প্রায় দেড় বছর ধরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল ভারত সরকার। পেঁয়াজের মজুত বেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় পর এই বিধিনিষেধ থেকে বেরিয়ে এল দেশটি। গত শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, আগামী ১ এপ্রিল থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে সব শুল্ক তুলে নিচ্ছে দেশটি। এত দিন ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।

এমন সময়ে ভারত শুল্ক প্রত্যাহার করছে, যখন দেশের বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজে ভরপুর। উৎপাদন মৌসুমের কারণে দেশি পেঁয়াজের দামও তুলনামূলক কম। দেশের বাজারে দাম তুলনামূলক কম থাকায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিও কমেছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হতো, সেখানে গত জানুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ২৯ হাজার টন। ফেব্রুয়ারি মাসে তা আরও কমে নেমেছে ২৪ হাজার টনে।

আমদানিকারক ও উৎপাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার দুটি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের বাজারে। প্রথমত ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে। অর্থাৎ ক্রেতারা বর্তমানের চেয়ে আরও কম দরে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। দ্বিতীয়ত দেশি পেঁয়াজ উৎপাদকেরা ভালো দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন। ভালো দাম না পেলে আগামী মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হতে পারেন কৃষকেরা।

* বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪১ থেকে ৪২ টাকা। * শুল্ক প্রত্যাহার করায় ২৫ থেকে ৩০ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। * বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, পেঁয়াজের দামে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে কৃষি বিভাগ। কারণ, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি বিভাগ। এখন ভারত থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানির অনুমতির মেয়াদ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে কৃষি বিভাগ; যাতে ভোক্তাদের পেঁয়াজ কিনতে বেশি দাম দিতে না হয়, আবার উৎপাদকেরাও যেন ন্যায্য দাম পান।

আমদানি খরচ কমবে ৯-১০ টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানির দাম পড়ছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ খালাসের সময় শুল্ক–কর দিতে হচ্ছে ৫ টাকা। তাতে সব মিলিয়ে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ৪১ থেকে ৪২ টাকা। এর বাইরে রয়েছে পরিবহন খরচ। তবে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

পেঁয়াজ আমদানিকারকেরা জানান, ভারতের রপ্তানি শুল্কের কারণে এত দিন পেঁয়াজ আমদানিতে প্রতি কেজিতে বাড়তি খরচ পড়ত ৯ থেকে ১০ টাকা। শুল্ক প্রত্যাহার করায় প্রতি কেজিতে এই খরচ কমবে। তাতে ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে ২৬ থেকে ২৭ টাকা খরচ পড়তে পারে।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মারিয়া করপোরেশনের কর্ণধার মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভারত শুল্ক প্রত্যাহার করায় ২৫ থেকে ৩০ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। এতে পেঁয়াজের দামে অস্থিতিশীলতার শঙ্কা থাকবে না।

শুল্ক প্রত্যাহারে শঙ্কায় কৃষকেরা

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করায় এখন দেশি উৎপাদকেরা শঙ্কায় আছেন। কারণ, উৎপাদন মৌসুমের কারণে এমনিতেই পেঁয়াজের দাম কম। নতুন করে কম দামে আমদানি হলে উৎপাদকদের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এতে লোকসানেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির হিসাবে, বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। গত বছর এই সময়ে দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার কৃষকেরা পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়িয়েছেন। তবে বাজারে দাম কমে যাওয়ায় এখন তাঁদের মাথায় হাত।

কৃষকেরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে যে পেঁয়াজের দাম, তাতে তাঁদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। নতুন করে দাম আরও কমলে তাঁরা লোকসানের শিকার হবেন।

পাবনার সাঁথিয়ার বায়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি আবদুল হাই সরকার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাজারে বর্তমানে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তাতে উৎপাদন খরচই উঠবে না। এমনিতে বৃষ্টির কারণে এবার ফলনের ক্ষতি হয়েছে। এখন দামের কারণেও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। প্রতি কেজি হালি পেঁয়াজ উৎপাদনে ৪৫ টাকার মতো খরচ পড়েছে। অথচ বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। ভারত রপ্তানি শুল্ক তুলে নেওয়ায় দাম আরও কমলে কৃষকেরা বড় ক্ষতিতে পড়বেন।

পেঁয়াজের তথ্যে অস্পষ্টতা

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অস্পষ্টতা চলে আসছে। যেমন কৃষি বিভাগের হিসাবে গত অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৯ লাখ টন। পরিসংখ্যান ব্যুরো কৃষি বিভাগের হিসাব থেকে ২৫ শতাংশ বাজারজাতজনিত ক্ষতি বাদ দিয়ে হিসাব করে। তাদের হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় ২৯ লাখ ১৭ হাজার টন। আবার ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন।

চাহিদার বাড়তি উৎপাদন হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানি হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিবছর পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। যেমন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে গত অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজার টন।

দেশে প্রতিবছর কী পরিমাণ পেঁয়াজের প্রয়োজন, তার কত অংশ দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব এবং কত অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। আর সেই সুযোগটাই নেন মজুতদারেরা। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেন তাঁরা। ফলে এই সময় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উৎপাদকেরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ম আরও কম য় জ উৎপ দ য় জ আমদ ন হ জ র টন আমদ ন র

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে
  • দক্ষিণ সিটির রাজস্ব আদায়ে ধস, আন্দোলনের ক্ষত এখনো কাটেনি
  • ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন