Prothomalo:
2025-11-03@07:52:27 GMT

আজান হলে জুমার নামাজে

Published: 25th, March 2025 GMT

আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের সুরা মুজাদালা, সুরা হাশর, সুরা মুমতাহিনা, সুরা সাফ, সুরা জুমা, সুরা মুনাফিকুন, সুরা তাগাবুন, সুরা তালাক ও সুরা তাহরিম তিলাওয়াত করা হবে। ২৮তম পারা পড়া হবে। আজকের তারাবিতে তালাক, পারিবারিক ও বৈবাহিক জীবন, স্ত্রীর ভরণপোষণ, বৈঠকের আদব, আনসারদের সুসংবাদ, কাফেরদের সঙ্গে মুসলমানদের আচরণনীতি, নবীজির গুণাবলি, আজান হলেই জুমার নামাজে যাওয়া, মানুষের বিভক্তি ও আল্লাহর পথে ব্যয়, দুনিয়ায় নারীর জান্নাতের সুসংবাদ, আল্লাহ এবং শয়তানের দল, কানাঘুষা, আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী, ইহুদি সম্প্রদায়, রিসালাতের উদ্দেশ্য, কাফেরদের পরিণতি, ইবাদতের জন্য মুমিনের আফসোস, কৃপণতা ইত্যাদি বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে।

 যে নারীর কথা আল্লাহ শুনলেন

২২ আয়াতবিশিষ্ট সুরা মুজাদালাহ মদিনায় অবতীর্ণ। মুজাদালাহ অর্থ ঝগড়া। রাসুলুল্লাহ (সা.

)-এর কাছে খাওলা (রা.) তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে এমন স্বরে অভিযোগ করেছিলেন, যেন তিনি ঝগড়া করছেন। তাই এর নাম রাখা হয়েছে সুরা মুজাদালাহ।

খাওলা (রা.)-এর স্বামী ছিলেন আওস ইবনে সামেত। আওস খাওলাকে বললেন, ‘তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মতো,’ অর্থাৎ, ‘তোমাকে আমার জন্য আমার মায়ের মতো হারাম করলাম।’ ইসলাম–পূর্ব যুগে এই বাক্য ছিল তালাকের চেয়েও কঠোর।

আরও পড়ুনইউসুফ (আ.) কি জুলেখাকে বিয়ে করেছিলেন২০ মার্চ ২০২৪

খাওলা চিন্তায় পড়ে ছুটে গেলেন নবীজি (সা.)-র কাছে। কিন্তু কোনো সমাধান পেলেন না। নবীজি (সা.)-কে তখনো এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তিনি নবীজি (সা.)-র সঙ্গে কথা বাড়াতে লাগলেন, যেন ঝগড়া করছেন।

পরে খাওলা কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন। আল্লাহ তাঁর কথা শুনে এর সমাধান দিয়ে সুরা মুজাদালার ১ থেকে ৫ নম্বর আয়াত নাজিল করলেন। বিধান দেওয়া হলো, স্ত্রী চিরতরে হারাম হয় না। তবে কাফফারা আদায় করতে হবে। কাফফারা হলো ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা বা ৬০ জন অসহায় ব্যক্তিকে খাওয়ানো।

 সুরা হাশরে ইহুদিদের কথা

২৪ আয়াতবিশিষ্ট সুরা হাশর মদিনায় অবতীর্ণ। হাশর অর্থ দেশান্তর। এ সুরায় তৎকালীন মদিনার ইহুদিদের দেশান্তর করার আলোচনা রয়েছে, তাই এর নাম হাশর রাখা হয়েছে।

ইবনে ইসহাক বলেন, ‘সুরা হাশর ইহুদি বনু নজির গোত্র সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।’ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা: ১৩৪৯) হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) এ সুরার নামই ‘সুরা বনু নজির’ বলতেন। (ইবনে কাসির) আল্লাহর প্রশংসা, অপরাধের কারণে বনু নজিরকে মদিনা থেকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গ, বিনা যুদ্ধে অর্জিত সম্পদের বণ্টননীতি, আনসারদের সুসংবাদ, মুনাফিকদের নিন্দা, তাকওয়া অর্জন ও আল্লাহর পরিচয়সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে এ সুরায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে সকালে তিনবার ‘আউজুবিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ পড়ে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করে, আল্লাহ তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করেন; যারা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। এ সময় সে মারা গেলে শহীদের মৃত্যু লাভ করবে। যে এটি সন্ধ্যায় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩০৯০)

আরও পড়ুননুহ নবীর (আ.) নৌকা১৯ মার্চ ২০২৪

বন্ধু গ্রহণের নীতিমালা

সুরা মুমতাহিনা মক্কায় অবতীর্ণ। এর আয়াতের সংখ্যা ১৩।

হাতিব ইবনে বালতায়া ছিলেন সাহাবি। তিনি বদর যুদ্ধে মুসলমানদের পক্ষে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি তখন মদিনায়। তিনি মক্কার কুরাইশদের দ্বারা অনুগ্রহ পাচ্ছিলেন তখনো। এদিকে রাসুল (সা.) মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হাতিব অনুগ্রহের বিনিময়ে অনুগ্রহ করতে মক্কা অভিযানের কথা কুরাইশদের জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এটা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর পছন্দ হয়নি। আল্লাহ সুরা মুমতাহিনার প্রথম আয়াত নাজিল করে বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না…।’ হাতিব খুব লজ্জিত হলেন। তওবা করলেন। আল্লাহ কবুল করলেন তওবা।

অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদের আচরণনীতি, কিয়ামতের দিন কেউ কারও উপকারে না আসা, ইবরাহিম (আ.)-এর আদর্শ, বিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার, বিশ্বাসী নারী অবিশ্বাসীর জন্য হারাম এবং বিশ্বাসী পুরুষের জন্য অবিশ্বাসী নারী হারাম হওয়ার বিবরণ আছে এ সুরায়।

আরও পড়ুনধ্বংস থেকে এক জাতির মুক্তির কাহিনি১৮ মার্চ ২০২৪

সুরা সফের বিষয়বস্তু

মদিনায় অবতীর্ণ সুরা সফের আয়াতের সংখ্যা ১৪। এ সুরায় আল্লাহর বড়ত্ব ও মহিমা, কথা ও কাজে মিল রাখার প্রতি নির্দেশ, যুদ্ধ ও হত্যা, আল্লাহর জন্য জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ, ইসলামের সাহায্যকারী হওয়ার আদেশ এবং ঈসা (আ.)-এর সঙ্গীদের আলোচনা রয়েছে।

আজান হলে জুমার নামাজে

সুরা জুমা মদিনায় অবতীর্ণ। এতে আয়াত আছে ১১টি। এ সুরার ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মানুষকে জুমার নামাজের আজান হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু ছেড়ে মসজিদে যাওয়ার আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন মসজিদে যাওয়াতে আছে কল্যাণ। অন্য কিছুতে কল্যাণ নেই।

যারা মনে করে, অন্য কাজ করাতে উপকার আছে; আল্লাহর ভাষা তারা বোঝে না। আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে জামাতে পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। তবে আজান হলে মসজিদে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন শুধু জুমার নামাজের ক্ষেত্রে। ইসলামে সপ্তাহের সেরা দিন শুক্রবার। এটি মুসলমানদের সমাবেশের দিন। আমলের দিন। দোয়া কবুলের সময়।

আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪

সুরা মুনাফিকুন, তাগাবুন ও তালাকের বিষয়

উল্লিখিত তিন সুরায় কপটদের কিছু চিহ্ন, মানুষকে সম্মানিত বা অসম্মানিত করা আল্লাহর কাছে, আখিরাতের বিষয়ে বিশ্বাসীদের সতর্কবার্তা, আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর পথে খরচ করা, কৃতজ্ঞ ও অকৃতজ্ঞ মানুষের বয়ান, আগের জাতির পরিণাম, কিয়ামত, আল্লাহর ভয়, কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ, বৈবাহিক ও পারিবারিক জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধান, স্ত্রীর ভরণপোষণ, তাকওয়া, আল্লাহর কুদরত ও মাহাত্ম্য ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে।

আল্লাহর প্রতিবেশী হতে চাওয়া নারীর গল্প

প্রাচীন মিসরের ফেরাউনের স্ত্রী ছিলেন আসিয়া বিনতে মুজাহিম। আসিয়া আল্লাহ–বিশ্বাসী ছিলেন। মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। তাঁর স্বামী ফেরাউন ছিল খোদা দাবিদার। সে বাদশাহ হিসেবে ছিল অত্যাচারী ও বদমেজাজি।

ফেরাউন একবার জানতে পারলেন, তাঁর স্ত্রী অন্যের উপাসনা করে। স্ত্রী খুব করে বোঝালেন। কাজ হলো না। ফেরাউন চটে গিয়ে তাঁকে হত্যার আদেশ দিলেন। ফেরাউনের সৈন্যসামন্ত তাঁর হাত-পা বেঁধে উত্তপ্ত সূর্যের নিচে ফেলে রাখল। ক্ষতবিক্ষত হলো তাঁর শরীর। কিন্তু তিনি ইমান ছাড়লেন না। দুনিয়ার রাজপ্রাসাদের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে চাইলেন, জান্নাতে তাঁর পাশে একটি ঘর।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার জন্য আপনার কাছে জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করুন। আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন…।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত: ১১)

 রায়হান রাশেদ: লেখক ও আলেম

আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র আয় ত র জন য আল ল হ ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ