পাস ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে সহায়তা করে। ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ইউরোপ এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক ফরাসি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এটি তৈরি করা হয়।
আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম মাসিক ভাতা, রিটার্ন ট্রিপ, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং স্বাস্থ্য বীমার খরচ কাভার করে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে উন্নয়নশীল ও শিল্পোন্নত থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
বিস্তারিত জানতে
https://www.
সুইডিশ ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ
২০১২ সাল পর্যন্ত বিনা টিউশন ফিতে সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার সুযোগ ছিল। এর পর থেকে সেখানে টিউশন ফি পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সুইডিশ ইনস্টিটিউট থেকে স্কলারশিপ পেলে কোনো ফান্ড ছাড়াই পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। সুইডেনে স্নাতকোত্তর করতে আগ্রহী হলে এই স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে। সুইডিশ ইনস্টিটিউট থেকে প্রদত্ত স্কলারশিপ টিউশন ফি ছাড়াও জীবনযাত্রার ব্যয়, বীমা এবং ভ্রমণ খরচ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু দেশের শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে।
বিস্তারিত জানতে https://si.se/en/apply/scholarships/
ব্রিটিশ শেভেনিং স্কলারশিপ
ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস (এফসিও) এবং এর অংশীদার সংস্থার অর্থায়নে ব্রিটিশ শেভেনিং স্কলারশিপ দেওয়া হয়। শেভেনিং অ্যাওয়ার্ড সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকে– শেভেনিং স্কলারশিপ এবং শেভেনিং ফেলোশিপ। ব্রিটিশ দূতাবাস এবং হাইকমিশন কর্তৃক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্কলারশিপ গ্রহণকারীদের নির্বাচন করা হয়। এক বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রোগ্রামের জন্য এই স্কলারশিপ টিউশন ফি, নির্দিষ্ট হারে আবাসিক ভাতা, যুক্তরাজ্যে একটি ইকোনমি ক্লাসের রিটার্ন বিমানের ভাড়া এবং ওয়ার্কশপের জন্য অন্যান্য ভ্রমণ খরচ কভার করে।
বিস্তারিত জানতে
https://www.chevening.org/
ড্যাড স্কলারশিপ
জার্মানিতে ইংরেজি ভাষার প্রোগ্রামে ৪০০ থেকে ৭০০ ইউরোতে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা টিউশন ফিতেও পড়া যায়। জার্মানির সরকারের অনুমোদনে দেশের সবচেয়ে বড় সংস্থা ড্যাড এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকার কিছু অংশ এবং পূর্ব ইউরোপের তরুণ এবং পেশাদার শিক্ষার্থীদের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য প্রতি বছর স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
বিস্তারিত জানতে https://www2.daad.de/deutschland/ stipendium/ datenbank/en/21148-scholarship-database/
গেটস কেমব্রিজ স্কলারশিপ
যুক্তরাজ্যের বাইরের দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেওয়া হয়। স্কলারশিপটি টিউশন ফি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পোজিশন ফি, বিমান ভাড়া এবং ভিসা খরচ কাভার করে। নন-ইউরোপিয়ান নাগরিকদের জন্য এই স্কলারশিপে মোট ৯০টি আসন রাখা হয়।
বিস্তারিত জানতে : http://www.gatescambridge.org/
রোডস স্কলারশিপ
১৯০২ সালে সেসিল রোডস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রোডস হলো বিশ্বের প্রাচীনতম এবং সম্ভবত সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৃত্তি প্রোগ্রাম। এটির মাধ্যমে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর করার সুযোগ পান। রোডস স্কলারশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ, ব্যক্তিগত উপবৃত্তি, স্বাস্থ্য বীমা এবং বিমান ভাড়া কাভার করে।
বিস্তারিত জানতে : https://www.rhodeshouse. ox.ac.uk/ scholarships/the-rhodes-scholarship/ v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব স ত র ত জ নত প র জন য ট উশন ফ ইউর প র ভ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।