Prothomalo:
2025-09-18@04:53:28 GMT

মানুষ সৃষ্টির কারণ

Published: 24th, March 2025 GMT

আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা জারিয়াতের ৩১ থেকে সুরা তুর, সুরা নাজম, সুরা কমার, সুরা রহমান, সুরা ওয়াকিয়া ও সুরা হাদিদ তেলাওয়াত করা হবে। ২৭তম পারা পড়া হবে। আজকের তারাবিহতে পূর্ববর্তী জাতির অবাধ্যতার পরিণতি, মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য, নবীজির দাওয়াত, মেরাজ, উপদেশ, নবীজির হাতের ইশারায় চাঁদ বিদীর্ণ হওয়া ও আল্লাহর পথে জীবন-সম্পদ উৎসর্গ, আসমান-জমিন সৃষ্টি, কাফেরদের ভ্রান্ত চিন্তার খণ্ডন, তাকদির, আল্লাহর অস্তিত্ব, ইমান, ইমানদারের প্রতিদান ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।

 মানুষ সৃষ্টির কারণ

আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ পাঠাতে চাইলেন। ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করব। পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি পাঠাব।’ ফেরেশতারা বললেন, ‘আমরাই তো আপনার প্রশংসা করছি। মানুষ পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা করবে। মারামারি করবে।’

আল্লাহ আদম (আ.

)-কে বানালেন। পৃথিবীতে পাঠালেন। এই আদমের জাতি মানুষ আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি। আল্লাহ মানুষকে ভালোবেসে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাঁর আদেশ মোতাবেক চলার জন্য।

আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৬) আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথ ও মতে জীবন পরিচালনা করা হলো ইবাদত।

আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪

সুরা তুরে যা আছে

৪৯ আয়াত বিশিষ্ট সুরা তুর মক্কায় অবতীর্ণ, এটি কোরআনের ৫২তম সুরা।

রাসুল (সা.) তখন মক্কায়। মাগরিব নামাজ পড়ছিলেন। নামাজে তিলাওয়াত করছিলেন সুরা তুর। জুবাইর ইবনে মুতইম তখনো মুসলমান হননি। তিনি তিলাওয়াত শুনছিলেন। যখন সুরা তুরের ৩৫ থেকে ৩৭ নম্বর আয়াত শুনলেন, তার মনে হলো, অন্তরাত্মা উড়তে শুরু করেছে। সেদিনই তাঁর অন্তরে ইসলাম জায়গা করে নিয়েছে।

সেই আয়াতগুলোর অর্থ হলো, ‘তারা কি আপনা-আপনিই সৃষ্টি হয়ে গেছে, না কি তারাই (নিজেদের) স্রষ্টা? নাকি আকাশমণ্ডলি ও পৃথিবী তারা সৃষ্টি করেছে? না; বরং মূল কথা হচ্ছে, তারা বিশ্বাসই রাখে না। তোমার প্রতিপালকের ভান্ডার কি তাদের কাছে রয়েছে? নাকি তারাই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক?’ (সুরা তুর, আয়া: ৩৫-৩৭; বুখারি, ৩০৫০, ৪৮৫৪; দালাইলুন নুবুওয়া, আবু নুআইম, ১/৩০৮)

সুরা তুরের ১৭ থেকে ২৮ নম্বর আয়াতে জান্নাতে তাঁদের জন্য কী কী নেয়ামত থাকবে, তার বিবরণ রয়েছে। যেমন তাঁরা দোজখ থেকে রক্ষা পাবেন, সুখে ও সম্পদে থাকবেন, তৃপ্তির সঙ্গে খাবেন ও পান করবেন, সবকিছু আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করবেন, সারি সারি সাজানো আসনে হেলান দিয়ে আরামে বসবেন, সুন্দরী রমণী পাবেন, তাঁদের সন্তানেরাও তাঁদের সঙ্গে থাকবেন, ফলমূল ও গোশত পাবেন, শরাব পান করবেন; কিন্তু অনর্থক প্রলাপ করবেন না, তাঁদের সেবায় সুরক্ষিত মণিমুক্তা সদৃশ কিশোরেরা থাকবেন।

আরও পড়ুনমুসা ও খিজির (আ.)-এর চিত্তাকর্ষক গল্প২৩ মার্চ ২০২৪

যে আয়াত শুনে অবিশ্বাসীরাও সিজদা করেছিল

৬২ আয়াত বিশিষ্ট সুরা নাজম মক্কায় অবতীর্ণ, এটি কোরআনের ৫৪তম সুরা। যখন এ সুরার শেষ আয়াত নাজিল হয়েছিল, রাসুল (সা.), উপস্থিত সাহাবি ও অবিশ্বাসীরা সিজদা করেছিল। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

এ সুরায় আল্লাহ বেশ কিছু বিষয়ের কসম করে মুহাম্মাদ (সা.)-এর সত্য নবী হওয়া, তাঁর প্রতি নাজিলকৃত ওহিতে সন্দেহ ও সংশয় না থাকার প্রমাণ, মূর্তি উপাসক ও যারা ফেরেশতাদের আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে তাদের নিন্দা, কিয়ামতের বর্ণনা, কারও গুনাহের বোঝা অপরের কাঁধে চাপানো হবে না এবং আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা রয়েছে।

 চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার গল্প

৫৫ আয়াত বিশিষ্ট সুরা কমার মক্কায় অবতীর্ণ। এটি কোরআনের ৫৪ তম সুরা। সুরার শুরুতে রাসুল (সা.)-এর আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার আলোচনা থাকায়, এর নাম সুরা কমার রাখা হয়েছে।

তখন ইসলামের শুরুর সময়। রাসুল (সা.) মক্কার অবিশ্বাসীদের একত্ববাদের দাওয়াত দিচ্ছেন। তারা অস্বীকার করে চলল। একবার আবু জাহেলের নেতৃত্বে একদল মুশরিক ও ইহুদিরা জানাল, ‘যদি মুহাম্মাদ চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করতে পারে, তাহলে তাঁকে আল্লাহর রাসুল হিসেবে মেনে নেব।’

জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ। নবীজি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। চাঁদের দিকে আঙুল ইশারা করলেন। চাঁদ দিখণ্ডিত হয়ে যায়। অবিশ্বাসীরা ব্যাপারটি জাদু বলল। ইহুদিদের কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তারা তাওরাতে চাঁদের ব্যাপারটি পড়েছিল। দ্বিখণ্ডিত চাঁদ মক্কার বাইরের লোকজনও দেখেছিল। তারপরও অবিশ্বাসীরা বলল, ‘এটা জাদু। আমরা তাঁকে রাসুল মানব না।’

আরও পড়ুনআল্লাহর নিদর্শন উট হত্যা করেছিল সামুদ জাতি২১ মার্চ ২০২৪

নেয়ামতের বর্ণনা সুরা রহমানে

কোরআনের ৫৫তম সুরা রহমান মদিনায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৭৮। এ সুরার প্রথম আয়াতটিই হলো, আর-রহমান, তাই এর নাম রহমান রাখা হয়েছে। এ সুরার আরেক নাম ‘উরুসুল কোরআন’ বা ‘কোরআনের নববধূ’।

জগতের সবকিছু মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। সুরা রহমানে আল্লাহ দুনিয়া-আখিরাতের বহু নেয়ামতের উল্লেখ করেছেন। এ নেয়ামতের বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ মোট ৩১ বার প্রশ্ন করেছেন, ‘অতএব তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে?’

 সুরা ওয়াকিয়ার বিষয়বস্তু

৯৬ আয়াতবিশিষ্ট সুরা ওয়াকিয়া মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আরেক নাম গিনা, অর্থাৎ সমৃদ্ধিশালী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, তাকে কখনো দারিদ্র্য স্পর্শ করবে না।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি: ২৪৯৮)

এ সুরায় কিয়ামতের সময়কার বিভিন্ন বর্ণনা, কিয়ামতের দিন মানুষের শ্রেণি বিভেদ, আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ববাদ, কুদরত ও ক্ষমতার প্রমাণ, পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশ, কোরআনের মাহাত্ম্য, মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ও আল্লাহর আনুগত্য ইত্যাদির কথা আছে।

আরও পড়ুনইউসুফ (আ.) কি জুলেখাকে বিয়ে করেছিলেন২০ মার্চ ২০২৪

লোহা সৃষ্টির কারণ

২৯ বিশিষ্ট সুরা হাদিদ মদিনায় অবতীর্ণ। হাদিদ অর্থ লোহা। লোহা সৃষ্টির আলোচনা থাকায় এ সুরার নাম হাদিদ।

তাফসিরে ইবনে কাসিরে আছে, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, সুরার ৩ নম্বর আয়াতটি অন্যান্য হাজার আয়াত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ এ সুরায় আল্লাহ লোহা সৃষ্টির দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এক. এতে শত্রুদের মনে ভীতি সঞ্চার হয়। দুই. এতে রয়েছে বহুবিধ কল্যাণ।

জগতের সবকিছু আল্লাহর, তিনি মালিক, সবকিছু তাঁর প্রশংসা করে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান, দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জীবন-সম্পদ কোরবানি, দুনিয়ার মোহে ধোঁকায় না পড়া, আল্লাহর ভয় ইত্যাদির বয়ান আছে এ সুরায়।

রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম

আরও পড়ুননুহ নবীর (আ.) নৌকা১৯ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অব শ ব স র ক রআন র র জন য ন য় মত কর ছ ল র আয় ত কর ছ ন য় মত র আল ল হ করব ন সবক ছ রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ