মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীর মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ক্ষোভ
Published: 24th, March 2025 GMT
বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস কর্মচারীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। পাশাপাশি এ ঘটনায় ওই ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এই বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বকেয়া মজুরির দাবি করতে গিয়ে কর্মচারীর মৃত্যুর দায় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও হয়রানি ঠেকানোর পাশাপাশি দেশের সব খাতের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও বোনাস পরিশোধ এবং কৃষকের পণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে বেতন–ভাতার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে অসুস্থ হয়ে রাম প্রসাদ সিং (৪০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। রাম প্রসাদ গাজীপুরের স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ান্স (বিডি) লিমিটেডের সহকারী প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়েও ন্যূনতম বকেয়া মজুরি ও কারখানা খোলার দাবিতে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিকদের বারবার রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে। কিন্তু সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্টাইল ক্রাফটস লিমিটেডের ২৫০ শ্রমিক তাঁদের ১৪ মাসের বকেয়া মজুরি এবং ঈদ বোনাসের দাবিতে ৫ দিন ধরে ঢাকার বিজয়নগরে অবস্থিত শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে আন্দোলনরত অবস্থায় কোম্পানির একজন কর্মকর্তা স্ট্রোক করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল সকাল থেকে টিএনজেড গ্রুপের আ্যাপারেলস ইকো প্লাস লিমিটেডের প্রায় ৭০০ জন শ্রমিক ৩ মাসের বকেয়া মজুরি ও ঈদ বোনাসের দাবিতে অবস্থান করেছেন। এ ছাড়া সিলেটের কালাগুল, বুরজান, ছড়াগানসহ চারটি চা-বাগানের শ্রমিকেরা ১৪ সপ্তাহ ধরে মজুরি এবং ৮ সপ্তাহ ধরে রেশন পাচ্ছেন না।
চাষিদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, কোল্ডস্টোরেজের মালিকেরা রাতারাতি প্রতি কেজি আলুর ভাড়া দ্বিগুণ করেছেন। ফলে কোল্ডস্টোরেজে আলু রাখতে পারছেন না কৃষকেরা; বরং উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম দামে আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। টমেটো ও পেঁয়াজচাষিদের ক্ষেত্রে একই রকম ঘটনা দেখা যাচ্ছে। পোশাকশ্রমিক, চা–শ্রমিক, আলু, টমেটো, পেঁয়াজচাষিসহ এই মেহনতি মানুষদের চরম অনিশ্চয়তা ও বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ ব ন স র দ ব ত অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫