ট্রাম্পের আমলে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কী অগ্রগতি হলো
Published: 24th, March 2025 GMT
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আজ সোমবার নতুন আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর যুদ্ধবিরতি আলোচনা গতি পেয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি তিনি প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেন। আসুন, তাঁর আসার পর যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি সম্পর্কে ঘটনাবলি জেনে নেই—
মস্কোর ওপর ওয়াশিংটনের চাপ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পরপরই ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘একটি চুক্তি’ করা দরকার। ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি (পুতিন) চুক্তি না করে রাশিয়াকে ধ্বংস করছেন।’
এর দুদিন পর, ট্রাম্প হুমকি দেন, ‘এখনই’ চুক্তি না করলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের লাগাম টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে’ যুদ্ধ বন্ধ করবেন। যদিও পরে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
গত ২৪ জানুয়ারি পুতিন বলেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছেন।
অন্যদিকে, কিয়েভ ও ইউরোপের দেশগুলোকে এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সম্পাদিত চুক্তির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে ইউক্রেন।
আরও পড়ুনইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র২১ মার্চ ২০২৫খনিজ নিয়ে আলোচনাফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজ নিয়ে একটি চুক্তি করতে আগ্রহী। এর আওতায় ইউক্রেনের প্রাকৃতিক সম্পদের ৫০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আসবে। এটা হবে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তার প্রতিদান।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, এই চুক্তি ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে না।
রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কোন্নয়নগত ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প বলেন, তিনি আর পুতিন ফোনালাপের সময় ‘অবিলম্বে’ ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা শুরু করতে একমত হয়েছেন।
ওয়াশিংটন বলে, ইউক্রেনের পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগদানের অভিপ্রায় এবং ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের আগেকার সীমান্ত ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কার্যত অবাস্তব।
জেলেনস্কি তাঁর ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কিয়েভ ও ইউরোপের দেশগুলোকে ডিঙিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সম্পাদিত কোনো চুক্তি গ্রহণ না করতে।
১৮ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদে আলোচনায় বসেন রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর এত উচ্চ পর্যায়ে এটাই প্রথম বৈঠক।
আরও পড়ুনযুদ্ধ বন্ধে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন জেলেনস্কি১৯ মার্চ ২০২৫ট্রাম্প–জেলেনস্কি বিরোধসময়টা ১৯–২০ ফেব্রুয়ারি। জেলেনস্কির উদ্দেশে তোপ দাগেন ট্রাম্প। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে, এমনকি ‘একনায়ক’ বলেন তিনি।
মস্কোর বাগাড়ম্বরে সায় দিয়ে যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
এরপর ২৮ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন সফরে যান জেলেনস্কি। ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং খনিজ চুক্তি সই করা ছিল জেলেনস্কির এ সফরের উদ্দেশ্য।
শেষ পর্যন্ত ওই চুক্তি সই হয়নি। হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিমিয় হয়। এ সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গেও জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডা হয়। টিভি ক্যামেরার সামনে ঘটা এসব বিতণ্ডা পুরো বিশ্বের মানুষ দেখেন।
পরে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘অশ্রদ্ধা’ দেখিয়েছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, জেলেনস্কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে বাজি খেলছেন। তিনি বলেন, জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে মিটমাট না করলে ‘আমরা বেরিয়ে যাব.
৩ মার্চ ইউক্রেনকে দেওয়া সামরিক সহায়তা স্থগিত করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জেলেনস্কি ট্রাম্পকে তুষ্ট করার মতো আচরণ করেন।
৬ মার্চ ২৭ দেশের ইউরোপীয় জোট (ইইউ) একটি পরিকল্পনা অনুমোদন দেয়। ওই পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া এবং মহাদেশটির নিরাপত্তার জন্য চার বছরে ৮৭ কোটি ডলারের বেশি অর্থসহায়তা করার কথা বলা হয়েছে।
মার্কিন প্রস্তাবে ইউক্রেনের সম্মতি১১ মার্চ রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরিকল্পনায় সম্মতি দেয় ইউক্রেন। এটা ওয়াশিংটনের প্রস্তাব ছিল, যা মেনে নেন জেলেনস্কি। কেননা, ওই সময় ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সম্মুখ সমরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল।
এর বিপরীতে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান–প্রদান স্থগিতের আদেশ তুলে নিতে সম্মতি দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি চুক্তি সইয়ের বিষয়েও রাজি হয় ওয়াশিংটন ও কিয়েভ।
রুশ বাহিনী অভূতপূর্ব দ্রুততার সঙ্গে কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের বাহিনীর দখলে থাকা এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করে।
আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কীভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হতে পারে১৪ মার্চ ২০২৫পুতিনের দেওয়া শর্ত১৮ মার্চ ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ হয়। এ সময় ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা না চালানোর বিষয়ে সম্মতি দেন পুতিন। যুদ্ধ বন্ধে শিগগিরই আলোচনায় বসা ও বন্দিবিনিময়ের বিষয়েও তাঁরা একমত হন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মতৈক্য হয়নি।
ক্রেমলিন বলছে, পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা বা নতুন করে অস্ত্র সরবরাহ করা পশ্চিমাদের বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়াও।
গতকাল রোববার (২৩ মার্চ) সৌদি আরবে ইউক্রেন ও মার্কিন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে।
ক্রেমলিন সতর্ক করে বলেছে, আলোচনা ‘জটিল’ হতে পারে। শান্তির জন্যও যাত্রা দীর্ঘ করতে হবে।
আরও পড়ুনপুতিন কি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবেন১৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র ইউক র ন র স য দ ধ বন ধ য় ইউক র ন বন ধ ক প রস ত র জন য ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।