ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাঁর অভিষেক ভাষণে অভিবাসনকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি ঘোষণা দেন, ‘আমি আমাদের দেশের ওপর এই ভয়াবহ আগ্রাসন প্রতিহত করতে দক্ষিণ সীমান্তে সেনা মোতায়েন করব।’ এরপর তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সীমান্ত বন্ধ করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ দেন। সে নির্দেশে অবৈধ গণ-অভিবাসন, মাদক পাচার, মানব পাচার এবং অন্যান্য অনুপ্রবেশ ঠেকানোর ওপর জোর দেওয়া হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২১টির বেশি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থার বিভিন্ন দিক পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে অভিবাসীদের প্রসেসিং ও বহিষ্কারের নিয়মকানুন কঠোর করা অন্যতম। তবে ট্রাম্পের সবচেয়ে চরম আদেশ, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্দেশ—ইতিমধ্যে একজন ফেডারেল বিচারক স্থগিত করেছেন; কারণ, এটি স্পষ্টতই অসাংবিধানিক। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, যদি কেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ বা নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং এখানকার আইনের অধীন থাকেন, তাহলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও তার অঙ্গরাজ্যের নাগরিক। 

ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী যতই কঠোর ভাষা ব্যবহার করুন না কেন, বাস্তবে অবৈধ অভিবাসীদের আটক ও বহিষ্কারের সংখ্যা তার প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক কম। এর আগে বাইডেন প্রশাসন গড়ে প্রতি মাসে যে সংখ্যক অভিবাসী বহিষ্কার করেছে, তা ট্রাম্পের প্রশাসনের চেয়ে অনেক বেশি। ট্রাম্প খুব ব্যয়বহুল সামরিক বিমান ব্যবহার করে অভিবাসীদের তাঁদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন এবং ভয় দেখানোর কৌশল হিসেবে অভিবাসীদের গুয়ানতানামো বে বন্দিশিবিরে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে আমেরিকানদের জানা উচিত, অভিবাসীরা সাম্প্রতিক দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রধান কারণ। অভিবাসীরা দেশীয় শ্রমিকদের চাকরি কেড়ে নেননি, বরং মোট শ্রমশক্তি বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অভিবাসীদের অবদান, এমনকি অবৈধ অভিবাসীদেরও অবদান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যার ২৭ শতাংশই অভিবাসী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গড় ১৪ শতাংশের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুত বৃহৎ আকারের অভিবাসী বহিষ্কারের অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যাপক হতে পারে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, এটি যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক জিডিপির ৪ দশমিক ২ থেকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। এর আর্থিক ক্ষতি ১ দশমিক ১ থেকে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে। তুলনামূলকভাবে ২০০৭-০৯ সালের মন্দার সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। অর্থাৎ ট্রাম্পের পরিকল্পিত অভিবাসন নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সেই সময়ের মন্দার চেয়েও বড় ধাক্কা দিতে পারে। 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাপকভাবে অভিবাসী বহিষ্কারের ফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তার প্রায় অর্ধেকই বহন করবে ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও ফ্লোরিডা। টেক্সাস ও ফ্লোরিডা রিপাবলিকান-সমর্থিত রাজ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্পের এই নীতি যদি বাস্তবায়িত হয় এবং এর ফলে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়তে থাকে, তাহলে তারা কি ট্রাম্প ও তার নীতিকে সমর্থন করা চালিয়ে যাবে?

ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। এক পক্ষ সব ধরনের অভিবাসনের বিরোধী, অন্য পক্ষ কিছু অভিবাসন সমর্থন করে। যেমন ইলন মাস্ক এইচ-ওয়ানবি ভিসা কর্মসূচিকে সমর্থন করেন। এর মাধ্যমে ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো দক্ষ প্রকৌশলী ও পেশাদার কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে কাজের সুযোগ পান। তবে এই নীতি ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট মতাদর্শের সমর্থক স্টিভ ব্যাননের মতো কট্টর অভিবাসনবিরোধীদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে। যদিও অভিবাসন নীতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের দায়িত্ব, তবু কিছু অঙ্গরাজ্য ও শহর ট্রাম্পের বহিষ্কার নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। উদাহরণ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়া ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ভ্যালুজ অ্যাক্ট পাস করে, যা কিনা রাজ্যের সম্পদ ও স্থানীয় সংস্থাগুলোকে ফেডারেল অভিবাসন আইন বাস্তবায়নে সহায়তা করা থেকে বিরত রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন অনেক আগে থেকেই। কংগ্রেস সর্বশেষ ৩৮ বছর আগে বেশির ভাগ অনথিভুক্ত অভিবাসীদের জন্য স্থায়ী আইনি অবস্থার পথ তৈরি করেছিল। অথচ বর্তমানে অধিকাংশ অনথিভুক্ত অভিবাসী কমপক্ষে এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, পরিবার গড়েছেন এবং জীবন গড়ে তুলেছেন। তাঁরা উচ্চবিদ্যালয় থেকে স্নাতক হচ্ছেন, কলেজে ভর্তি হচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের অভিবাসনের অনিশ্চয়তার কারণে পুরোপুরি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছেন না।

অন্যদিকে কানাডার অভিবাসন নীতিকে অনেকে মডেল হিসেবে দেখতে চান। কানাডায় মোট জনসংখ্যার প্রায় এক–চতুর্থাংশই অভিবাসী এবং দেশটি চারটি মূল পথের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে নতুন স্থায়ী বাসিন্দাদের গ্রহণ করে। ২০২২ সালে ৫৮ শতাংশ অভিবাসী অর্থনৈতিক ভিত্তিতে, ২২ শতাংশ পারিবারিক পুনর্মিলনের মাধ্যমে, ১৭ শতাংশ শরণার্থী ও সুরক্ষিত ব্যক্তির মর্যাদায় এবং ২ শতাংশ মানবিক বা অন্যান্য কারণে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছে। কানাডার প্রাদেশিক মনোনয়ন কর্মসূচি ২০২২ সালে দেশটির অর্থনৈতিক অভিবাসনের প্রায় ৩৫ শতাংশ নিশ্চিত করেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট প্রদেশে আবেদন করেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রদেশ তাঁদের অর্থনৈতিক চাহিদার ভিত্তিতে অভিবাসীদের বাছাই করে। 

ট্রাম্পের ব্যাপক অভিবাসী বহিষ্কারের পরিকল্পনা নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভুল। রাজ্য ও শহরগুলো স্বল্প মেয়াদে এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, তবে এটি যথেষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এখনই একটি আধুনিক অভিবাসন নীতি দরকার, যা দেশের অর্থনৈতিক চাহিদার সঙ্গে মানানসই হবে এবং বাস্তব পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটাবে।

আমাদের এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যা একদিকে সীমান্ত সুরক্ষিত রাখবে, অন্যদিকে নির্দিষ্ট বার্ষিক লক্ষ্য অনুসারে অভিবাসীদের বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সুযোগ দেবে। একসময় এটি দ্বিদলীয় লক্ষ্য ছিল, এখন এটি আবার হওয়া উচিত। 

লরা টাইসন ক্লিনটন প্রশাসনের সময় প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক চেয়ার

লেনি মেনডোনসা ম্যাকিনজি অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার ইমেরিটাস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক উপদেষ্টা

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দশম ক ব যবস সমর থ

এছাড়াও পড়ুন:

ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে ৬৮% কারখানা 

দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৮৫টি কারখানার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ন্যূনতম মজুরি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ কারখানা। বাকি ৩২ শতাংশ বিভিন্ন কারণে সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এসব কারখানার মধ্যে ২২ শতাংশ আগের চেয়ে মজুরি বাড়িয়েছে। 

সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এ গবেষণা করে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে জরিপ করা হয়। স্টিচ একটি বহুদেশভিত্তিক কর্মসূচি, যা তৈরি পোশাক এবং বস্ত্র খাতের সরবরাহ চেইনে থাকা শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, মনডিয়া এফএনভি এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন। 

শ্রমিক সংখ্যা বিবেচনায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের হার বেশি। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ১ হাজার ১১৩ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি পান বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) থাকা সব কারখানা এবং ইপিজেডের বাইরে থাকা বড় কারখানাগুলো ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। যেসব কারখানা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য। 

জরিপের ফল নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শ্রমিক সংগঠন, উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। তারা পোশাকশিল্পের ব্যয়, শ্রমিকদের জীবনমান, তাদের ব্যয়ের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও গবেষণার সুপারিশ করেন। তারা ন্যূনতম মজুরির ওপর শিল্পের অংশীজন নিয়ে সংলাপেরও পরামর্শ দেন। 

জরিপে ঢাকার ১৩৫টি, গাজীপুরের ১২৮টি, নারায়ণগঞ্জের ৭১টি, চট্টগ্রামের ৪৬টি, ময়মনসিংহের ৪টি এবং কুমিল্লার ১টি কারখানাকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। শ্রমিকের বাইরে সরকার, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, উদ্যোক্তা, বাণিজ্য সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। 

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাতের ওপর সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ইপিজেডের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করে। ইপিজেডের বাইরের কারখানার জন্য নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, সব গ্রেডে আলাদা ন্যূনতম মজুরি রয়েছে। তৈরি পোশাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি, যার অর্ধেকের বেশি নারী। কারখানার সংখ্যা চার হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য। 

গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের পরিচালক (কর্মসূচি ও গবেষণা) মুনীর উদ্দীন শামীম সমকালকে বলেন, নমুনাভুক্ত যেসব কারখানা ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তার বেশির ভাগই মাঝারি বা ছোট কারখানা। অন্যদিকে ইপিজেডভুক্ত এবং বড় কারখানার বেশির ভাগ অতি অল্পসময়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে পেরেছে। বাস্তবায়নকারী কারখানার ৮০ শতাংশ বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএর সদস্য। এর মানে তারা সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। এ প্রবণতার একটি অর্থ হচ্ছে– কারখানাগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতা মজুরি বাস্তবায়নে একটি বড় ফ্যাক্টর। 

তিনি বলেন, গবেষণায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, মজুরি বাড়ার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পণ্যের দাম না বাড়ানো, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা না থাকা, সরকারি সহযোগিতার অভাব, কিছু ক্ষেত্রে মালিকদের অনিচ্ছা, নিয়মিত ও ধারাবাহিক কার্যাদেশ না থাকা ইত্যাদি। অনেকে বলেছেন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সেবা খাতে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। অংশীজনরা আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় এমন মত এসেছে যে, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে তদারকি সংস্থাগুলোর তেমন কার্যকর উদ্যোগও দেখা যায় না। এছাড়া কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে। কারখানা পর্যায়ে একটি কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা গেলে এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষের মধ্যে কার্যকর সামাজিক সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারলে পারস্পরিক জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন আরও সহজতর হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন। 

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, যারা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো– ক্রেতা ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। তিনি জানান, কোনো কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের নিয়োগের সময় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের অক্ষমতার কথা আগেই বলে নেন। তবে ন্যূনতম মজুরি সব কারখানার বাস্তবায়ন করা উচিত। এ কারণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ব্র্যান্ড–ক্রেতাদের সংগঠনগুলোকে পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য মধ্যস্ততা করতে হবে। 

জরিপে পাওয়া আরও কিছু তথ্য 

ন্যূনতম মজুরি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না করা কারখানার ৩৩ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের পরিচালন ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। যারা বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশ খরচ বাড়ার কথা জানিয়েছেন। জরিপের আওতায় থাকা ৮৩ শতাংশ কারখানা জানিয়েছে, নতুন মজুরি বাস্তবায়নে তারা সরকার কিংবা ক্রেতার সহযোগিতা পাননি। ইপিজেডের ১৮ শতাংশ এবং ইপিজেডের বাইরের ৩৩ শতাংশ কারখানা ক্রেতারা কিছুটা দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের মজুরি বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। কেননা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বেশি হারে। অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর বেতনের বৈষম্য রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ