কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করার অনুমতি পাবে কিনা, তা নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামতই যেন প্রাধান্য পায়, সেভাবে আইপিওর আইনি বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছে শেয়ারবাজার সংস্কারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্স। গতকাল সোমবার সংস্থাটির কাছে টাস্কফোর্স তাদের আইপিও-সংক্রান্ত সুপারিশমালা জমা দিয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কমিশন কার্যালয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে সুপারিশমালা হস্তান্তর করেন টাস্কফোর্সের সদস্য মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও মাজেদুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টাস্কফোর্সের সদস্য ড.

আল-আমিন ও নেছার উদ্দিন, বিএসইসির তিন কমিশনার এবং টাস্কফাের্স সম্পর্কিত ফােকাস গ্রুপের সদস্যরা।
জানা গেছে, আইপিও-সংক্রান্ত সুপারিশে কমিটি বলেছে, স্টক এক্সচেঞ্জ আইপিও-সংক্রান্ত আবেদন পর্যালোচনার জন্য বিশেষায়িত পৃথক প্যানেল থাকতে হবে। ওই প্যানেল আইপিও আবেদনকারী কোম্পানির খুঁটিনাটি পরীক্ষা করবে। প্রয়োজনে কোম্পানির কার্যালয়, কারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করবে। ওই প্যানেলের মতামতের ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির যোগ্য বলে মত দেয়, তাহলে কমিশন ওই আবেদন অনুমোদনের বিষয় বিবেচনা করবে, অন্যথায় নয়। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো কোম্পানির আইপিও বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেওয়ার পরও কমিশন তা গ্রহণ না করার এখতিয়ার রাখবে। আবার স্টক এক্সচেঞ্জ নেতিবাচক মতামত দেওয়ার পর চাইলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি রিভিউ আবেদন করতে পারবে।
এমন সুপারিশ কমিশনের ক্ষমতাকে খর্ব করবে কিনা– এমন প্রশ্নে টাস্কফোর্স-সংশ্লিষ্ট একজন সমকালকে বলেন, অনেক দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইপিও অনুমোদন দেয় না। এখন স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোনো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার যোগ্য মনে না করে, তাহলে ওই আইপিও হওয়া উচিত নয়। 

টাস্কফোর্সের এক সদস্য বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ এতদিন নিজের দায় বা সমালোচনা এড়াতে প্রায় সব কোম্পানির আইপিও নিয়ে নেতিবাচক মতামত দিত। বিএসইসি যদি এ সুপারিশ আমলে নেয়, তাহলে স্টক এক্সচেঞ্জের দায়িত্ব বাড়বে। আবার বিএসইসি স্টক এক্সচেঞ্জের মতামত উপেক্ষা করে আগের মতো খারাপ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিতে পারবে না।
কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদন করার পর অনুমোদন পাবে কি পাবে না– সে সিদ্ধান্তের জন্য সময় নির্দিষ্ট করে দিতে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব করেছে সুপারিশ কমিটি। এ জন্য আইপিও আবেদন করার পর তালিকাভুক্ত হওয়ার সর্বোচ্চ সময় সাড়ে ছয় মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভালো কোম্পানি আইপিওতে আসতে যাতে আগ্রহী হয়, তার জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে দরপ্রস্তাব প্রক্রিয়া ডাচ্-অকশন পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যেখানে দরপ্রস্তাবকারীদের থেকে সর্বোচ্চ দরপ্রস্তাবকারীরা নিজ নিজ দরে শেয়ার কিনতে বাধ্য থাকবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে দর নির্ধারণ আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের আইপিওর কোটার সর্বোচ্চ ১ শতাংশ শেয়ারের জন্য আবেদন করার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে যা ২ শতাংশ।

বর্তমানে আইপিও দর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওর ২৫ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা আছে। এটি ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে কমিটি। প্রবাসী বাংলাদেশি এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সম্মিলিত কোটা ৫০ শতাংশ হবে। আইপিও শেয়ার পেতে আবেদন করতে সেকেন্ডারি বাজারে আগাম ন্যূনতম বিনিয়োগ থাকার যে শর্ত রয়েছে তা তুলে নিতেও সুপারিশ করেছে কমিটি।
তালিকাভুক্তির পর বর্তমানে সার্কিট ব্রেকার প্রথা রয়েছে। এতে দু-চারটি শেয়ার কেনাবেচা করে প্রতিদিন ১০ শতাংশ করে দর বাড়ানোর সুযোগ পায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। এ ধারা বন্ধে তালিকাভুক্তির প্রথম তিন দিন সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারদরে সার্কিট ব্রেকার ফ্রি রাখার প্রস্তাব করেছে কমিটি। কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদনে সত্য ও বাস্তব তথ্য দিচ্ছে কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য বিএসইসির নির্ধারিত অডিটর প্যানেল দ্বারা আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র র আইপ ও ব এসইস কর র প র জন য মত মত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিতে এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বেধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে অনেক কোম্পানি ব্যর্থ হওয়ায় এবং ওইসব কোম্পানির আবেদনের আলোকে সময়সীমা বাড়িয়েছে বিএসইসি।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে এক বছর সময় দিয়ে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কমপক্ষে এক জন করে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক কোম্পানি এ শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব কোম্পানি থেকে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যার আলোকে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসইসির কমিশনার হিসেবে সাইফুদ্দিনের যোগদান
  • নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
  • নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি
  • সালমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে ‘আজীবন অবাঞ্ছিত’
  • সালমানকে ১০০ কোটি, সায়ানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা
  • বিএসইসির নতুন কমিশনার সাইফুদ্দিন
  • পুঁজিবাজারে বড়-মাঝারি বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিএসইসি
  • ‘পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কাজ করছি’