২০১৬ সালে ঢাকার কল্যাণপুরে ‘জাহাজ বাড়ি’তে জঙ্গি নাম দিয়ে ইসলামিক ভাবধারার ৯ তরুণকে হত্যা করার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা (মিসকেস) করা হয়েছে।

এই মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ডিএমপি মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) মো.

জসীম উদ্দীন মোল্লাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এর আগে পুলিশের তিন কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকে পুলিশের সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের এই তিন কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। পরে তাঁদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে পুলিশের এই কর্মকর্তারা জঙ্গি নাটক করেছিলেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ মে।

শুনানি শেষে সাংবাদিকদের ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়ি নামের একটি বাড়িতে ৯ তরুণকে আটকে রেখে সোয়াত, সিটিটিসিসহ গিয়ে তাদের বাসার মধ্যে গুলি করে হত্যা করে। জঙ্গি হত্যা করা হয়েছে বলে তারা প্রচার করে।

তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানতে পেরেছে, এই ৯ তরুণকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে বহু আগে। কেউ কেউ ডিবি হেফাজতে ছিলেন দুই-তিন মাস ধরে। সেখান থেকে তাঁদের ধরে নিয়ে রাতে ওই বাসায় জড়ো করা হয়। পরে রাতের বেলা ব্লক রেইডের কথা বলে সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই হাজির হন। সেই লোকদের গুলি করে হত্যা করে জঙ্গি হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁরা প্রচার করেন। সে সময় জঙ্গি নাটক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য ইসলামিক ভাবধারার মানুষদের জঙ্গি নাম দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এ সময় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ